গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৭ জানুয়ারি, ২০২০

ইভিএমে ভোট

সংশয় কাটলেও স্বস্তি নেই ইসির

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে নির্বাচন কমিশন ইসি। এই প্রথম এত বিশাল পরিসরে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। ইভিএমে সঠিকভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ব্যাপক প্রচার এবং সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এজন্য হিমশিম খেতে হচ্ছে সাংবিধানিক এ সংস্থাকে। শুধু তাই নয়, ইভিএমে ভোটগ্রহণ নিয়ে ব্যাপক বিরোধিতায় নেমেছে বিরোধীরা, বিশেষত বিএনপি ও ওই দলের সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা। এসব সমস্যা ও প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে কাজ করে চলেছে ইসি।

বিশেষ করে এ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে বিশাল পরিসরে প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হচ্ছে। এটা তদারকির জন্য নিয়োগ করতে হচ্ছে বিশাল জনবল। এর ব্যয় মেটাতে বারবার হোঁচট খেতে হচ্ছে। কারণ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে অন্য খাতের টাকা এনে কোনো প্রকারে চালিয়ে নিতে হচ্ছে ইভিএমের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। ভোটের সময় ঘনিয়ে আসায় ইভিএমের বিশাল আয়োজনের কারণে নির্বাচনের অন্যান্য কার্যক্রমে খুব বেশি মনোযোগ দিতে পারছে না ইসি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজার কারণে আগামী ৩০ জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। ফলে ইভিএমের বিশাল কর্মযজ্ঞ ঠিকভাবে পরিচালনা করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। সেই সংশয় আপাতত কেটে ওঠায় ইভিএমে সফল ভোট আয়োজনে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে ইসি। গত বুধবার নির্বাচন কমিশন ভবনে বিকালে এ নিয়ে বিশাল পরিসরে আলোচনা করে ইভিএমের সংখ্যা, লোকবলসহ প্রশিক্ষকদের কর্মযজ্ঞ নির্ধারণ করে ফেলেছে।

এদিকে, ইভিএমের কর্মযজ্ঞের মধ্যে কমিশনকে বারবার ভাবতে হচ্ছে কীভাবে শেষ পর্যন্ত সব পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। প্রতিবন্ধী ভোটার, ফিঙ্গার কাজ না করা ভোটার এবং বয়সের ভারে একাবারে ন্যুব্জ এসব ভোটারের ভোট ইভিএম অথরাইজডকে নিজে ব্যালটে সিল মারতে হয়। এর জন্য ১ শতাংশ ভোট প্রদানে ইসির এখতিয়ার দেওয়া থাকে ইভিএমে। প্রশ্ন উঠেছে, এই অথরাইজ ব্যক্তিটি কে, যে নিরপেক্ষভাবে এই কাজটি পরিচালনা করতে পারেন। এটা নিয়ে কমিশনকে ভাবতে হচ্ছে। ফলে ইভিএমে ভোট নেওয়া যতটা সহজ, দুশ্চিন্তাও কম নয়।

এদিকে, ইভিএমে ভোট আয়োজনে এবারই ঢাকার দুই সিটিতে সেনাসদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে দুজন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এসব বাহিনীর সদস্যরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে এটাও ইসির জন্য স্বস্তিদায়ক বলা যায়।

জানতে চাইলে ওই কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় দূর করতে আমরা ব্যাপক প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রতিটি কেন্দ্রে ইভিএম প্রদর্শন করা হবে, যাতে সাধারণ মানুষ এ মেশিনে কীভাবে ভোট দেবেন, তা জানতে পারেন। এ ছাড়া ইভিএম নিয়ে কারো মধ্যে কোনো প্রশ্ন থাকলেও তারা মেশিন যাচাইয়ের সুযোগ পাবেন।’

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বৈঠকে ইভিএম নিয়ে কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা তুলে ধরেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করতে এখন পর্যন্ত কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কী কী কাজ বাকি রয়েছে, সেসব তথ্যও তুলে ধরা হয়। ইভিএমে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণে সব কর্মকর্তার আন্তরিক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বৈঠকে জানানো হয়, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ৪৫ হাজার ৭৭০ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে ইভিএম প্রশিক্ষণ দেওয়া চলছে। এরমধ্যে ২ হাজার ৪৬৮ জন প্রিসাইডিং, ১৪ হাজার ৪৩৪ জন সহকারী প্রিসাইডিং ও ২৮ হাজার ৮৬৮ জন পোলিং অফিসার রয়েছেন। তাদেরকে কয়েকটি ভেন্যুতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের দুদিন এবং পোলিং কর্মকর্তাদের এক দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভোটার এডুকেশন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ডেমোনেস্ট্রেটরদের আগামী ২৩-২৫ জানুয়ারি যেকোনো দুদিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগামী ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি ইভিএমের ওপর ভোটারদের শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হবে। আগামী ২৮ জানুয়ারি সব কেন্দ্রে ভোটারদের জন্য মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২৯ জানুয়ারি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের হাতে ইভিএম তুলে দিয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। আর ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

জানা গেছে, দুই সিটিতে ভোটগ্রহণে ২৮ হাজার ৮৬৮টি ইভিএমের প্রয়োজন হবে। এরমধ্যে ঢাকা উত্তরে ১৫ হাজার ৬৯২টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৩ হাজার ১৭৬টি মেশিন থাকবে। আর ভোটগ্রহণ, প্রশিক্ষণ ও ডেমোনেস্ট্রেশন মিলিয়ে ইভিএমের প্রয়োজন হবে ৩৪ হাজার ৮৬৯টি। আরো জানা গেছে, ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি সহায়তা দিতে সশস্ত্র বাহিনীর ৫ হাজার ১৫ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে দুজন করে সার্জেন্ট বা করপোরাল বা ল্যান্স করপোরাল অথবা সৈনিক দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া ৫২ জন জেসিও ও ২৭ জন অফিসারও মাঠে থাকবেন। ইতোমধ্যে দুই সিটির জন্য ৫ হাজার ৫৩৮ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োগের আদেশ হয়েছে।

ব্যাপক প্রচারের সিদ্ধান্ত : জানা গেছে, ইভিএম নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাবে নির্বাচন কমিশন। ঢাকার দুই সিটির প্রতিটি কেন্দ্রে দুটি করে মোট ৫ হাজার ২০০ ও প্রতি কক্ষে ১টি করে মোট ১৪ হাজার ৬০০টি ফেস্টুন সাঁটাবে ইসি। ইভিএম গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে ইসি। এ মেশিনের ওপর আস্থা আনতে ব্যাপক হারে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যম, ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়া, সিনেমা হল ও প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম প্রদর্শন করা হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন জনবহুল স্থান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে লিফলেট বিতরণ করা হবে। বুধবার নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ-সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close