প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৬ জানুয়ারি, ২০২০

করোনাভাইরাস

চীনের উহানে আটকা পড়েছেন ৫০০ বাংলাদেশি

চীনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে রহস্যজনক করোনাভাইরাস। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৪১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকেই এই ভাইরাস ছড়ানো শুরু হওয়ায় এ শহরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে সেখানে ৫০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন। এদিকে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে। কূটনৈতিক প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরÑ

উহানে থাকা বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, সেখানকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে ৫০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি। উহান থেকে বাস, ট্রেন ও বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ ঘরে থাকছেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় খাবার সংকটেরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে কোনো বাংলাদেশি আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। অন্য দেশের দূতাবাস নিজ দেশের ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কেউ খোঁজখবর নেয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।

হুবেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে মেকানিক্যাল অ্যান্ড অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছেন রাকিবুল তূর্য। তিনি বলেন, আমাদের ইউনিভার্সিটিতে বাঙালি আছি আমরা প্রায় ২০০ জন। শীতকালীন ছুটি থাকায় ৬০ থেকে ৭০ জন দেশে গেছে আগেই। পুরো শহর বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আমরা সবাই বন্দিদশায় আছি। নিজেদের সতর্কতার সঙ্গে চলতে হচ্ছে। আর ইউনিভার্সিটি থেকে যথেষ্ট হেল্প করছে। বাংলাদেশি কেউ আক্রান্ত হয়েছে, এখনো এমন খবর পাওয়া যায়নি। সিটি লক-ডাউনের জন্য খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা সবাই ভয়ে আছি। কারণ ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের আশপাশে ভারত, শ্রীলঙ্কার যারা আছেন তারা জানিয়েছেন, উহানে তাদের যে নাগরিক রয়েছেন চেকআপ করিয়ে তাদের দেশে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু আমাদের দূতাবাস এখনো কোনো খবর নেয়নি। কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানতে পারিনি। আমরা চাইলেও এখন দেশে ফিরে যেতে পারছি না। তূর্য বলেন, উহানে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন আমরা প্রায় ১৫০ জন আছি।

হুবেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির শিক্ষার্থী শাফায়াত উল্লাহ খান বলেন, কিছু কিছু সংবাদে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আমাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দূতাবাস থেকে আমাদের কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না। আমরা সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছি।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইলিয়াস আহমেদ বলেন, বাজার, দোকান, সুপারশপ বন্ধ। ভ্যাকেশন টাইম, ক্যান্টিনও বন্ধ। আমরা বাঙালিরা রান্না করে খাই। যাদের যা মজুদ আছে শেষ হয়ে গেলে খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। খুব শঙ্কার মধ্যে সময় পার করছি। আমরা সবাই রুমে বন্দি। আরেক শিক্ষার্থী মাহিন ইসলাম বলেন, এখানের অবস্থা খুব একটা ভালো না। একটু আতঙ্কের মধ্যে আছি। রাস্তাঘাটে কোনো মানুষ নেই। বাজারে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি থেকে আমাদের খোঁজখবর নেওয়া হোক। এখানের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারা একটা সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের জন্য ভালো হবে।

চীনে বাংলাদেশি দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন মাসুদুর রহমান টেলিফোনে বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি কেউ আক্রান্ত হয়নি। পুরো উহান শহর লক-ডাউনে আছে। যার কারণে আমরা চাইলেও তাদের কাছে যেতে পারছি না। তবে আমরা খোঁজখবর রাখছি। শিক্ষার্থীদের অনেকের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। তারাও চাইলে আমাদের কাছে আসতে পারবে না। সেখানে খাবারের একটা সংকট আছে। আমরা চীন সরকারকে বলেছি তারা যেন এ বিষয়ে নজর দেন। তিনি আরো বলেন, চীন সরকারের কিছু বিধিনিষেধ আছে। চাইলেই আমরা অনেক কিছু করতে পারি না। সবকিছুতে তাদের ওপর নির্ভরশীল। আমরা প্রতিনিয়ত দেশে আপডেট তথ্য পাঠাচ্ছি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশি কাউকেই দেশে পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ চীন সব বিমানবন্দরও বন্ধ রেখেছে।

বেনাপোল (যশোর) : চীনসহ কয়েকটি দেশে সম্প্রতি নতুন নামের ভাইরাস ‘করোনা’ দেখা দেওয়ায় স্থলবন্দর বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে সতর্কাবস্থা জারি করেছে যশোরের স্বাস্থ্য বিভাগ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত হয়ে যেসব দেশি-বিদেশি পাসপোর্টযাত্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তাদের স্বাস্থ্য বিভাগ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে এ ভাইরাস।

ইতোমধ্যে এ পথে ভারত থেকে আসা বিদেশি নাগরিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। গতকাল শনিবার সকালে চেকপোস্ট একজন আইরিশ, চারজন অস্ট্রেলিয়া, দুজন কানাডার ও একজন আমেরিকাসহ আটজন বিদেশিকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করেন বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য বিভাগের ডা. হাসানুজ্জামান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে একটি নতুন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। ভাইরাসটি চীনের পূর্বাঞ্চলের একটি মাছের বাজার থেকে ছড়িয়েছে। জেনেটিক সিক্যুয়েন্স পরীক্ষা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ভাইরাসটি ভয়াবহ সার্স ভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৪১ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন কয়েকজন।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগেশনে কর্মরত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আবদুল মজিদ জানান, চীনে করোনা ভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়ে অনেকে মারা গেছেন। বাংলাদেশে এ ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ দেশের সব ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে চিঠি জারি করেছে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য। তারা বিদেশি যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। এর আগে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে বিশেষ সতর্কতার নির্দেশ দেয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close