নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ লেখায় সংগ্রাম অফিসে ভাঙচুর

মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া আবদুল কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ বলার প্রতিবাদে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। গতকাল শুক্রবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকায় পত্রিকাটির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় পত্রিকাটির সম্পাদক আবুল আসাদকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। পত্রিকা অফিসের ভেতরে ভাঙচুরও করা হয়েছে। বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের একপর্যায়ে দৈনিক সংগ্রামের বেশ কয়েকটি কপি আগুনে পোড়ানো হয়। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা করা হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে শহীদ বলার মাধ্যমে তারা দেশের শহীদদের অবমাননা করেছে। আদালত অবমাননা করেছে। দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত করেছে। আমরা চাই, সরকারিভাবে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হোক। আমরা পত্রিকাটির প্রধান গেটে তালা ঝুলে দিয়েছি। পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহমুদ জানান, বিজয়ের মাসে একজন রাজাকার, দেশদ্রোহী কাদের মোল্লাকে সংগ্রাম পত্রিকা শহীদ অভিহিত করে সংবাদ প্রকাশ করেছে। আমরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে এখানে এসেছি। একই কাজের জন্য পত্রিকার সম্পাদককে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

এদিকে কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ বলা গর্হিত এবং রাষ্ট্রবিরোধী কাজ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। এ জন্য দৈনিক সংগ্রামকে জবাবদিহি করতে হবে বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা অবশ্যই গর্হিত এবং রাষ্ট্রবিরোধী সংবাদ। আমরা এই সংবাদ প্রত্যাখ্যান করি, এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এমন সংবাদের তীব্র বিরোধিতা করছি। দৈনিক সংগ্রামকে এর দায় নিতে হবে এবং জবাবদিহির মুখোমুখি করা হবে। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ স্পেন সফর থেকে ফিরলে করণীয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন হারানো রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত এই জাতীয় দৈনিকে গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘শহীদ কাদের মোল্লার ষষ্ঠ শাহাদাতবার্ষিকী আজ’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আজ ১২ই ডিসেম্বর শহীদ কাদের মোল্লার ষষ্ঠ শাহাদাতবার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করে সরকার। জাতিসংঘের মহাসচিব থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, মানবাধিকার সংগঠনের অনুরোধ উপেক্ষা করেই ফাঁসি কার্যকর করা হয়।’

দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত প্রতিবেদন এরই মধ্যে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে চলছে বিস্তর সমালোচনা। এই প্রতিবেদনকে ধৃষ্টতা বলেও আখ্যায়িত করেছেন অনেকে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম ফাঁসি কার্যকর করা হয় রাজাকার কাদের মোল্লার। কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জল্লাদ শাজাহান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল সেদিন ফাঁসি কার্যকর করে।

এর আগে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে রাজাকার কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২। রায়ের পর সাধারণ মানুষ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা সেদিন বিকাল থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে জড়ো হতে থাকে। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শাহবাগ চত্বরে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ। গণদাবির মুখে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিটি) আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) সংশোধন বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়। এই সংশোধনের ফলে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল করার সুযোগ তৈরি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাণদন্ড পায় একাত্তরের এই ঘাতক। মিরপুরের কসাই খ্যাত দন্ডপ্রাপ্ত সেই কাদের মোল্লাকে ছয় বছর পরও ‘শহীদ’ বলার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির আর সাবেক ছাত্রসংঘের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close