আদালত প্রতিবেদক

  ১৯ নভেম্বর, ২০১৯

মোরশেদ খানের হংকংয়ের ব্যাংক হিসাব বাজেয়াপ্ত করতে ‘বাধা নেই’

সাবেক বিএনপি নেতা এম মোরশেদ খান, তার স্ত্রী ও ছেলের নামে হংকংয়ের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের হিসাব বাজেয়াপ্ত করতে নিম্ন আদালতের দেওয়া আদেশ বহাল রেখে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। নিম্ন আদালতের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে এম মোরশেদ খান ও তার পরিবারের সদস্যদের করা আবেদন বাতিল করে সোমবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ আদেশের ফলে হংকংয়ের ব্যাংকে তাদের নামে থাকা টাকা বাজেয়াপ্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনতে আইনগত বাধা থাকছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আদালতে মোরশেদ খানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ও ফজলে নূর তাপস। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পি।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান, তার স্ত্রী ও ছেলে ফয়সাল মোরশেদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করে দুদক।

হংকংয়ের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে প্রায় ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৬২ হাজার মার্কিন ডলার এবং ১ কোটি ৩৬ লাখ ৪৫ হাজার হংকং ডলার তারা পাচার করেছেন বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় দুদক। সেখানে বলা হয়, অর্থ পাচারের কোনো তথ্য-প্রমাণ তাদের তদন্তে পাওয়া যায়নি।

ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন ২০১৬ সালে ১৫ এপ্রিল নিম্ন আদালত গ্রহণ করলে মোর্শেদ খানসহ অন্যরা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান। সেই সঙ্গে মোরশেদ খানসহ তিনজনের জব্দ থাকা অ্যাকাউন্টও খুলে দেওয়া হয়।

আদালতের অব্যাহতির আদেশের পর ঢাকার বিশেষ আদালতে দুদকের পক্ষ থেকে নারাজি আবেদন করা হলে সেটি খারিজ হয়ে যায়। বিচারিক আদালতের ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে দুদক হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করে।

সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ৫ জুন মোর্শেদ খানসহ তিনজনের হংকংয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখার নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করে। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ওই বছর ৯ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। সেখানে মামলাটিতে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন মোরশেদ খান, তার স্ত্রী ও ছেলে। কিন্তু গত বছর ৮ মার্চ আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশটিই বহাল রাখে। এরপর অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্ত চালিয়ে যায় দুদক।

খুরশীদ আলম খান বলেন, তদন্তের এক পর্যায়ে গত সেপ্টেম্বরে হংকংয়ের আদালত থেকে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্সের মাধ্যমে দুদকে একটি চিঠি আসে। সেখানে বলা হয়, হংকং স্ট্যান্ডর্ড চার্টার্ড ব্যাংক ১৫ অক্টোবরের পরে আর অ্যাকাউন্ট জব্দ রাখতে পারবে না। আমাদের দেশের কোনো আদালতের আদেশ না থাকলে তারা টাকাটা ছেড়ে দেবে। এরপর হংকং আদালতের বক্তব্য তুলে ধরে অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৭(২) ধারা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে দরখাস্ত করে টাকাটা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আবেদন করা হয়। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত আমাদের কথা শুনে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পি বলেন, নিম্ন আদালতের ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে গত অক্টোবরে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন মোরশেদ খান, তার স্ত্রী ও ছেলে। তারা চেয়েছিলেন জব্দ অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হোক। কিন্তু আদালত তাদের আবেদনটি বাতিল করে দেয়। ফলে হংকংয়ের আদালতে টাকাটা জব্দই থাকছে।

জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী বলেন, বিদেশের ব্যাংকে থাকা টাকা বাজেয়াপ্ত করার কিছু নিয়ম বা ধাপ আছে। এ বিষয়ে একটি গেজেট হতে যাচ্ছে। গেজেটটি প্রকাশ হলে সেটি আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে পাঠানো হবে। আইন ও বিচার বিভাগ সেটা হংকংয়ের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং পুলিশের কাছে পাঠাবে। হংকং পুলিশ এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স অ্যাক্ট অনুযায়ী টাকাগুলো আমাদের পাঠিয়ে দেবে। এরপর রাষ্ট্রের অনুকূলে তা বাজেয়াপ্ত হবে। এর জন্য সময় লাগবে। এক্ষেত্রে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের কী ভূমিকা জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী বলেন, মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স অ্যাক্ট অনুযায়ী বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে। কিন্তু যখন এই মামলা হয়েছিল তখন এটা ছিল অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের এখতিয়ারে।

পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার পর একটা প্রজ্ঞাপন হয়েছে যে, পেন্ডিং মেটারে অর্থাৎ সেন্ট্রাল অথরিটি থাকা অবস্থায় মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স অ্যাক্টে যেসব মামলা হয়েছিল সেগুলোতে অ্যাটর্নি জেনারেল সেন্ট্রাল অথরিটি হিসেবে কাজ করবেন। সেই হিসাবে তিনি সেন্ট্রাল অথরিটি হিসেবে এসেছেন এই মামলায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close