সংসদ প্রতিবেদক

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

সংসদে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধুর দর্শন নতুনদের জানাতেই মুজিববর্ষ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজন কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া হচ্ছে না। এর নেপথ্যে একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। আর তা হচ্ছে স্বাধীনতার মহান এই নেতার রেখে যাওয়া দর্শন, আদর্শ ও চিন্তা বর্তমান এবং নতুন প্রজন্মকে জানানো। কারণ বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না, পেতাম না একটি মানচিত্র। আর পিতার রেখে যাওয়া অসম্পূর্ণ কাজ সুচারুভাবে শেষ করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; ওই কাজের মধ্যে মুজিববর্ষের চিন্তা একটি।

গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপরে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন মন্ত্রী। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকালে এ অধিবেশন শুরু হয়। আজ অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, শোষিত, বঞ্চিত ও লাঞ্ছিত মানুষের ভালো রাখার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছিলেন টুঙ্গিপাড়ার খোকা অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু। তার স্বপ্ন ছিল গর্বিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরা। কিন্তু তা তিনি করে যেতে পারেননি। কারণ ১৯৭৫ সালে কিছু বিপথগামী ঘাতক নির্মমভাবে তাকেসহ তার পরিবারকে হত্যার মধ্যদিয়ে তার স্বপ্নকে থামিয়ে দিয়েছিল। তাকে (বঙ্গবন্ধু) হত্যা করার মাধ্যমে সমগ্র বাঙালি জাতিকে সেদিন হত্যা করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার দিনে কাততালীয়ভাবে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। কারণ তারা তখন বিদেশে ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর দেশে আসতে বাধা দিয়েছিল সেনানিবাস থেকে রাজনৈতিক মসনদে বসা জিয়াউর রহমান। কিন্তু আমাদের প্রিয়নেত্রী সব বাধা উপেক্ষা করে দেশে আসেন ১৯৮১ সালে। সেদিন বিমানবন্দরে লাখো জনতার ঢল নেমেছিল। তার পদচারণায় সারা দেশে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছিল। দেশে এসেই পিতার রেখে যাওয়া সংগঠন আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। বাঙালি জাতির আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে পথনকশা তৈরি করেন। দলের দুঃসময়ে অর্থাৎ পিতার হত্যার পর থেকে ১/১১ সরকারের সময়ে যারা নেত্রীর প্রতি আস্থা রেখে নিজের জীবনবাজি রেখে লোভ-লালসা ত্যাগ করে নেত্রীর পাশে অবিচল ছিলেন তাদের প্রতি জানাই অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

মন্ত্রী বলেন, মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা শহর থেকে গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়ান। মানুষের সমস্যা নিয়ে কাজ করেন। মানুষের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে খাদ্য নিশ্চিত করেন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় না এলেও ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে আগের রেখে যাওয়া কাজ শেষ করতে নেমে পড়েন। সড়ক, বিদ্যুৎসহ সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্যের কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এই সাফল্য ও অর্জন এসেছে নেত্রীর কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের কারণে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর কুমিল্লা-৯ আসনে স্বাধীনতার স্বপক্ষের কেউ বিজয়ী হতে পারেনি। প্রথমবার মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে আমি বিজয়ী হই। এরপর বারবার প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়ে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী আমার মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে কয়েকটি নিদের্শনা দেন। সেই বাস্তবসম্মত ও যুগোপযোগী নিদের্শনা অনুযায়ী আমার মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ফলে মানুষের চাহিদা বেড়েছে। মানুষের ব্যবহৃত বর্জ্যে নদী-নালা আজ দূষিত। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী সিটি করপোরেশন এলাকার বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। ছোটো পৌরসভার জমা বর্জ্য পুড়িয়ে পরিবেশকে রক্ষা করা হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের উন্নয়নের কাজে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। উপজেলায় মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ শুরু করা হচ্ছে।

এলজিআরডিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, দেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীণ রাস্তা আধুনিক করতে নতুন নকশা প্রণয়ন করা হচ্ছে। গ্রামে শহরের সব সুবিধা পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। রাজধানীতে সুপেয় পানি সরবরাহে বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। মুজিববর্ষ পালন করা হবে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন মানুষের সামনে তুলে ধরা হবে। সেই পথ ধরেই উন্নত-সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ।

তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকার দুই সিটিতে দৈনিক পানির চাহিদা ২২৫ থেকে ২৪৫ কোটি লিটার। তবে চাহিদার বিপরীতে ঢাকা ওয়াসা সরবরাহ করছে ২৫৫ কোটি লিটার অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে ১০ কোটি লিটার বেশি। ঢাকার বাইরে পৌরসভাগুলোতে ৯০ ভাগ পানি সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সবার জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিতে ৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ওয়াসার সিস্টেমলস কমিয়ে আনা হয়েছে। চট্টগ্রামে ২০০৬ সালে চাহিদার চেয়ে যে ৪০ ভাগ পানির ঘাটতি ছিল তা-ও কমিয়ে আনা হয়েছে। এসব নানামুখী উদ্যোগে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। বর্তমানে সিঙ্গাপুরের একটি টিম বাংলাদেশ সফর করছে। সবকিছু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তার কারণে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close