প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

করোনায় মৃত্যু ২ হাজার ছাড়াল

* সিঙ্গাপুরে এক বাংলাদেশি ‘সংকটাপন্ন’ * গুজবে কান নয় : আইইডিসিআর

সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক বাংলাদেশির অবস্থা ‘সংকটাপন্ন’ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান সকালে আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি জানালেন, সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে একজনের অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল।’

৩৯ বছর বয়সি ওই ব্যক্তি অনেক দিন ধরেই শ্বাসকষ্ট এবং কিডনি জটিলতাসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সিঙ্গাপুরে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে এ পর্যন্ত পাঁচজনের নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও তাদের কারো নাম প্রকাশ করেনি দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার নতুন করে ১৩৬ জনের মৃত্যু হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪। এছাড়া নতুন করে ১ হাজার ৭৪৯ জনের শরীরে এ ভাইরাস ধরা পড়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ১৮৫। গতকাল দেশটির স্বাস্থ্য কমিশন এ তথ্য জানিয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। অন্যদিকে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমেও নজরদারি করা হচ্ছে যেন কোনো জায়গা থেকে করোনা নিয়ে গুজব না ছড়াতে পারে এবং বিভ্রান্তিতে পড়ে ভুল পদক্ষেপ যেন না নেওয়া হয়। গতকাল কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান।

সিঙ্গাপুরে ওই বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিক ১৩ দিন ধরে আইসিইউতে আছেন বলে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওষুধ আর কাজ না করায় চিকিৎসকরা শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন। তিনি (সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেন, ‘টপ মেডিকেল সার্ভিস (রোগীকে) দেওয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। তবে গতকাল থেকে ওষুধ রেসপন্স করছে না। এজন্য আপনাকে জানাতে চাচ্ছি। তবে আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি, যতটুকু করার আমরা করব।’

সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি বললাম যদি উনার মৃত্যু হয় তাহলে পরিবার তো লাশ চাইবে। তিনি জানালেন, সেই ব্যবস্থাও তার সরকার করবে।

এক প্রশ্নের জবাবে এ কে আবদুল মোমেন বলেন, সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত রোগীদের নাম সরকার জানে। তবে রোগীর ‘প্রাইভেসির’ স্বার্থে সিঙ্গাপুরে কর্তৃপক্ষ নাম প্রকাশ করতে চায় না। এর আগে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) কার্যকর সংস্কার নিয়ে দুই দিনের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

এদিকে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে গত মঙ্গলবার মারা যাওয়া ১৩৬ জনের মধ্যে ১৩২ জনই করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। আর নতুন করে শনাক্ত হওয়া ১ হাজার ৭৪৯ জনের মধ্যে ১ হাজার ৬৯৩ জনই হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা।

সেই প্রমোদতরীর ৫০০ যাত্রীই ‘সুস্থ’

করোনাভাইরাস আতঙ্কের মাঝে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকা সেই প্রমোদতরীর প্রায় ৫০০ আরোহী জাহাজ থেকে তীরে নামা শুরু করেছেন। ডায়মন্ড প্রিন্সেসে এত দিন আটকে থাকা ৫০০ যাত্রীই সুস্থ, তাদের কারো মধ্যে করোনাভাইরাস ধরা পড়েনি। প্রমোদতরীটিতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে এর যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল।

গতকাল প্রমোদতরীটির পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ও জাপানি কর্মকর্তারা ‘অল ক্লিয়ার’ ছাড়পত্র পাওয়া যাত্রীদের জাহাজ ছেড়ে নেমে আসার অনুমতি দেন। যাত্রীদের মধ্যে করোনাভাইরাসের কোনো আলামত না পাওয়ায় বুধবার থেকে তাদের নামার অনুমতি দেওয়া হয়। আজ তারা জাহাজ থেকে নামতে শুরু করেছেন। এত দিন পর গন্তব্যে যাওয়ার অনুমতি মেলায় যাত্রীরা খুশি।

ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ডায়মন্ড প্রিন্সেস থেকে হংকংয়ে নেমে যাওয়া ৮০ বছর বয়সি এক যাত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রমোদতরীটিকে ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এর পর থেকে প্রমোদতরীর প্রায় ৩ হাজার ৭০০ যাত্রীর মধ্যে অন্তত ৫৪২ জন ভাইরাসটির সংক্রমণের শিকার হন। সংখ্যার দিক থেকে চীনের মূলভূখন্ডের বাইরে এই জাহাজটিতেই সবচেয়ে বেশি লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।

করোনা নিয়ে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান আইইডিসিআরের

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গতকাল বলেন, করোনা নিয়ে গুজব ছড়ানো এবং বিভ্রান্তিতে পড়ে ভুল পদক্ষেপ যেন না নেওয়া হয়। ডা. মীরজাদী বলেন, আমরা আপনাদের সর্বশেষ তথ্য দেব, একই সঙ্গে করণীয় কী হবে সে সম্পর্কেও পরামর্শ দিতে পারি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্বে নিশ্চিত রোগীর সংখ্যা ৭৩ হাজার ৩৩২ জন, যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নিশ্চিত হয়েছেন ১ হাজার ৯০১ জন। এই ৭৩ হাজার ৩৩২ জনের মধ্যে কেবল চীনেই আক্রান্ত ৭২ হাজার ৫২৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় এ তালিকাতে যোগ হয়েছেন ১ হাজার ৮৯১ জন।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯-এ মারা গেছেন ১ হাজার ৮৭৯ জন আর গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ জন মারা গেছেন। চীনের বাইরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮০৪, এর সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় যোগ হয়েছেন ১০ জন। আর নতুন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাতে কোনো দেশ যোগ হয়নি। চীনের বাইরে মৃত্যুর সংখ্যা ৩।

মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় আমাদের দেশেও আতঙ্ক রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় চীনের ভেতরে ৯৮টি মৃত্যুর মধ্যে ৯৩টিই হুবেইয়ে। এই হুবেই ছাড়া বিশ্বে এমনকি চীনেও কিন্তু আতঙ্ক খুব বেশি নয়। সুতরাং যারা চীনের বাইরে আছে তাদের অতটা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে তারপরও যেহেতু ঝুঁকি রয়েছে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় দুজনসহ ৭৪টি নমুনা পরীক্ষায় কারো শরীরেই কোভিড-১৯-এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। সে অনুযায়ী এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে কোভিড-১৯ পাওয়া যায়নি। হটলাইনে আসা ৮৪টি কলের মধ্যে ৫৬টি কল কোভিড-১৯ নিয়ে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close