সাহিদ রহমান অরিন

  ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৯

বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০১৯

জমকালো উদ্বোধন

সালমান-ক্যাটরিনার মুখে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু

আলো ঝলমলে উৎসবে দিনের আলো লুকানোর আগেই হাজার-হাজার দর্শকে টইটম্বুর মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। গোধূলি নামতেই শুরু হলো কনসার্ট। ব্যান্ড তারকা জেমস মঞ্চে উঠে তার পরিবেশনা শুরু করার পরই হাজির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিটে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। এরপর মিনিট দশেক সংগীতের ছন্দে চলে আতশবাজি। এর মধ্য দিয়ে বল মাঠে গড়ানোর দুই দিন আগে পর্দা উঠল ঘরোয়া ক্রিকেটের সর্ববৃহৎ আসরের।

বিপিএলের এটি সপ্তম আসর। লাকি নাম্বার সেভেনকে বিশেষ তকমা দিয়ে আলাদা আদল দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আগের সব ফ্র্যাঞ্চাইজি বাতিল করে নিজেদের পরিচালনায় দলের স্পন্সর নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করছে তারা। আসছে বছর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী সামনে রেখে এবার বিপিএলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে তার নাম। জাতির পিতার জন্মদিনের সেঞ্চুরি উপলক্ষে নেওয়া নানা সরকারি আয়োজনেরও গোড়াপত্তন হলো এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে।

বিপিএলের বর্ণিল উদ্বোধন উপলক্ষে কাল সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটে শুরু হয় অনুষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা পর ৫টা ৫৫ মিনিটে প্রথম শিল্পী হিসেবে মঞ্চে আসেন দ্য রক স্টার খ্যাত শুভ। এরপর ফোক গান পরিবেশন করেন রেশমি মির্জা ও তার ব্যান্ড মাটি। তারপরই মঞ্চে আগমন বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা জেমসের। তিনি ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ গান গাওয়ার পর মাঠে আসেন প্রধানমন্ত্রী। ভিআইপি গ্যালারির বারান্দায় বসানো অস্থায়ী মঞ্চ থেকেই বিশেষ বিপিএলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা, ‘যারা উপস্থিত আছেন, সকলকে আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আগামী দিনে এই অনুষ্ঠান স্বার্থক হোক, সফল হোক এবং আজকের (কালকের) অনুষ্ঠান আপনারা সবাই ভালোভাবে উপভোগ করুন, সেই কামনা করে আমি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগ ২০১৯-এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।’

সরকারপ্রধানের ঘোষণার পর মঞ্চের চারপাশ আলোকিত করে আকাশ পানে ছুটতে থাকে বর্ণিল আতশবাজি, শুরু হয় রঙ-বেরঙের খেলা। সংগীতের তালে মিনিট দশেক চলে এই আয়োজন। উদ্বোধন হয়ে গেলে ফের মঞ্চে ফেরেন জেমস। তিনি ‘মা’, ‘তারায় তারায়’ ও ‘চল চলে আপনে ঘর’ গান গেয়ে শোনান। ভিআইপি গ্যালারি থেকে প্রধানমন্ত্রী শোনেন জেমসের এই পরিবেশন।

রাতে একটি মৌলিক গান দিয়ে মঞ্চ কাঁপান ভারতের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী সনু নিগম। এরপরই দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধনে ধান্যে পুষ্পেভরা’ গান গেয়ে বাংলাদেশকে ভালোবাসা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও এ সময় ঠোঁট মেলাতে দেখা যায়। এরপরই সবাইকে চমকে দিয়ে সনু গেয়ে শোনান ‘ শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি’। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গাওয়া এই গানে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যেও পড়ে ব্যাপক সাড়া। রোমান্টিক গানের জন্য ভারত ও বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া সনু তার জনপ্রিয় গানের পাশাপাশি পারফরম্যান্সে একাধিকবার নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ। জাতির পিতার কথা স্মরণ করে তাকে নিয়ে গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারের গানটি ভাঙা বাংলাতেই ধরেন তিনি। এ সময় তালি দিতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকেও।

বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গ এলেই দর্শকরা তুমুল করতালিতে কুর্নিশ জানান সনু নিগমকে। এরপর নিজের বেশ কয়েকটি গান একে একে পরিবেশন করেন তিনি। ‘কাল হো না হো’ গান দিয়ে ঘণ্টা খানেকের পরিবেশনা শেষে বিদায় নেন সনু। এরপর ঢাকা মাতাতে মঞ্চে উঠেছিলেন ভারতের আরেক ‘সিংগিং মায়েস্ত্রো’ কৈলাশ খের। তিনিও প্রায় আধঘণ্টা পারফর্ম করেন।

কিন্তু এসবে কি আর মন ভরে? আসল আকর্ষণ যে তখনো বাকি। রাত সাড়ে ৯টার সময় বলিউড গ্ল্যামার গার্ল ক্যাটরিনা কাইফের মঞ্চে অধিষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি এলেন প্রায় ৪০ মিনিট পর, রাত ১০টা ১০ মিনিটে। পালকিতে চড়ে নীল পরীর বেশে। তার মনোমুগ্ধকর পারফরম্যান্সের পর পা পড়লো আকর্ষণের মূল মানব সালমান খান। তার বিভিন্ন চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় সব গানের তালে মিনিট দশেক নাচলেন সাল্লু।

এরপর প্রথমবার একই মঞ্চে সালমান-ক্যাটরিনার আগমন। দুই মেগাস্টারের আগমনে গগনবিদারি চিৎকারে ফেটে পড়ল পুরো শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। এতক্ষণে যেন টিকিটের পয়সা উসুল হলো সৌভাগ্যবান দর্শকের! এ সময় সাল্লু-ক্যাটের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হলো ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

এরপর মাইক্রোফোন হাতে সালমান ভাঙা-ভাঙা বাংলায় বলেন, ‘আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি, ঢাকাকে ভালোবাসি, (এ দেশের) সবাইকে ভালোবাসি।’ স্টেডিয়ামে উপচে পড়া ভিড় দেখে অবাক সালমান, ‘আমার তো মনে হচ্ছে পুরো ঢাকাই এখানে চলে এসেছে।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও মজার বেশে প্রশংসা করেন বাজরাঙ্গি ভাইজান, ‘টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা (জি)। তিনি নামেই শুধু হাসিনা নন, ভেতর-বাহির পুরোটাই হাসিনা।’ বঙ্গবন্ধুকন্যার দুই নয়ন তার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হয় নির্দ্বিধায় জানান সালমান। এ সময় ভিআইপি বক্সে বসে কনসার্ট উপভোগ করা প্রধানমন্ত্রী লজ্জায় দুই চোখ লুকান!

এমন কৌতুতের মধ্যেও একটা ব্যাপার নিয়ে আক্ষেপ রয়েই গেছে সাল্লু ভাইয়ের। সেটা হলোাÑ দীর্ঘ ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে অনেক বাঙালির সঙ্গে ওঠা-বসা করার পরও তিনি বাংলা শিখতে পারেননি, ‘সিনেজগৎ ও জগতের বাইরে আমি অনেককে চিনি, যারা অনর্গলভাবে বাংলা বলতে পারে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে আমরা বাংলা শিখতে পারিনি। ভাষাটা আমার কাছে কঠিন মনে হয়েছে।’

বিসিবি বস নাজমুল হাসান পাপনকেও ধন্যবাদ জানাতে ভুলেননি ব্লকবাস্টারের সুলতান। তার কথায়, ‘নাজমুল হাসানের জন্যই আজ (কাল) আমরা (তিনি ও ক্যাটরিনা) এই মঞ্চে।’ বিপিএল গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান শেখ সোহেলকে অন্তরের অন্তঃস্তল থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন সাল্লু, ‘আমি তার (সোহেল) নাম কোনোভাবেই ভুলতে পারি না। কারণ তার নামে আমার এক ভাই (সোহেল খান) আছে।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিব এ দেশের জনক। দেশটা তার হাতেই গড়া।’ এ সময় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে তার বাবার সবচেয়ে বড় ভক্ত হিসেবে সম্বোধন করেন ৫৩ বছর বয়সি অভিনেতা, ‘আমার বাবা নজরুলের প্রায় সব কবিতাই পড়েছেন।’

ক্যাটরিনা কাইফও ঢাকার মঞ্চ মাতাতে পেরে ভীষণ উচ্ছ্বসিত। সাবেক প্রেমিক সালমানের সঙ্গে ‘সোহাগ সে কারেঙ্গে সবকা সোয়াগত’ গানের তালে নেচে বিদায় নেন তারা। তার আগে ক্যাটরিনা বলেন, ‘সবকিছুর জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আমরা আবার ফিরব।’ বিদায় বেলায় দুজনের মুখে একসঙ্গে উচ্চারিত হয় ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close