নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১১ জানুয়ারি, ২০২০

মুজিববর্ষ ঘিরে যত আয়োজন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনে বছরব্যাপী মহাকর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ। জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ে নানা পরিকল্পনা করেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে ২৯৬টি পরিকল্পনার তালিকা করেছে ওই কমিটি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালন করা হবে মুজিববর্ষের আবহে। বছরব্যাপী আয়োজনের মধ্যে থাকছেÑ

১৭ মার্চ ২০২০ : চলতি বছরের ১৭ মার্চে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা শহর ও বিভিন্ন স্থানে ৩১ বার

তোপধ্বনি, সব সরকারি, বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, টুঙ্গিপাড়ায় জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দেশব্যাপী বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা আয়োজন করা হবে।

জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিক আয়োজন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সেদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা। এদিন জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন দফতর, সংস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন হবে।

২২-২৩ মার্চ ২০২০ : মুজিববর্ষ উপলক্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।

২৫ মার্চ ২০২০ : গণহত্যা দিবস পালন।

২৬ মার্চ ২০২০ : মুজিববর্ষের আবহে স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস পালন।

১৭ এপ্রিল ২০২০ : মেহেরপুরের মুজিবনগর দিবস উদ্যাপন।

২৩ মে ২০২০ : জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তি দিবস উদ্যাপন।

৭ জুন ২০২০ : ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস পালন।

২৩ জুন ২০২০ : রোজ গার্ডেন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা দিবস উদ্যাপন।

৮ আগস্ট ২০২০ : বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন পালন।

১৫ আগস্ট ২০২০ : জাতীয় শোক দিবস পালন।

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ : জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ প্রদানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিষয়ক আলোচনা।

৩ নভেম্বর ২০২০ : ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও অন্যান্য স্থানে জেল হত্যা দিবস পালন।

১৪ ডিসেম্বর ২০২০ : রায়েরবাজার বধ্যভূমিসহ সারা দেশের সব বধ্যভূমিতে ও অন্যান্য স্থানে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন।

১৬ ডিসেম্বর ২০২০ : সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, জাতীয় প্যারেড স্কয়ার ও অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে বিজয় দিবস উদ্যাপন।

১০ জানুয়ারি ২০২১ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উদ্যাপন।

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ : শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন।

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদানের বার্ষিকী উদ্যাপন।

৭ মার্চ ২০২১ : ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদ্যাপনে সাত দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজন এবং আর্মি স্টেডিয়ামে জয় বাংলা কনসার্টের আয়োজন।

১৭ মার্চ ২০২১ : সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মুজিববর্ষের সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং টুঙ্গিপাড়ায় জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠান।

আন্তর্জাতিক পরিসরে আয়োজন

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৭৭টি দূতাবাসে ২৬০টিরও বেশি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছেÑ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট, নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের সদর দফতর, জেনেভায় জাতিসংঘ দফতরের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায়, ব্রাসেলসে অবস্থিত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদর দফতর ও প্যারিসে অবস্থিত ইউনেস্কোর সদর দফতরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের ব্যবস্থা নেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিদেশে আরো পাঁচটি বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজে বঙ্গবন্ধু সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজন এবং ওই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল এ রকম গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে।

লন্ডনে মাদাম তুসো জাদুঘর এবং জাতিসংঘ সদর দফতরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাস্কর্য স্থাপন এবং ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবন ও আদর্শভিত্তিক চিত্রকর্ম ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের মুজিব ফেলোশিপ অ্যান্ড ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম চালু এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের পিস-কিপিং সাফল্যকে উদ্যাপন করা হবে।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনারের অডিও, ভিডিও ও স্থিরচিত্রের ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী। ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম ও শিলংয়ে নাগরিক মিলনমেলার আয়োজন থাকবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশ্বের সব দেশে রোপণ করা হবে ১০০টি করে গাছের চারা।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্টজনদের নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার এবং আগামী মে মাসে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউটে ‘শেখ মুজিব ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করা হবে।

খেলাধুলার আয়োজন : মুজিববর্ষে ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলার ইভেন্ট আয়োজন করবে বাস্তবায়ন কমিটি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবল-২০২০, দুটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচ, জাতির পিতার নামে আন্তর্জাতিক হকি টুর্নামেন্ট, আন্তর্জাতিক সাফ অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্ব কাবাডি প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক ভলিবল প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক রোলবল গোল্ডকাপ, আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা, ইন্টারন্যাশনাল এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপ, আন্তর্জাতিক বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতা থাকবে।

মুজিববর্ষে থাকবে ইন্টারন্যাশনাল আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ, থ্রি অন থ্রি (বিচ) বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, আন্তর্জাতিক মহিলা বাস্কেটবল প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ড মাস্টারস দাবা প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিস টুর্নামেন্ট, আন্তর্জাতিক টেনিস প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিকস প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা, মহা ঘুড়ি উৎসব, সাফ জুনিয়র বক্সিং টুর্নামেন্ট, আন্তর্জাতিক ইয়োগা প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো, আন্তর্জাতিক খো খো, আন্তর্জাতিক কারাতে প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক জুডো প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতা, সাউথ এশিয়ান ওয়েটলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপ, আন্তর্জাতিক কিকবক্সিং প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টুর্নামেন্টসহ জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন।

আরো অনেক আয়োজন : অমর একুশে বইমেলা ২০২১ বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা হবে এবং চলতি বছরের নভেম্বরে জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা ২০২০ আয়োজন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে উৎসর্গ করা হবে।

বছরব্যাপী আয়োজনের মধ্যে থাকছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন এবং লাখ লাখ হাতে মানব প্রতিকৃতি তৈরির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণের কর্মসূচি।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় স্থাপন করা হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মান মন্দির। বাস্তবায়ন কমিটি বলছে, কর্কটক্রান্তি ও দ্রাঘিমাংশের সংযোগস্থলের বিচারে এই স্থানটি ভৌগলিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ১২টি সংযোগস্থলের ১০টি সমুদ্রে ও একটি সাহারা মরুভূমিতে পড়েছে যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশগম্যতা নেই। শুধু একটি স্থানাঙ্ক বাংলাদেশের ভাঙ্গা উপজেলায় পড়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close