নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

রুম্পা হত্যার ক্লু মেলেনি

প্রেমিক সৈকত আটক বিচার দাবিতে বিক্ষোভ

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা হত্যাকা-ে তার সাবেক প্রেমিক সৈকতকে হেফাজতে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল শনিবার আনুমানিক রাত পৌনে ৯টায় তাকে গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।

ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগ) ওবাইদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, পুলিশ হেফাজতে নেওয়া ব্যক্তির নাম সৈকত। তিনি বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা অফিসে রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদ করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি দক্ষিণ বিভাগ) উপ-কমিশনার (ডিসি) রাজিব আল মাসুদ গণমাধ্যমকে বলেন, তাকে আটক করা হয়নি। রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। রুম্পার সহপাঠী ও স্বজনরা জানিয়েছেন, রুম্পার বয়ফ্রেন্ড সৈকতের কথা। হত্যাকা-ে সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকার বিষয়ে অনেকে সৈকতের দিকে আঙুল তুলছেন।

এদিকে রুম্পা হত্যার বিচার দাবিতে গতকাল শনিবার দিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ ও মানবন্ধন করেছেন স্টাম্পফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা অবিলম্বে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

গত বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে সিদ্ধেশ্বরীর ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচে ওই ছাত্রীর লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরের দিন তার পরিবার এসে রুম্পার লাশ শনাক্ত করেন। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর নিহতের সহপাঠীরা ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধন করে। গতকালও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ধানমন্ডি ও সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, রুম্পা হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। এ হত্যার সঙ্গে জড়িত যারা তাদের যেন দ্রুত আইনের আওতায় আনা হয়। মানববন্ধনে রুম্পার সহপাঠীরা বলেন, আর যেন কোনো রুম্পাকে এভাবে মরতে দেখতে না হয়। এ হত্যাকান্ডের একমাত্র বিচার মৃত্যুদন্ড। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলেই পরে আমরা রক্ষা পাব, না হলে এরকম নির্মম হত্যাকান্ড চলতেই থাকবে।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম মাছুম বলেন, অন্য কোনো ইস্যুতে যেন রুম্পা হত্যাকান্ড ধামাচাপা না পড়ে সেদিকে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, চারদিকে এত হত্যা, খুন-ধর্ষণের ভিড়ে আমরা শুধু স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই, আর কিছু নয়। মানববন্ধন শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ধানমন্ডি ১৯ থেকে ১৫ নম্বর পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কর্মসূচিতে অংশ নেন।

গতকাল মুঠোফোনে রুম্পার বাবা হবিগঞ্জের পুলিশ পরিদর্শক রোকন উদ্দিন বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতেই পারে না। আমি আমার মেয়েকে ভালো করেই চিনতাম। সে আত্মহত্যাকে ঘৃণা করত। সব সময় হাসিখুশি থাকতে পছন্দ করত। মানুষের সঙ্গে খুব মিশত। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে রাজধানীর বেইলি রোড থেকে শারমিনের একটি মুঠোফোন ছিনতাই হয়। এরপর তিনি মেয়েকে বলেছিলেন, রাতে কোনো কাজে বাড়ির বাইরে গেলে মুঠোফোন যেন সঙ্গে না নেন। বুধবার বাড়িতে মুঠোফোন রেখে যাওয়ার এটাই ছিল কারণ। তিনি আফসোস করে বলেন, সারা জীবন ঢাকাতেই চাকরি করেছি। মেয়েকে আমিই দেখে রাখতাম। দুই বছর আগে পদোন্নতি হওয়ার পর প্রথমবার ঢাকার বাইরে যাই। ঢাকায় থাকলে হয়তো মেয়েকে রক্ষা করতে পারতাম। যদি রুম্পা আত্মহত্যা করত, তাহলে নিজের বাসায় থেকেই করতে পারত। বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে করতে হতো না। শুনেছি যে বাড়ির নিচে রুম্পার লাশ পাওয়া গেছে, সেই বাড়িতে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র থাকেন। তারা এখন নাকি পলাতক।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (এসি) এস এম শামীম বলেন, ওখানে ছেলে ও মেয়েদের বেশ কয়েকটি হোস্টেল রয়েছে। তবে দ্বিতীয় তলায় স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি ফ্ল্যাটে তালা মারা অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে অবশ্যই তারা এসে কথা বলে গেছে।

নিহতের পরিবার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, রুম্পাকে হত্যা করা হয়েছে। কে বা কারা কেন রুম্পাকে হত্যা করল তা নিশ্চিত হতে শুধু থানা পুলিশ নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সংস্থা মাঠে রয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম বলেন, অনেক বিষয় সামনে রেখে রুম্পা হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। প্রযুক্তির মাধ্যমেও জানার চেষ্টা চলছে, ওই দিন কার কল পেয়ে রুম্পা সবকিছু বাসায় রেখে বের হয়ে গেল এবং সিদ্ধেশরীতে কেন এলো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close