নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ নভেম্বর, ২০১৯

দু-এক দিনে বিমানে পেঁয়াজ এসে পৌঁছাবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে বিমানে পেঁয়াজ এসে পৌঁছাবে। তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির এ সমস্যা যাতে না থাকে; সে লক্ষ্যে কার্গো ভাড়া করে আমরা পেঁয়াজ আনা শুরু করেছি। আগামীকাল-পরশুর মধ্যেই বিমানের পেঁয়াজ এসে পৌঁছাবে।’

প্রধানমন্ত্রী গতকাল শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃতীয় ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র থাকলে সরকার তা খতিয়ে দেখবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজ নিয়ে যে সমস্যাটা দেখা দিয়েছে, সব দেশেই এর মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের দেশে কী কারণে এত লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে, জানি না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই যে, এই ধরনের চক্রান্তের সঙ্গে কেউ জড়িত রয়েছে কি না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি এখন পেঁয়াজ মজুদ করে দাম বাড়িয়ে দুই টাকা কামাতে চান, তাদের এটাও চিন্তা করতে হবে, পেঁয়াজ তো পচেও যাবে। সেই পচা পেঁয়াজও এখন শুকানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে মানুষকে কষ্ট দেওয়াটা কেন?’ তিনি ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত লিপ্ত একটি স্বার্থান্বেষী মহলের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘মানুষ যখন ভালো থাকে, সুস্থ থাকে। তখন একটি শ্রেণি আছে তারা মনোকষ্টে ভোগে, অসুস্থতায় ভোগে। তাদের এই রোগ কীভাবে সারানো যায়, সেটা জনগণই বিবেচনা করবে, তারা দেখবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতই আমরা এগিয়ে যাই এবং মানুষ যত ভালো থাকে। একটা না একটা ইস্যু তৈরি করার এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার একটা চেষ্টা করা হয়। কাজেই এর পেছনে মূল কারণটা কী, সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।’

আওয়ামী লীগের সহযোগী এই সংগঠনটির সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নির্মল গুহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠসিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী মেজবাহুল হোসেন সাচ্চু বক্তৃতা করেন। সংগঠনের সহসভাপতি এবং সম্মেলন অভ্যর্থনা উপকমিটির আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি স্বাগত বক্তৃতা করেন।

এর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

বক্তৃতা পর্বের শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের দফতর সম্পাদক সালেহ মো. টুটুল। এরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদ, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় শহীদ এবং দেশের সব গণ-আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্ব শেষে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় পর্বে সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব ঠিক করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী পেঁয়াজ সম্পর্কে আরো বলেন, ভারতেও এখন পেঁয়াজের মূল্য অনেক। প্রায় ১০০ রুপি কেজি দরে সেখানে তারা পেঁয়াজ কিনছে। শুধু একটা রাজ্যে দাম কম। তবে সেখানকার পেঁয়াজ বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। সার্বিকভাবে সবখানেই পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেখান থেকে আমরা পেঁয়াজ কিনছি। সেখান থেকেও বেশি দামেই আমাদের কিনতে হচ্ছে।’

সরকারের ধারবাহিকতা এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকায় তার সরকার বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের সুফল তৃণমূল পর্যায়ের প্রতি ঘরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশবিরোধী স্বার্থান্বেষী মহলের বিভিন্ন অপপ্রচার সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করে দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশ দারিদ্র্যমুক্ত হলে এই দারিদ্র্য বিক্রি করে যারা চলত তাদের আঁতে ঘা লাগে। কাজেই তারা বারবারই এতে একটা বাগড়া দেওয়ার এবং অপপ্রচার চালাবার চেষ্টা করে। কেউ যেন এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হন।’ তিনি বলেন, ‘সরকার গঠনের পর থেকে আওয়ামী লীগ জনগণকে যে সেবাটা দিচ্ছে, তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে এবং মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে। সেসঙ্গে উন্নয়নের গতিধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে।’ তিনি এ সময় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতিবিরোধী সরকারের কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা এই দেশ থেকে মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি দূর করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘এর বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে, তা আমরা অব্যাহত রাখব। কারণ বাংলাদেশের মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আর একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেই উন্নতিটা সম্ভব।’

দুর্নীতি করে টাকা কেন বানাতে হবে, সেই প্রশ্ন উত্থাপন করে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, চাঁদাবাজি, দুর্নীতির মাধ্যমে অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে সেটা দিয়ে আবার বিলাস-ব্যসনে জীবনযাপন করা, আর ওটা দিয়ে ফুটানি-ফাটানি করা; এটা কখনো এ দেশের মানুষ বরদাশত করবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অসৎ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ার থেকে সৎপথে নুন ভাত খাওয়া অনেক সম্মানের, অনেক মর্যাদার এবং অনেক ভালো। এটাই হলো বাস্তবতা।’ তিনি এ সময় উদাহরণ দেন বিএনপি দুর্নীতি করে এত টাকা কামিয়েছিল যে, জয়কে (তার ছেলে এবং তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়) আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে এফবিআইয়ের একজন এজেন্টকে পর্যন্ত তারা কিনে ফেলে এবং তারা তার (শেখ হাসিনার) পরিবারের অর্থ-সম্পদ বিষয়ে খোঁজখবর করাও শুরু করে। সেই তদন্ত করতে গিয়ে বের হয়ে এলো খালেদা জিয়া এবং তার দুই ছেলের দুর্নীতির তথ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এফবিআইয়ের তদন্তেই বের হলো একমাত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তার ছেলে এবং বোন শেখ রেহানা তাদের বিষয়ে কোথাও কোনো রকম কমিশন খাওয়া, চাঁদা খাওয়া বা দুর্নীতির কোনো দৃষ্টান্ত তারা পায়নি।’ এমনকি এ সম্পর্কিত আমেরিকার সংশ্লিষ্ট আদালতের মামলায় এ ঘটনায় সম্পৃক্ত অভিযোগে বিএনপির দুই নেতার নাম পর্যন্ত চলে এসেছিল, বলেন তিনি।

বিএনপিকে খুনি, দুর্নীতিবাজ, মানি লন্ডারিংকারীদের দল আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এরা আর কোনো দিন যেন বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে; সে বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণকে সচেতন করতে হবে।’

তিনি বলেন, গ্রামের প্রত্যেকের বাড়িকে এক একটি কৃষি খামার হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের প্রি-প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ এবং প্রাইমারি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ২ কোটি ৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদানের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের সাক্ষরতার হার এখন ৭৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’

সারা দেশে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান এবং টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার রোধ, পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা এবং পুষ্টিকর খাবারের প্রতি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সরকারের সাফল্যও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি অঞ্চলে নারী-পুরুষ সমানভাবে উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। কারণ আওয়ামী লীগ যে নীতিমালা নিয়েছে, ৭ গুণ বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে যে অর্থনীতি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, তাতে সমগ্র দেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে।’

জাতির পিতা যে লক্ষ্য নিয়ে এক দিন এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন; সেই স্বাধীনতার সুফলকে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ঘরে পৌঁছে দেওয়াই তার এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লক্ষ্য বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close