নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৯

প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কে নেতিবাচক মানসিকতা বদলান : প্রধানমন্ত্রী

স্বাধীন দেশে সব মানুষের বসবাসের সমান অধিকার নিশ্চিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের সমাজটাকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। একটা বৈষম্যহীন সমাজ। কারণ জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কাজেই এই স্বাধীন দেশের সব মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য, আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কে আমাদের নেতিবাচক মানসিকতা বদলাতে হবে। তিনি বলেন, অটিজম নিয়ে আমাদের দেশে কোনো সচেতনতা ছিল না। আজকে সেই অবস্থা নেই। মানুষ এখন যথেষ্ট সচেতন। আমরা সবসময় চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা মানুষের কাছে এই কথাটাই বোঝাতে চাই অটিজম বা প্রতিবন্ধিতা এটা কোনো অসুস্থতাও না, কোনো রোগও না। যে বাবা-মায়ের প্রতিবন্ধী সন্তান হয় তাদের জন্য এটা একটা বিরাট কষ্টকর বিষয়। আমরা জানি। সেটা দূর করার জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে সবচেয়ে যেটা প্রয়োজন আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। আমরা ছোট বেলা থেকে পড়েছি কানাকে কানা বলিও না, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না। এই শিক্ষাটা একেবারে ছোট বেলা থেকে আমাদের স্কুলের যারা ছোট বাচ্চা তাদের শিক্ষা দিতে হবে। কারণ সবাই মানুষ। সবাই একসঙ্গে চলবে। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনে ২৮তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২১তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উদ্যাপন এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স ‘সুবর্ণ ভবন’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দেশের উন্নয়ন। এই উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা প্রতিবন্ধীদের গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তারা যেন কোনো রকম পেছনে পড়ে না থাকে। দেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করে সংসদ ভবনের পাশে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি জায়গা একজন বড় ব্যবসায়ী ও পত্রিকার মালিক তার পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে দাবি করার পর তা উদ্ধারের প্রসঙ্গও টানেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের সংসদ ভবনের সঙ্গে একটা জায়গা আছে। আসলে ওই জায়গাটা ছিল সমাজকল্যাণেরই। ওখানে একটা মূক ও বধির স্কুল ছিল। পরবর্তী সময়ে যখন মিরপুরে এই জায়গাটা করা হয়, তারা ওখান থেকে সরে আসে। সে জায়গাটা খালি পড়েছিল। আমাদের কোনো এক ব্যবসায়ী সে আবার অনেক ইন্ডাস্ট্রির মালিক আবার অনেক পত্রিকারও মালিক। হঠাৎ শুনলাম সে এক দলিল বানিয়ে নিয়ে আসছে। ওই জায়গাটা নাকি তার বাপ-দাদার পৈত্রিক সম্পত্তি। আমি যেহেতু জানি, কারণ ওই মূক ও বধির স্কুলে আমার বাবা ছোট বেলায় আমাদের নিয়ে যেতেন। তাদের স্পোর্টস হতো, আমরা সেখানে যেতাম। সেজন্য আমার জানা আছে। এই জায়গাটা কোনোমতেই কারো ব্যক্তিগত জায়গা না। এটা সমাজকল্যাণের জায়গা।

ওই সময় সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনকে জায়গাটি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, এটা কোনোমতেই তার বাপ-দাদার সম্পত্তি হতে পারে না। তারপরে দেখা গেল ঠিকই তাই। ওই সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে সেই জায়গা সংসদের জায়গা হিসেবে নিয়ে রাখতে বলেছিলেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এখন সেই জায়গাটা আমরা উন্নয়ন করে দিচ্ছি। সেখানে আমাদের প্রতিবন্ধীরা যারা খেলাধুলা করে, তাদের প্র্যাকটিসের জন্য। সেখানে একটা জায়গা করে দিচ্ছি।

প্রথম সরকারে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত স্পেশাল অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের অংশ নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে সময় আমার কাছে এসে বলা হলো আমেরিকায় স্পেশাল অলিম্পিক হবে, ওখানে আমাদের খেলোয়াড়রা যাবে। তার জন্য আমার কাছে যত টাকা চেয়েছিল আমি সব দিয়ে দিয়েছিলাম। আমাদের প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েরা সেই সময় ২১টি স্বর্ণ, সব মিলিয়ে ৭২টি পদক তারা নিয়ে এসেছিল। আমাদের সুস্থ যারা তারাও পারেনি।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। কাজেই এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারে আমাদের প্রতিবন্ধীদেরও যাতে কর্মসংস্থান হয় সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসন, আবাসিক সুবিধা এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে ‘সুবর্ণ ভবন’ নির্মাণ করেছি। সেখানে আমরা ট্রেনিং দিতে পারব। নানা ধরনের খেলাধুলা করতে পারব, চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে সেদিকে লক্ষ্য রেখে এটা তৈরি করা হয়েছে।

সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জুয়েনা আজিজ, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি মো. সাইদুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close