সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

৫ দিনেও ওসির দেখা পেলেন না ‘ভুক্তভোগী’ নারী

আছিয়া খাতুন। বয়স ৬০ পেরিয়েছে। গ্রামেরই এক ব্যক্তির সঙ্গে তার জমি নিয়ে বিরোধ। এজন্য জেলা আদালতে মামলা করেছেন। তদন্তের ভার পড়েছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার ওপর। এই থানার এক এসআই তদন্ত করেছেন এই মামলার। তদন্ত নিয়ে আপত্তি আছে এই গরিব বৃদ্ধার। সে কথাই জানাতে থানার ওসির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ করা দরকার। এ কাজে ৫ দিন গেছেন থানার বারান্দায়, কিন্তু ওসির টেবিল পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয়নি তাকে। এতে তিনি হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে দাবি। তবে থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন আছিয়া খাতুনের এই কথাগুলো ঠিক না। এর কোনো বাস্তবতা নেই। তিনি এই মালার তদন্ত আইন মাফিক করেছেন। টাকা লেনদেনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

উপজেলার কাঁচপুর কুতুবপুর গ্রামের দেবরের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধে ওসির সহযোগিতা চাইতে এসে আছিয়া খাতুন এ ভোগান্তির শিকার হয়েছে। পর পর ৫ দিন থানার বাইরে বসে থেকে তাকে ফেরত আসতে হয়েছে। থানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কনস্টেবলরা তাকে ভেতরে যেতে বাধা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আছিয়া খাতুনের। গতকাল শনিবারও সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত থানায় ওয়েটিংরুমে ওসির দেখা পাওয়ার অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদের কাছে যান এই ভুক্তভোগী নারী।

ভুক্তভোগী আছিয়া খাতুন জানান, উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নে কুতুবপুর গ্রামের মিয়া চাঁন সরদারের ছেলে নূর হোসেনের সঙ্গে ৮ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। এ বিরোধের জের ধরে তাকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয় প্রতিপক্ষ। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলা করেছেন তিনি। ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনিরকে। ওসি মনিরুজ্জামান এ মামলার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সোনারগাঁ থানার এসআই আমিনুল ইসলামকে দায়িত্ব দেন। আমিনুল ইসলাম দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে আছিয়া খাতুনের কাছ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন ও ডাক্তারি প্রতিবেদনের জন্য টাকা দাবি করেন। আছিয়া খাতুন আমিনুল ইসলামকে ৩ হাজার টাকাও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। জমি সংক্রান্ত মামলা অনেক বড় বলে এই টাকা দাবি করে নেন এস আই আমিনুল ইসলাম।

তিনি আরো জানিয়েছেন, এসআই আমিনুল আসামি ও আসামি নুর হোসেনের এক সঙ্গে হাসাহাসি করে কথা বলতে দেখেছেন। এই বৃদ্ধার দাবি আসামি নূর হোসেনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তার পক্ষ হয়ে আছিয়া খাতুনকে হয়রানি করছেন এসআই আমিনুল ইসলাম।

আছিয়া খাতুন জানান, নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলা করার পর একবার ওসির কাছে দেখা করেছিলেন। ওই সময়েও ওসি সমস্যার তেমন সমাধান দিতে পারেননি। ওসি আদালতে উকিলের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

জানা গেছে, আসামী নূর হোসেন সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল ওমরের সঙ্গে উঠা-বসার কারণে এলাকায় তার দাপট রয়েছে। বর্তমানে বিরোধকৃত জমিতে দোকানঘর ভাঙচুর করে ওই জায়গায় কবুতরের ঘর নির্মাণ করেছে সে। এছাড়াও আছিয়া খাতুনের তিন ছেলেকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এ ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ওসির ধারস্থ হয়েছেন তিনি। পরপর ৫ দিন সোনারগাঁ থানার ওসির সঙ্গে দেখা করতে এলে কনস্টেবলরা বাধা দিয়েছেন।

এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই মহিলার অভিযোগ সত্য নয়। আদালতে তার দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। তাছাড়া তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দেখা করতে হয়েছে।

সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এমন কেউ করে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) খোরশেদ আলম জানান, পুলিশের সেবা পাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close