বদরুল আলম মজুমদার

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২০

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন

বর্জন নয়, এবার শেষ দেখতে চায় বিএনপি

ইলেকট্র্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিরোধিতা করলেও এবার ঢাকার দুই সিটিতে ভোটবর্জনের কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই বিএনপির। বরং ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের ভোটের চিত্র মাথায় রেখেই নেওয়া হচ্ছে পরিকল্পনা। কারণ সেই ভোট মাঝপথে বর্জন করলে এবং হেরে গেলেও প্রথম সাড়ে চার ঘণ্টাতে দল সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থী উল্লেখযোগ্য ভোট পেয়েছিলেন। তাই এবার শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নেতাকর্মীদের। নেতারা বলছেন, এখন তাদের সামনে আপাতত দুটি চ্যালেঞ্জ। সেগুলো হচ্ছে কেন্দ্রে পাহারায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং পোলিং বুথে প্রার্থীর এজেন্টদের ফল ঘোষণা পর্যন্ত রাখা। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে একাধিকার বৈঠকে, ভোটের প্রচারণায় এবং বক্তব্য-বিবৃতিতে দলটির নেতারা ইভিএমের বিরোধিতা করছেন। গত বুধবারও বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ইসিতে গিয়ে ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোট নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তবে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, ইভিএমে আস্থা না থাকলেও এবার শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাড়ে চার ঘণ্টার মাথায় ভোট থেকে সরে দাঁড়ালেও এবার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকতে চায় দলটি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রয়োজনে ভোটের তারিখ পিছিয়ে হলেও ইভিএম পদ্ধতি বাতিল করে ব্যালটে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। গত বুধবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের (অ্যাব) উদ্যোগে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ইভিএমের কারিগরি অপব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচনী ফল কারচুপির সম্ভাব্য সুযোগ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ দাবি জানান। ইভিএমের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন, সবাই জনগণের কাছে এ কথা বলি, আমরা ইভিএম মানি না। ইভিএম কখনোই জনগণের সঠিক রায়ের প্রতিফলন ঘটাবে না। আমরা এই ইভিএম প্রত্যাখ্যান করছি।

বিএনপির মতো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও ইভিএমের বিরোধিতা করে ব্যালটে সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থা করার দাবি তুলেছে। ফ্রন্টের মুখপাত্র ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, ইভিএমে ব্যবহার হওয়া অডিট কার্ড, এসডি কার্ড, কন্ট্রোল ইউনিট সবই কর্তৃপক্ষের হাতে থাকবে এবং তারাই নিয়ন্ত্রণ করবে। ভোটাররা কোনো প্রতীকে ভোট দিচ্ছেন, সেটির কোনো প্রমাণ না থাকায় এর বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। তাছাড়া বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে ইভিএম চালুর পর তা স্থগিত করা হয়েছে।

দলটির অভিযোগ, এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনী কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এতে অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচন থেকে চিটকে পড়তে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে মেয়রপ্রার্থীদের যেকোনো পরিস্থিতিতে মাঠে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাই কেন্দ্র পাহারা ও পোলিং এজেন্ট রাখতে প্রতি ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এ লক্ষ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের সমন্বয়ে কেন্দ্র পাহারা কমিটি করছে ও দুর্বল নয় এমন নেতাকর্মীদের পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে এসব কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন উত্তর সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ শাহজাহান।

তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এবার নির্বাচন আমরা অন্য রকম গুরুত্ব দিয়ে দেখছি, সেভাবে নেতাকর্মীদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো গাফিলতি দেখা গেলে তাৎক্ষণিক সেটি দেখার জন্য বাড়তি জনবল রাখা হয়েছে। আমরা অপেক্ষায় থাকব নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত। কারণ এরই মধ্যে ঢাকার বেশ কয়েকটি জায়গায় আমাদের প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এটি সামনের দিনে আরো বাড়তে পারে বলে আমরা শঙ্কা করছি। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কমিশনের ওপর নির্ভর করছে ভালো নির্বাচন।

উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, সরে যাওয়ার জন্য তো আমরা মাঠে নামিনি, ভোটে আছি এবং থাকব। আর দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছি এবং শেষ পর্যন্তই থাকব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close