নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

আগুনে পুড়ে শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু

দগ্ধ বাবা-মাও শঙ্কায়

ঢাকার নিউ ইস্কাটনের দিলু রোডে একটি পাঁচতলা ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে শিশুসহ তিনজন মারা গেছেন। এরা হলেন আবদুল কাদের, আফরিন জান্নাত ও এ কে এম রুশদী। এদিকে নিহত শিশু রুশদীর বাবা শহিদুল কিরমানী ও মা জান্নাতুল ফেরদৌসের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। আগুনে শহিদুলের ৪৩ শতাংশ ও জান্নাতুলের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তারা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে ভবনটিতে আগুন লাগে। চিকিৎসক ও পুলিশ বলছে, আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে আবদুল কাদের ছাড়া বাকি দুজনের শরীর একেবারে পুড়ে গেছে। তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া আবদুল কাদেরের বাবার নাম মোহাম্মদ উল্লাহ। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম নন্দনপুর গ্রামে তাদের বাড়ি। তিনি ওই ভবনের নিচতলায় অবস্থিত ‘ক্ল্যাসিক ফ্যাশন’ বায়িং হাউসের অফিস সহকারী ছিলেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। স্ত্রী মরিয়ম বেগম। তারা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। কাদের তার কর্মস্থলেই থাকতেন। মর্গে তার স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন।

আর মৃত আফরিন জান্নাত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম পূর্ত ভবনের প্রশাসনিক সেকশনে চাকরি করেন। তার মা লালবানু গৃহিণী। তারা ওই ভবনের ছাদের একটি রুমে থাকেন।

আফরিনের চাচা মো. সুরুজ্জামান বলেন, আগুন লাগার খবরে আতঙ্কিত হয়ে আফরিন সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে নামে। আর ওপর থেকে বাবা ও ভাই গ্রিল বেয়ে নামেন। তারা দুজনেই সামান্য আহত হন। আফরিনের মা নামতে গিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। তার পা ও কোমরের হাড় ভেঙে যায়। তিনি পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি।

এ দিকে আগুনে সৃষ্ট ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ভবনের বাসিন্দা সুমাইয়া আক্তার, মাহাদি, মাহমুদুল হাসান ও মনির হোসেন। তারা ওই ভবনের পঞ্চমতলার বাসিন্দা এবং একই পরিবারের সদস্য। তাদের ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা এহসার উদ্দিন বলেন, ভোর ৪টার দিকে ৪৫/এ নম্বর দিলু রোডের বাড়িতে আগুন লাগার খবর পান তারা। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট কাজ শুরু করে। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ভবনের গ্যারেজ থেকে আগুন ছড়িয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।

হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খন্দকার সেলিম শাহরিয়ার বলেন, মৃত তিনজনের মধ্যে শিশুসহ দুজন পুরোপুরি পুরে গেছে, যা দেখে শনাক্ত করার মতো না। তাই পোড়া দুজনেরই ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য, নমুনা সংগ্রহের জন্য ফরেনসিক বিভাগকে বলা হয়েছে। আর আবদুল কাদের পোড়েননি। সম্ভবত তিনি ধোঁয়ার কারণে মারা গেছেন। লাশ পরিবারের হস্তান্তর করা হয়েছে।

ভবনটির নিরাপত্তা প্রহরী এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লুৎফুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের মিটারে প্রথম আগুন দেখতে পাই। তারপর গ্যারেজে রাখা একটি খাটে আগুন ধরে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট শব্দ করে গাড়িগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। গ্যারেজে থাকা পাঁচটি প্রাইভেট কার ও তিনটি মোটরসাইকেল একেবারে পুড়ে গেছে।

তিনি বলেন, সিফাতকে সঙ্গে নিয়ে গ্যারেজের একটি রুমে আমি থাকি। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমরা টের পেয়েছি। গেট খুলে অনেককে ডাকাডাকি করেছি। পরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসতে আসতে আগুন দুই থেকে তিনতলায় ছড়িয়ে পড়ে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close