জিয়াউদ্দিন রাজু

  ২০ নভেম্বর, ২০১৯

যুবলীগের গঠনতন্ত্রে সংশোধন আসছে

* চেয়ারম্যান অন্যায় করলে হুশিয়ারি দিতে পারবে সাধারণ সম্পাদক * বদলে যাচ্ছে ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক মানচিত্র

যুবলীগের গঠনতন্ত্রে আসছে সংশোধন। এবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ঢাকার দুই সিটির গেজেট অনুসারেই করা হচ্ছে মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক মানচিত্র। ফলে বদলে যাচ্ছে সংগঠনের ঢাকা মহানগরের (উত্তর ও দক্ষিণ) সাংগঠনিক মানচিত্র। যা আসন্ন সম্মেলনে বাস্তবায়ন করা হবে। জানা গেছে, যুবলীগের গঠনতন্ত্রে সভাপতির একচ্ছত্র ক্ষমতা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাতে সংগঠনের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য থাকে। তবে যুবলীগের গঠনতন্ত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও সংগঠনের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আগে কমিটিতে ২৭ জন থাকলেও এবার তা কমিয়ে ২১ জনের মধ্যে আনার প্রস্তাব দেয়া হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ১৫১ সদস্য রাখা হবে।

এ বিষয়ে যুবলীগের গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান শহীদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান কোনো কাজে অন্যায় করলে এই কাজের জন্য সাধারণ সম্পাদক সরাসরি হুশিয়ারি দিতে পারবে। ঠিক তেমনিই সাধারণ সম্পাদকের বিষয়েও তা প্রযোজ্য। অন্যদিকে চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। দুজনের যুক্তি ও পরামর্শের বৃত্তিতে সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত আসবে। এর ফলে আগামীতে যুবলীগের কমিটিগুলো অনেক শক্তিশালী ও স্বচ্ছ নেতৃত্ব পাবে। শীর্ষ দুই পদের চেক এ বন্ড ব্যালেন্সের ফলে সংগঠনের আগের সুনাম অর্জন করতে পারবে।

এছাড়াও আগে নির্বাচন কমিশনের সীমানা অনুসারে সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সীমানায় কয়েকটি ওয়ার্ড ঠিক ছিল না। কিন্তু এবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গেজেট অনুসারে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সীমানা অনুসারে যুবলীগের সাংগঠনিক সীমানা নির্ধারণ করা হচ্ছে। সে হিসাবে হাজারীবাগ থানার কিছু অংশ উত্তরে ছিল কিন্তু তাকে দক্ষিণে নিয়ে আসা হচ্ছে। এছাড়া রামপুরা থানার কিছু অংশ দক্ষিণে থাকলেও এবার তা উত্তরে চলে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে সাইদুর রহমান শহীদ বলেন, মহানগরের ক্ষেত্রে সীমানা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। যা মহানগরের দুই ইউনিটের সম্মেলনের সময়ে বাস্তবায়ন করা হবে।

যুবলীগ সূত্র জানিয়েছে, সংগঠনের নেতাদের নির্ধারিত বয়সসীমা ৫৫ গঠনতন্ত্রে নিয়ে আসা হবে। দলীয় প্রধানের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এ বিষয়টি আসন্ন জাতীয় সম্মেলনেই চূড়ান্ত করা হবে। যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে বয়সসীমা ৫৫ বছর বেঁধে দেয়া হয়। যা চলতি মাসে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে উত্থাপন করা হবে। উল্লেখ্য, এর আগে যুবলীগের গঠনতন্ত্রে বয়সসীমার বিষয়টি ছিল না।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের অব্যাহতি পাওয়া চেয়ারম্যান সংগঠনে অধিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেছিলেন। এর ফলে সংগঠনের গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যুবলীগের গঠনতন্ত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ক্ষমতায় ভারসাম্য যাতে ঠিক থাকে। যার জন্য যুবলীগের আসন্ন সম্মেলনে নেতৃত্ব বাছাইয়ে কড়াকড়ি আনা হয়েছে, ক্লিন ইমেজের নেতৃত্বের সঙ্গে সংগঠনে দুর্দিনের নেতাদের নেতৃত্বে আসার মধ্য দিয়েই যুবলীগকে আবার সুনামে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে যুবলীগের গঠনতন্ত্রও ভলোভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাতে কোনে অসঙ্গতি পাওয়া গেলে তা সংশোধন করা যায়।

অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ ৭ বছর সংগঠনে এককভাবে চালিয়েছেন যুবলীগের অব্যাহতি পাওয়া চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। যুবলীগে তার কথাই ছিল শেষ কথা। স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে প্রায় ৭ বছর ধরে যুবলীগের কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিলেন ওমর ফারুক। কার্যনির্বাহী বা সভাপতিমন্ডলীর বৈঠকও হতো তার খেয়ালখুশি মতো। তার ক্ষমতার এমন একক প্রয়োগের কারণেই সংগঠনের গঠনতন্ত্রের প্রতিটি লাইন খুঁজে দেখা হয়েছে।

তবে গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান শহীদ বলেন, সংগঠনে সভাপতিকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া নেই। আমাদের গঠনতন্ত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং কার্যনির্বাহী কমিটির প্রত্যেকের মধ্যে ক্ষমতার সুন্দর একটি ভারসাম্য তৈরি করা আছে। তবে অব্যাহতি পাওয়া চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের একক আধিপত্বের জন্য সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদকে দায়ী করেন তিনি। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল চেয়ারম্যানের কোনো ভুল বা একক অন্যায় সিদ্ধান্তকে বন্ধ বা প্রতিবাদ করা। কিন্তু হারুনুর রশিদ দায়িত্বহীনতা ও অনিয়তন্ত্র এবং অযোগ্য বলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেতে পারেনি। যার ফলে সংগঠন প্রশ্নবৃদ্ধ হয়েছে।

যুবলীগের গঠনতন্ত্রে (২৫ এর চ) ধারায় বলা আছে, সংগঠনের একই স্তরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যেকানো পদে ২ বার অথবা উভয় পদে ১ বার করে মোট ২ বার দায়িত্ব পালনের পর কোন ব্যাক্তি ৩য় মেয়াদের জন্য ঐ স্তরের কোন পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে ২ বার দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিকে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের চেয়ারম্যান বিশেষ বিবেচনায় তৃতীয় মেয়াদে প্রার্থী হওয়ার অনুমতি প্রদান করতে পারেন। তবে যুবলীগ সূত্র জানিয়েছে, এটা এবার পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, এই ক্ষমতা সংগঠনের সভাপতির সঙ্গে সাধারণ সম্পাদককে অংশীদার করা হচ্ছে।

১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় যুবলীগ। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছয়টি জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনটির সবশেষ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। চলতি মাসের ২৩ নভেম্বর সংগঠনের ৭ম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close