নিজস্ব প্রতিবেদক
রুশ তরুণীদের খুঁজতে গিয়ে ধরা পাপিয়া!
অস্ত্র আনতেন সীমান্ত দিয়ে, কুরিয়ারে ইয়াবা
সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র এনে বাংলাদেশে অস্ত্র ব্যবসা করতেন বহিষ্কৃত যুবলীগ নেত্রী পাপিয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, পাপিয়ার অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আর দুদক বলছে, দুর্নীতি করলে কাউকেই ছাড় দেবে না দুদক। পাপিয়ার বিরুদ্ধে তিনটি মামলাই ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মাদক এবং নারী ব্যবসার পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্রেরও ব্যবসা ছিল পাপিয়ার। সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র এনে নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতেন সারা দেশে। এ কাজে তার অন্যতম সহযোগী ছিল রাকিব ও সুমন। এরমধ্যে সুমন কক্সবাজার থেকে পাপিয়ার জন্য কুরিয়ার ও রেলপথের মাধ্যমে ইয়াবার চালান নিয়ে আসতেন ঢাকায়। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে রিমান্ডে এসব তথ্য দিয়েছেন পাপিয়া। তার অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, ‘তার অর্থের উৎস কী, এর পেছনের ইন্ধনদাতা এবং কোনো অনৈতিক কিছু থাকলেও সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। তদন্তে হোটেল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির প্রমাণ পেলে আইনের আওতায় আনা হবে তাদেরও।’ আবদুল বাতেন বলেন, ‘এর পেছনে কোনো হোটেল কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি রয়েছে কি না, সেটা দেখার পাশাপাশি যাতে কোনো অসামাজিক কার্যকলাপ না হয়, সেটা নিশ্চিতে আমরা তৎপরতা বৃদ্ধি করব।’
দুর্নীতি করলে কাউকেই ছাড় দেবে না দুদক উল্লেখ করে সংস্থার চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ জানান, যাদেরই নাম এসেছে তাদের তলব করা হবে।
তিনি বলেন, যে যত বড়ই হোক না কেন, যার নামই আসবে তাকেই তলব করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। ব্যক্তি বা দল নয়, দুদক অপরাধ বিবেচনায় কাজ করে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, তথ্য গোয়েন্দা সূত্র বলছে, অভিজাত ব্যক্তিদের চাহিদা মেটাতে শামীমা নূর পাপিয়া তার ডেরায় রুশ মডেল-তরুণীদের নিয়ে আসতেন। মাসখানেক আগে ১২ রুশ মডেল তরুণীর দেশে প্রবেশের খোঁজখবর করতে গিয়েই পাপিয়ার জগতের সন্ধান মেলে। সূত্র জানায়, মাসখানেক আগে ১২ রুশ তরুণী ঢাকায় আসেন। তবে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলে ইমিগ্রেশনে আটকা পড়েন তারা। শেষ পর্যন্ত পাপিয়া উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সুপারিশে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। তবে কেন, কী কারণে, কোন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তারা ঢাকায় আসেনÑ এমন কোনো তথ্য ওই মডেলদের কাছে না থাকায় বিষয়টি গোয়েন্দাদের মাধ্যমে খবর পৌঁছায় সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে। এরপরই তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু হয়। ওই সূত্র ধরেই বেরিয়ে আসে পাপিয়ার পাপের জগতের সন্ধান।
এসব কারণে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অনুমতি পেলে পাপিয়া ও সুমন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে র্যাব। এমনকি তাদের সঙ্গে সহযোগী সাব্বির ও শেখ তায়্যিবাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এখন তারা ১৫ দিনের রিমান্ডে বিমানবন্দর থানা পুলিশের কাছে রয়েছে।
র্যাব-১-এর সিও (কমান্ডিং অফিসার) শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, পাপিয়া-সুমন দম্পত্তিসহ চারজন ১৫ দিনের রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। র্যাবের পক্ষ থেকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে গত সোমবার। আবেদনটি অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমতি পেলে তাদের র্যাব-১-এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
অভিযান চালিয়ে পাপিয়া দম্পত্তিকে আটক করেছে র্যাব। সাধারণ মামলাগুলোর ক্ষেত্রে আটকদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে। পুলিশ তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট জমাসহ যাবতীয় কাজ করে থাকে। কিন্তু বিশেষ কিছু মামলায় র্যাব মূল রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। পাপিয়ার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যেহেতু র্যাব অভিযানের পর প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে পাপিয়া ও সুমন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় পায়নি এবং মনে হয়েছে যে, পাপিয়া ক্যাসিনো থেকে শুরু করে আরো অনেক অপরাধে যুক্ত থাকতে পারে, সেজন্য ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।
এর আগে ক্যাসিনোকান্ডে সম্পৃক্ত খালেদ ভূঁইয়া, ইসমাইল হোসেন সম্রাট, জি কে শামীম, সেলিমপ্রধান, লোকমান হোসেন, শফিকুল ইসলাম, রাজীব কমিশনারসহ ক্যাসিনো হোতাদের র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
র্যাব জানিয়েছে, পাপিয়ার অপরাধ জগৎ অনেক বড়। এত বড় অপরাধ জগৎ নিয়ে পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ ছিল না। তার আগেই তাদের আদালতে পাঠানো হয়। আদালত রিমান্ডে পাঠান। তারা এখন পুলিশের কাছে রয়েছে। র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করবে, তাই পুলিশও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে না। পাপিয়া অনেক চালাক হওয়ায় তিনিও সহজে কোনো কিছু বলেননি র্যাবকে। ক্যাসিনো, হুন্ডি, মদ, দেহ ব্যবসা, চাঁদাবাজি, প্রতারণাসহ নানা অপকর্মে জড়িত পাপিয়া দম্পত্তি। র্যাব তাকে জিজ্ঞাসাবাদ না করলে অনেক কিছু আড়ালেই থেকে যেতে পারে। এ ছাড়া রিমান্ডের আগে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব পাপিয়ার বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টিও জানতে পারে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও নেপালে অর্থ পাচারের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে র্যাব। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার বলে মনে করছে র্যাব।
"