নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯

রাজাকার ১১ হাজার

প্রথম তালিকা প্রকাশ

সরকারের হাতে থাকা নথির তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে একাত্তরে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর বেতনভোগী ১০ হাজার ৭৮৯ স্বাধীনতাবিরোধীর প্রথম তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। গতকাল রোববার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দীর্ঘ নয় মাস তাদের স্থানীয় দোসর জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সহায়তায় বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে, দুই লাখ মা-বোনের সন্ত্রমহানি করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি পর্যালোচনা করে সেই সব স্বাধীনতাবিরোধীর মধ্যে ১০ হাজার ৭৮৯ জনের প্রথম তালিকা প্রকাশ করা হলো। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হেফাজতে থাকা দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথম তালিকা গতকাল মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো তালিকা প্রকাশ করা হবে।

তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, আমরা কোনো তালিকা তৈরি করছি না। যারা একাত্তরে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বা স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং যেসব পুরোনো নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ছিল সেটুকু প্রকাশ করছি।’

তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে কি না জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কোনো গেজেট প্রকাশ করা হবে না। তবে জাতি প্রত্যাশা করলে এবং সরকার মনে করলে গেজেট করবে। আমরা তালিকা প্রকাশ করলাম, আগে রি-অ্যাকশনটা দেখব, জাতি চাইলে এটা হবে।’

প্রায় এক দশক আগে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর রাজাকারের তালিকা তৈরির দাবি জোরালো হয়। ২০১২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন, রাজাকারের কোনো তালিকা সরকারের কাছে নেই। তবে তিনি বলেছিলেন, ১৯৭১ সালের খুলনায় আনসার হেডকোয়ার্টার্সে পাওয়া তালিকায় ৩০ হাজারের বেশি রাজাকারের তথ্য মিলেছিল। ওই তালিকাটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রয়েছে। এরপর গত ২৫ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাজাকারদের তালিকা সংগ্রহে কাজ শুরু হওয়ার কথা জানানো হয়।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের বেতনভোগী রাজাকারদের তালিকা সংগ্রহের জন্য চলতি বছর ২১ মে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠি পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। পরে ওই তালিকা করার জন্য আবার তাগিদ দেওয়া হয়।

কমিটির সভাপতি শাজাহান খান সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘তালিকা হাতে আসা শুরু হয়েছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, এই ১৬ ডিসেম্বর থেকে যতটুকু আসবে পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে।’

এরই ধারাবাহিকতায় বিজয় দিবসের আগের দিন ৬৫৯ পৃষ্ঠার প্রথম তালিকা প্রকাশ করতে এসে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় অনেক নথি সুকৌশলে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে পরিপূর্ণ তালিকা পাওয়া কঠিন হচ্ছে। ‘তৎকালীন ১৯ জেলার রেকর্ড রুমে যেসব দালিলিক প্রমাণ ছিল, সেগুলো দিতে বলা হয়েছিল; আশানুরূপ তালিকা পাইনি। তাই জানুয়ারি মাসের মধ্যে রেকর্ড পাঠানোর জন্য বলেছি।’ বিভিন্ন জেলার রেকর্ড রুম এবং ওই সময় বিজি প্রেসে ছাপানো তালিকাও সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যাচাই-বাছাই করে ধাপে ধাপে আরো তালিকা প্রকাশ করা হবে।’

এক প্রশ্নে মোজাম্মেল বলেন, তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যদি কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থেকে থাকে, তাহলে এই তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাদের বিচারের দ্বার উন্মোচিত হবে বলে তার বিশ্বাস। ‘তবে কারো বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এই তালিকা নয়। তালিকাভুক্ত হলে মামলা করা যাবে বা তালিকাভুক্ত না হলে মামলা করা যাবে না এমন নয়। বাদী অভিযোগ আনলে মামলা হবে।’

মন্ত্রী বলেন, প্রথম ধাপের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় চিহ্নিত করা হয়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বেচ্ছায় যারা ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন তারাও স্বাধীনতাবিরোধী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close