নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

অস্তিত্বের ঝুঁকিতে ২১ ভাষা

বাংলাদেশে প্রচলিত ৪১টি ভাষার মধ্যে নিজস্ব লিপি আছে মাত্র আটটির। এর মধ্যে ২১টিরই নেই প্রচলিত কোনো লেখ্য রূপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেখ্য রূপ না থাকায় এ ভাষাগুলোর অস্তিত্ব ঝুঁকির মুখে। হারিয়ে যাচ্ছে অন্তত ১২টি ভাষা। ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্যে, বাংলার পরে এ দেশে সবচেয়ে প্রচলিত ভাষা চাকমা। এ ভাষায় কথা বলেন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। এরপর সবচেয়ে প্রচলিত মারমা, উর্দু, সাঁওতালি, ককবরক ও সাদরি ভাষা।

সবচেয়ে বিপন্ন অবস্থা রেংমিটচা ভাষার। এ ভাষায় কথা বলছেন মাত্র ৪০ জন। ভাষাটির কোনো লেখ্য রূপ না থাকায় এটি সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এদেশে এমন ভাষা আছে আরো অন্তত ২০টি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট বলছে, নৃগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণে বাংলার পাশাপাশি শিক্ষাদান করা হচ্ছে আরো চারটি ভাষায়। চেষ্টা চলছে আরো অন্তত দুটি ভাষায় বই ছাপানোর। এদেশের নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বাঙালি, বর্মণ, ভূমিজ দালুসহ ১৫ কোটির বেশি মানুষের ভাষা বাংলা। চামকা, মারমাসহ অন্য নৃতাত্ত্বিক ভাষায় কথা বলেন অন্তত ২০ লাখ।

১৯৯৯ সালেই লিঙ্গুইস্টিক সোসাইটি অব আমেরিকার মুখপাত্র ‘এথনোলগ’ দেখিয়েছিল, পৃথিবীতে ৫১টি ভাষার বক্তা বেঁচে আছে মাত্র একজন করে, ৫০০ ভাষার বক্তা ১০০ জনের কম, ১ হাজার ভাষার বক্তা ১ হাজারের বেশি নয়, ৩ হাজার ভাষার বক্তা ১০ হাজারের কাছাকাছি, আর ৫ হাজার ভাষার বক্তা ১ লাখের মতো। ভাষার সংখ্যাই যেখানে ৭ হাজারের মতো, সেখানে এই হিসাব রীতিমতো আতঙ্কজনক। ভাষা বিজ্ঞানীরা এও অনুমান করেছেন যে, মানুষ যখন প্রথম ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করল (আজ থেকে আনুমানিক ৩৫-৪০ হাজার বছর আগে) তখন মানুষের ভাষার যে সংখ্যা ছিল আজ তার অর্ধেক টিকে আছে, আর এই একবিংশ শতাব্দীতে তারও অর্ধেক বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

আর জীব বা উদ্ভিদের বৈচিত্র্যের বিলোপের মতোই ভাষা বিলোপও মানবসভ্যতার এক চরম ক্ষতি। ভাষা লোপের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যায় একটা গোষ্ঠীর সমস্ত জ্ঞান, স্মৃতি, সাহিত্য, সংগীত। এ তথ্য বহুল প্রচারিত যে, ইংল্যান্ডের কর্নিশ ভাষার শেষ বক্তা ডলি পেন্ট্রিথ মারা গেছেন ১৭৭৭ সালে, আর এই সেদিন ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি খবর বেরোলো আন্দামানের ‘বো’ ভাষার শেষ বক্তাও চলে গেছেন। মনে রাখতে হবে, একজন বক্তা থাকলেও ভাষা বেঁচে থাকে না, ভাষার কথোপকথনের জন্য দুজনের দরকার হয়।

হিসাব করলে দেখা যায়, পৃথিবীর বেশির ভাগ বড় ভাষা, বিশেষত আগেকার সাম্রাজ্যবাদ এবং পরে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ পোষিত ভাষা অন্য অনেক ভাষার ওপর দাপট দেখিয়েছে, এখনো দাপট দেখিয়ে চলেছে। এসব ভাষার নিষ্ঠুর আধিপত্যে অনেক ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যে জন্য এগুলোকে শরষষবৎ ষধহমঁধমব-ও বলা হয়। ভাষা ধ্বংসের নাম কেউ কেউ (যেমন স্কুৎনাব কাঙ্গাস) দেন ‘ল্যাঙ্গুয়েজ মার্ডার’ বা ভাষাহত্যা। এই দাপুটে ভাষাগুলোর মধ্যে আছে ইংরেজি, স্প্যানিশ, আরবি, রুশ, পর্তুগিজ এবং আরো কিছু ভাষা। এখন হয়তো সবাই সমান দাপুটে নেই, ইংরেজি সবার উপরে উঠে এসেছে। আর যেহেতু পৃথিবীর মাত্র ৪ শতাংশ লোক মোট ৪ হাজার ভাষা বলে, ওইসব ছোট ছোট ভাষাগোষ্ঠীর ভাষাগুলোই সবচেয়ে বেশি বিপন্ন, তারাই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close