নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ নভেম্বর, ২০১৯

শরিক দলে ভাঙন : সংকটে ঐক্যফ্রন্ট

ঘরে-বাইরে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। তার নিজের দল গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুসহ কয়েকজন দল ছেড়ে গেছেন। বিএনপি নেতাদের অনেকেও তাকে আর মানতে চাইছেন না। এ পরিস্থিতিতে দারুণ বেকায়দায় পড়েছেন ড. কামাল হোসেন। ভাঙা-গড়ার চাপে আছে বিএনপিসহ শরিক দলগুলোও। সব মিলিয়ে ঐক্যফ্রন্টেও বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘যার সঙ্গে আমার আদর্শিক বিপরীত, যিনি বেগম খালেদা জিয়াকে ওন করেন না, যিনি বিএনপির রাজনীতি ওন করেন না, যিনি জিয়াউর রহমানকে ওন করেন না। তাকে সামনে রেখে পথ চললে সেই পথ অতিক্রম করা সম্ভব?Ñ এটা আমি মনে করি না।’

তিনি বলেন, ‘উনাকে বিএনপি করতে হবে, তা নয়। কিন্তু উনি কোথাও বক্তব্য দিলে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা মনে করিয়ে দিতে হয়। তার পরও কখনো বলেন, কখনো বলেন না। আসলে উনি তো খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ফ্রন্ট করেননি, উনি এজেন্ডা নিয়ে এসেছিলেন বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে। সেটাতে উনি সফল হয়েছেন। ফলে এখন বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী তার সঙ্গে পথ চলতে চান না।’

অবশ্য ঐক্যফ্রন্টের আরেক শীর্ষ নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জোটে কখনো এমন পরিস্থিতি হয়। তার অর্থ এই নয় যে, জোট ভেঙে গেছে। আসলে ড. কামাল হোসেন, আ স ম রব নিজেদের দল নিয়েই সংকটে পড়েছেন। এখন যদি বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন, তাহলে তো মুশকিল। আসলে ফ্রন্টকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সফল যে হয়েছি, তা বলব না, তবে চেষ্টা চলছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোতে ভাঙা-গড়া হয় সরকারের চাপে বা লোভে পড়ে। আবার শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে অবমূল্যায়নসহ নানা কারণেও দলগুলো ভাঙে। ঐক্যফ্রন্টের যেসব দল ভাঙছে, সেগুলো এসব কারণে হতে পারে বলে আমার মনে হয়।

এদিকে, ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলে হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান আর লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতি থেকে অবসর নেন। প্রবীণ দুই নেতার পদত্যাগে বেশখানিকটা বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি।

অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক আ স ম রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন দল থেকে বেরিয়ে কনভেনশন ডেকেছেন ১১ জানুয়ারি। তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ, প্রগতিশীলতা ও জাতীয় স্বার্থের পক্ষে তাদের অবস্থান থাকবে।

আবার বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক এলডিপি থেকে বেরিয়ে চার নেতা যোগ দিয়েছেন বিএনপিতে। জাতীয় মুক্তিমঞ্চ ইস্যুতে মতবিরোধকে কেন্দ্র করে তারা এলডিপি ছাড়েন। তারা হলেন জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও সাবেক এমপি আবদুল করিম আব্বাসী, সাবেক এমপি আবদুল্লাহ, আরেক সাবেক এমপি আবদুল গণি ও দলটির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। খুব সহসাই তারা বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন। অবশ্য তারা একসময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেই ছিলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রাজনীতি করতে গেলে এ ধরনের সংকটে পড়তে হবেÑ সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গণতন্ত্রের ইস্যুতে, বাক স্বাধীনতার ইস্যুতে সবাই কিন্তু এক পথেই হাঁটছে। আমাদের সঙ্গে জোটে নেই বাম দলগুলো। কিন্তু তারাও তো আছে, আন্দোলন করছে। ইস্যু কিন্তু এক। ফলে এসব সংকটের মধ্য দিয়েই একসময় আসল পথ বেরিয়ে আসে। তখন কি কেউ ভেবেছিলেন এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন? কিন্তু তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। ফলে কাকে কখন সরে যেতে হবে, কেউ বলতে পারে না। জনগণের বিজয় এক দিন হবেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close