নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

‘নিখোঁজের’ ১৮ মাস পর ফিরলেন র‌্যাব অধিনায়ক

‘নিখোঁজ’ হওয়ার ১৮ মাস পর বাড়ি ফিরেছেন সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান ডিউক। মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়ার আগে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। তিনি র‌্যাব-৫ এবং র‌্যাব-৭-এর সাবেক অধিনায়ক ছিলেন। গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে তিনি তার মিরপুরের বাসায় ফেরেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

হাসিনুরের স্ত্রী শামীমা আখতার বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতে বাসায় ফিরে আসেন তার স্বামী। ‘তার চেহারা ছিল বিধ্বস্ত। নিচ থেকে দারোয়ান এসে খবর দেওয়ার পর আমরা তাকে বাসায় নিয়ে আসি। যে পোশাক পরে তিনি ১৮ মাস আগে বের হয়েছিলেন, গায়ে সেই পোশাকই ছিল।’ হাসিনুর এত দিন কোথায় কীভাবে ছিলেন, কীভাবে আবার বাড়ি ফিরে এলেন, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি শামীমা। ‘তিনি বেশ অসুস্থ। এখন কিছু বলছেন না। আমরা আগামীকাল (রোববার) তাকে ডাক্তার দেখাব।’ পল্লবী থানার এসআই মনিরুল ইসলাম বলেন, শনিবার সকাল থেকে দুই দফা হাসিনুরের স্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তিনি আমাদের বলেছেন, রাত ১২টার দিকে হাসিনুর বাসায় আসেন। তবে তার সঙ্গে কথা বলার বা দেখা করার অনুমতি পাওয়া যায়নি।

২০১৮ সালের ৮ আগস্ট রাতে একদল লোক হাসিনুরকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ তার পরিবারের। জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ থাকার অভিযোগে ২০১১ সালে সাবেক এই লেফটেন্যান্ট কর্নেলকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা হাসিনুরের পরিবারের সদস্যরা জানান, হাসিনুরকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার।

হাসিনুর রহমানের স্ত্রী শামীমা আখতার তার স্বামী নিখোঁজের সময় জানিয়েছিলেন, মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার ১০ নম্বর সড়কের বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকেন হাসিনুর। ৮ আগস্ট রাত ১০টার দিকে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ১১ নম্বর সড়কে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে কিছু লোক তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। তখন তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়। একপর্যায়ে তাকে তুলে নিতে আসা লোকজন ‘ডিবি’ লেখা জ্যাকেট পরে এবং নিজেদের ডিবি সদস্য বলে পরিচয় দেয়। তিনি জানিয়েছিলেন, হাসিনুরকে যখন তুলে নেওয়া হয় তখন ওই সময়ের ছবি তোলার জন্য সেখানে থাকা এক নিরাপত্তাকর্মীকে অনুরোধ করেন তিনি। ওই নিরাপত্তাকর্মী ছবি তোলার চেষ্টা করায় তাকেও মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়। কিছুদূর যাওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একসময় র‌্যাব-৫ ও র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক ছিলেন হাসিনুর রহমান। তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশেও (বিজিবি) কর্মরত ছিলেন। ২০০৯ সালের অক্টোবরে হিযবুত তাহ্?রীর নিষিদ্ধ ঘোষণার পর সংগঠনটির উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষক গোলাম মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় তার জবানবন্দিতে হাসিনুর রহমানের জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে। তখন তিনি র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক ছিলেন। হিযবুত তাহ্?রীরের কয়েক সদস্যকে গ্রেফতারের পর র‌্যাবও হাসিনুরের সঙ্গে সংগঠনটির সংশ্লিষ্টতা পায়। তাকে র‌্যাব থেকে অব্যাহতি দিয়ে মূল বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর তিনি চাকরি হারান।

২০১৮ সালের ৮ আগস্ট রাত সোয়া ১০টার দিকে দুটি মাইক্রোবাসে আনুমানিক ১৪-১৫ জন লোক এসে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে হাসিনুরকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করে আসছিল তার পরিবার। এ নিয়ে ওই বছর ডিসেম্বরে পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়েছিল।

হাসিনুর রহমান ডিউক ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক ছিলেন তিনি। সে সময় তার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নিশ্চিত করেছিল র‌্যাব। পরে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় চাকুরিচ্যুত হয়ে কয়েক বছরের সাজাও খাটেন হাসিনুর। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের সময় হাসিনুরের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার নজরে ছিল।

২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে হাসিনুরের স্ত্রী শামীমা আখতার স্বামীর খোঁজে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তিনি সেদিন দাবি করেন, তার স্বামী ‘কোনো কিছুর সঙ্গে’ জড়িত নন, তাকে ‘ভুল বোঝা হচ্ছে’। ‘২৮ বছর নিষ্ঠার সঙ্গে আমার স্বামী সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন। দেশের প্রতি অবদানের জন্য তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস পদক, বীরপ্রতীক ও বিপিএম খেতাব পেয়েছেন। কারাভোগের পর তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close