নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

বুদ্ধিজীবী দিবসে প্রধানমন্ত্রী

আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায় না

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ দেশের জন্য বুদ্ধিজীবীরা জীবন দিয়ে গেছেন, তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এমনকি নামটাও তো মুছে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু সেটা তো মুছে ফেলতে পারেনি। কারণ আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায় না। কখনো বৃথা যায়নি। গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ সভার আয়োজন করে।

১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘এটা তো শুধু একটা হত্যাকান্ডই ছিল না। আমাদের বিজয়কে নস্যাৎ করা, বাঙালি জাতির যে উত্থান, সেটাকে ধ্বংস করা, বাংলাদেশ নামক যে রাষ্ট্রটা, সে রাষ্ট্রটাকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য ছিল। আইয়ুব খান যেভাবে নিজে সেনাপতি থেকে ইস্কান্দার মির্জার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু ইস্কান্দার মির্জার পরিণতিইবা কী হয়েছিল? আইয়ুব খানকে যখন ক্ষমতায় আনল এরপর ইস্কান্দার মির্জা তখন নির্বাসনে লন্ডনে গেল। লন্ডনে গিয়ে ভাত বেচার দোকানে প্লেট ধোয়ার কাজ নিতে হয়েছিল। কাজেই বেইমানদের যারা বেইমানি করায়, তারাও কিন্তু বিশ্বাস করে না। তারাও ছুড়ে ফেলে দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব বুদ্ধিজীবী জীবন দিয়ে গেছেন এ দেশের জন্য, ?যাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাদের নামটাও মুছে ফেলা হয়েছে। যে স্বাধীন দেশ জাতির পিতা দিয়ে গেছেন, সেই স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখে, বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে; সেভাবেই এগিয়ে যাবে। বিশ্বে বাংলাদেশের সবাই যেন মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে; তাহলে লাখো শহীদের আত্মত্যাগ ও তাদের যে মহান অবদান, সেটা শিরোধার্য হয়ে থাকবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ২৪ বছরের পাকিস্তানি বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে দেশের আপামর জনসাধারণকে সংগঠিত করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় জামায়াতসহ ধর্মান্ধ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তারা আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে পাক বাহিনীকে সহায়তার পাশাপাশি হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুট করে। বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে তারা দেশের শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলীসহ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নাম একেবারে মুছে ফেলা এবং একটা মিথ্যা ইতিহাস তৈরি করা, মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সত্যকে কেউ কখনো একেবারে মুছে ফেলতে পারে না। আজকে সেটা প্রমাণ হয়েছে সারা বিশ্বের কাছে। আজকে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশের জনগণের কাছে। আজকের প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পেয়েছে।

বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলার মাটিতে মীরজাফর মোশতাক থেকে শুরু করে জিয়ার মতো বেইমানের জন্ম বারবার হয়েছে। ভবিষ্যতে এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে; সে দায়িত্বটা বাংলাদেশের জনগণকে নিতে হবে। আমাদের তরুণ সমাজকে নিতে হবে। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।

জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, হত্যা, খুন, সন্ত্রাস আর লুটপাট করেছে; তাদের রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছেন জিয়া। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা পালিয়েছিল, তাদের ধরে এনে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া আরো একধাপ এগিয়ে যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের মন্ত্রী বানিয়েছেন। তাদের গাড়িতে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা লাগিয়ে দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাব মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ, আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি ও উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close