নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

একুশ আমাদের অনুপ্রেরণার বাতিঘর...

বাঙালির জাতীয় জীবনে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সর্বশ্রেষ্ঠ বসন্ত। যে বসন্তে দেশের জন্য ঝরেছে ৩০ লাখ প্রাণ। রক্তে রঞ্জিত হয়েছে কৃষ্ণচূড়া-রাঁধাচড়ার ডাল। বিদ্রোহের আগুনে পাকিস্তানি সেনাদের হটিয়ে, প্রিয়জনের নীরব অভিমান বুকে নিয়ে মেহগনি, জারুল, তমাল, মহুয়া পাতার মতো বাংলার উর্বর মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে অনেক সতেজ-তাজা প্রাণ। তাই স্বাধীনতা আমাদের অহংকারের দীপ্ত শপথ। তবে এই স্বাধীনতা অর্জন আমাদের জন্য সহজ ও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। এর পেছনে রয়েছে তপ্ত বুলেট, উত্তপ্ত রাজপথে মিছিল-সেøাগানের জ্বলন্ত ইতিহাস। আমাদের অধিকার, স্বাধিকার ও মহান স্বাধীনতা অর্জনে তেভাগা আন্দোলনের ইলা মিত্র, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাস্টার দ্য সূর্যসেন, গরিবের স্বার্থ সংরক্ষণে তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহ, কৃষক-প্রজা অধিকার আদায়ে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, ভাষা আন্দোলনের রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, স্বাধীনতা-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ হাজার জনতা এক একজন মহানায়ক।

১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর এ দেশের শাসনভার চলে যায় ব্রিটিশদের হাতে। প্রায় ২০০ বছরের শাসন-শোষণের পর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির মুহূর্ত থেকেই বাঙালির স্বপ্নভঙ্গের বীজ তার অন্তরে নিহিত ছিল এবং সেই রাষ্ট্রের স্থায়িত্বের সম্ভাবনা ছিল একান্তই দুর্বল। যে দুটি বিচ্ছিন্ন ভূখ- নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল, তাদের মধ্যকার সরলরৈখিক দূরত্ব ১১০০ মাইল। আর স্থল, জল ও আকাশপথে যাতায়াতের দূরত্ব এর চেয়ে অনেক বেশি। সর্বোপরি পাকিস্তানের দুই অংশের জনগণের মধ্যে এক ধর্ম ছাড়া আর কোনো কিছুতেই তেমন সামঞ্জস্য ছিল না। তাদের ইতিহাস আলাদা, ভাষা ও সংস্কৃতি স্বতন্ত্র, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিম-ল ভিন্ন। এমনকি পোশাক-পরিচ্ছদ ও সামগ্রিক জীবনচরণ আলাদা ছিল। পাকিস্তানবাদী নেতাদের কাছে ধর্মটা শুধুই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। পাকিস্তান সৃষ্টির পরপর এসব বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। চলে আসে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে নানা রকমের বৈষম্য। চাকরি-বাকরিসহ সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মোটা দাগের অসমতা এ দেশের মানুষকে প্রতিবাদী করে তুলেছিল। তাই পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অবশম্ভাবী হয়ে পড়েছিল। এই সম্ভাবনাকে আরো বেগবান করেছিল ৫২-এর ভাষা আন্দোলন।

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’Ñ গানটি যখন মধুর সুরে বেজে ওঠে, তখন প্রত্যেকটা বাঙালি দেশের জন্য, ভাষার জন্য মরতে প্রস্তুত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারিকে সারা বিশ্বের ১৯৩টি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, যা গর্বে আমাদের বুকটা ভরিয়ে দেয়। একুশ আমাদের অনুপ্রেরণার বাতিঘর। শিরা-ধমনিতে ওঠে রণিÑ আমরাও পারি, আমরা বীরের জাতি। তাই সারা বিশ্ব আমাদের দিকে অবাক তাকিয়ে রয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close