গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২০

শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা বাড়ছে

কাল থেকে মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

আগামীকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শেষ হবে প্রচার। তাই শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামীকাল সকাল থেকে ভোটের মাঠে নামছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অর্ধ লক্ষাধিক সদস্য। এ দিন সকাল থেকেই নির্বাচনী মাঠে টহল দেবে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের টিম। এছাড়া আচরণবিধি ও নির্বাচনী অপরাধ দমনে নামবেন ১৯৩ জন জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ভোটগ্রহণের আগে শেষ মুহূর্তে কঠিন সময় পার করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন তারা। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। পাশাপাশি পোলিং এজেন্ট নির্ধারণসহ শেষ সময়ের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা। ভোটারদের আস্থা ফেরাতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএমে) প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন করতে নানা কার্যক্রম চলছে। এখন চালাচ্ছে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার) কর্মকর্তাদের ইভিএম সম্পর্কে ধারণা পর্ব। আগামী ৩০ জানুয়ারি এ বিষয়ে সব ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভোট কর্মকর্তাদের এ সম্পর্কে মক ভোটিং প্রশিক্ষণ দেবেন সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা। তাৎক্ষণিক কেন্দ্রের সামগ্রিক ফল রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ে পৌঁছাতে একজন সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নেতৃত্বে দুই ম্যাজিস্ট্রেট পাহারায় দিয়ে মূল কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে নির্দেশনা থাকছে ইসির।

এদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইসি জানিয়েছে প্রার্থীরা চাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইনে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন। করতে পারবেন তথ্য-আদান প্রদান। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটের পর দুই দিন ৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় জনসভা, মিছিল ও শোভাযাত্রা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এদিকে শেষ মুহূর্তে দিন-রাত নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থীরা। প্রচারে পিছিয়ে নেই কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলররাও। তাদের স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনরাও মাঠে রয়েছেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, ভোটগ্রহণের আগমুহূর্তের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মাঠে নামছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অর্ধলক্ষাধিক সদস্য। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ২০ হাজার ও আনসারের ২৭ হাজার সদস্য থাকবেন। এছাড়া মাঠে থাকছেন র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৭ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের ৫৪টি টিম এবং পুলিশ ও এপিবিএনের সমন্বয়ে ৫৪টি মোবাইল ফোর্স, ১৮টি স্ট্রাইকিং ও ২৭টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স বৃহস্পতিবার মাঠে নামছেন। একই দিন ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৩৮ প্লাটুন বিজিবি, ৭৬টি র‌্যাবের টিম, পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে ৭৫টি মোবাইল ও ২৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে নামছে। এ সিটিতে পুলিশের ২৫টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসির ঊর্ধ্বতন তিনজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৫ সালের তুলনায় এবার ২০১৯ সালে ঢাকার দুই সিটিতে ৩৬টি ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে। ভোটারও বেড়েছে। তবে কমেছে প্রার্থীর সংখ্যা। প্রার্থী সংখ্যা কমলেও বড় দুই দল মাঠে থাকায় তীব্র প্রতিযোগিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

জানা গেছে, এবার ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে ছয়জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর দক্ষিণ সিটিতে মেয়র পদে সাতজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮২ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩২৬ জন রয়েছেন। এরই মধ্যে চারজন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীতে প্রবেশ হওয়ার পথ ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে চেকপোস্ট বসানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে। এ দিন মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর কড়া নজরদারি রাখা হবে।

জয়-পরাজয়ে বড় ফ্যাক্টর নারী ও তরুণ ভোটার

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ের অন্যতম ফ্যাক্টর তরুণ ও নারী ভোটাররা। এছাড়া রয়েছেন বস্তিবাসী, শ্রমজীবী ও ভাসমান ভোটার। ২০১৫ সালের তুলনায় চলতি বছর দুই সিটিতে নতুন যুক্ত হয়েছে ১২ লাখ ৪৭ হাজার ভোটার; এদের বেশির ভাগই তরুণ। এ সময়ে দুই সিটিতে যুক্ত হয়েছে ১৮টি করে ৩৬টি ওয়ার্ড। সেসব ওয়ার্ডের বাসিন্দারাও জয়-পরাজয়ের অন্যতম নিয়ামক। এছাড়া দুই সিটির মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেকই নারী ভোটার। তাদের সংখ্যা ২৬ লাখ ২০ হাজারের বেশি। এছাড়া রয়েছে আঞ্চলপ্রীতি ও স্থানীয় নানা সমীকরণ।

যেভাবে জানবেন ভোটার নম্বর ও ভোটকেন্দ্র

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট দেওয়ার জন্য নিজের ভোটার নম্বর এবং আপনি কোন ভোটকেন্দ্রে ভোটটি দেবেন, তা জানা জরুরি। এর জন্য ভোটারদের সুবিধার্থে মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে ভোটার নম্বর ও ভোটকেন্দ্রের নাম জানার সেবা চালু করেছে ইসি।

এসএমএসের মাধ্যমে ভোটার নম্বর ও ভোটকেন্দ্রের ঠিকানা জানতে ১০৫ নম্বর এসএমএস পাঠিয়ে সব তথ্য পাবেন ভোটাররা। সে জন্য প্রথমে চঈ লিখে একটা স্পেস দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর বা স্মার্ট আইডি কার্ড নম্বর লিখে ১০৫ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে জানতে পারবেন আপনার ভোটার নম্বর, ভোটকেন্দ্রের নাম ও সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে আপনার সিরিয়াল নম্বর। এনআইডি নম্বরের ক্ষেত্রে ১৭ ডিজিট ও স্মার্ট আইডি নম্বরের ক্ষেত্রে ১০টি ডিজিট লিখতে হবে। যাদের এনআইডিতে ১৩টি ডিজিট আছে, তাদের নম্বরের শুরুতে জন্মসালটি লিখতে হবে। আজ থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে যেকোনো সময় এসএমএস পাঠালে ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই জানতে পারবেন আপনাকে কোন কেন্দ্রে ভোট দিতে হবে।

দুই সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম ও মো. আবদুল বাতেন বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচনের পরিবেশ ভালো রয়েছে। আশা করছি, উৎসবমুখর ভোট হবে। কারণ ইভিএমে ভোটদান হওয়ায় রাজধানীর মানুষের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ বিরাজ করছে। এতদিন ভোট খরার যে অভিযোগ আসছিল তান্ডও ঘুচবে এবারের নির্বাচনে বলে আমরা আশা করছি। কারণ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যা যা করণীয় সবই সম্পন্ন করা হয়েছে।

প্রার্থীদের জয়-পরাজয় সম্পর্কে জানতে চাইলে সুজনের বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে দলীয় ইমেজ একটা ফ্যাক্টর। এমনকি দল দুটির মেয়র প্রার্থীরা তরুণ ও চৌকস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close