জিয়াউদ্দিন রাজু

  ১৩ নভেম্বর, ২০১৯

যুবলীগের নতুন নেতৃত্বেই হবে দুই মহানগর সম্মেলন

ঢাকা উত্তর-দক্ষিণে আলোচনায় যারা

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম শক্তিশালী সহযোগী সংগঠন যুবলীগের জাতীয় সম্মেলনের তারিখ আগামী ২৩ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় যুবলীগের শক্তিশালী খুঁটি হিসেবে অভিহিত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ এখনো ঘোষিত হয়নি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে যে নতুন নেতৃত্ব আসবে, তারাই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ দিনক্ষণ নির্ধারণ করবেন।

এদিকে তারিখ ঘোষণা না হলেও থেমে নেই এ দুই ইউনিটের পদপ্রত্যাশীদের লবিং ও প্রতিযোগিতা। সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরের উভয় অংশেই যুবলীগের শীর্ষপদ পেতে প্রায় ডজনখানেক নেতাকর্মী দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বর্তমান কমিটির অনেকেই নিজেদের পদ-পদবি বাড়ানো বা শীর্ষ পদ পেতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছেন। কেউ দক্ষিণ সিটি থেকে উত্তরের রাজনীতি করছেন, এমন অভিযোগে তারা দুই সিটির সাংগঠনিক সীমানা নির্ধারণ করতে চান। যেসব নেতাদের নামে দুর্নীতি, জমি দখল ও ক্যাসিনোকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, তাদের গ্রেফতারের দাবিও জানিয়েছেন অনেকে।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় এবং দলটির সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন না হওয়ায় নেতাকর্মীদের কেউ কেউ দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। এই নীতির অংশ হিসেবে যুবলীগসহ সব সহযোগী সংগঠনে ক্লিন ইমেজের দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ নতুন নেতৃত্ব খোঁজা হচ্ছে। এসব সংগঠনকে নেতিবাচক ধারা থেকে বের করে ইতিবাচক ধারায় ফেরাতে চান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তাই একদিকে চলছে শুদ্ধি অভিযান অন্যদিকে নতুন নেতৃত্বের খোঁজ। এ ব্যাপারে রাজনীতিতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী নিজেই। এ নিয়ে শুধু রাজনীতিবিদই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতূহলের শেষ নেই। সবার দৃষ্টি এখন সংগঠনটির এই ক্রান্তিকালে কারা আসছেন নেতৃত্বে, তার দিকে।

নেতৃত্বের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, দলের সহযোগী সংগঠনের সব ইউনিটের কাউন্সিলে পরিচ্ছন্ন ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিই স্থান পাবেন। তবে কোনো বিতর্কিত, দুর্নীতিতে জড়িত ও চাঁদাবাজদের স্থান দেওয়া হবে না।

সে ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগে শীর্ষ নেতৃত্বে আলোচনার রয়েছেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সেলিম, উপ-দফতর সম্পাদক এ এইচ এম কামরুজ্জামান কামরুল ও প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসভীরুল হক অনুর নাম শোনা যাচ্ছে।

মো. ইসমাইল হোসেন : উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ইসমাইল হোসেন আগামী সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে। বর্তমান নেতৃত্বের ফলে তিনি আগামীতে সভাপতি হতে পারেন বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে রাজনীতিতে তিনি রাজপথের নেতৃত্ব দিয়েছেন। উল্লেখ্য, উত্তরে যুবলীগের সভাপতি মইনুল হোসেন খান নিখিল এর আগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে যুবলীগের বয়সসীমা ৫৫ বছর করার কারণে তিনি বাদ পড়ে যাচ্ছেন। ফলে উত্তর যুবলীগের মাঠে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ইসমাইল হোসেন এককভাবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন।

শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সেলিম : এক-এগারোর সময় শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনে রাজপথের সৈনিক উত্তর যুবলীগের শীর্ষপদে আলোচনায় রয়েছেন শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সেলিম। তৃণমূল থেকে ওঠে আসা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম এর আগে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৯৪ সালে স্কুল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে কলেজ ছাত্রলীগ, থানা ছাত্রলীগ, জেলা ছাত্রলীগ এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি সামাজিক সংগঠন হিসেবে তিনি ঢাকাস্থ দাগনভূঞা সমিতির ১৩ বছর সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে ঢাকাস্থ ফেনী জেলা সমিতির ভোটে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী পরিবার থেকে আসা এ নেতা মহানগর উত্তর যুবলীগের শীর্ষ পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন।

কামরুজ্জামান কামরুল : ঢাকা মহানগর উত্তরে ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে পরিচিত উত্তর যুবলীগের বর্তমান কমিটির উপ-দফতর সম্পাদক এ এইচ এম কামরুজ্জাম কামরুলের নাম শীর্ষপদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন। দলের দুঃসময়ে ওয়ার্ড ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে শুরু করা কামরুজ্জামান সাবেক ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক দফতর সম্পাদক ছিলেন। আওয়ামী পরিবারের থেকে আসা এ নেতার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সাংগঠনিক অভিযোগ নেই। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের নেতাকর্মীদের কাছে তিনি জনপ্রিয়। সম্মেলনে শীর্ষ পদে কামরুজ্জামন কামরুলের নাম কর্মীদের কাছে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

তিনি খালেদা জিয়ার দুই শাসনামলে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ২০০১ সালে বিরোধী দলের রাজনীতিতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে রাসেল স্কয়ারে নির্যাতনের শিকার হন। ২০০৪ সালের ২১ গ্রেনেন্ড হামলার সময়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ছাত্রলীগের মিছিল নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

তাসভীরুল হক অনু : ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের বর্তমান প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসভীরুল হক অনুর নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি ২০০২ থেকে ২০১০ ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে অনুর নিজ বাসভবন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে হওয়ায় মহানগর উত্তর যুবলীগের রাজনীতে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে।

অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের আলোচনায় রয়েছে বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা। দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি সম্রাট গ্রেফতারের পরে তাকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি মহানগর দক্ষিণের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।

আলোচনায় রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ দায়িত্ব পালন করছেন। আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি আহম্মেদ উল্লাহ মধু। তিনি মহানগর দক্ষিণের শীর্ষ নেতৃত্বে আলোচনায় রয়েছেন।

এছাড়াও মহানগর দক্ষিণে শীর্ষ নেতৃত্বে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির দফতর সম্পাদক এমদাদুল হক এমদাদ। তিনি আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ যুবলীগের সহ-প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২১ গ্রেনেড হামলার সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে জয় মার্কেটের সামনে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও মহাণগর দক্ষিণ যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির উপ-দফতর সম্পাদক খন্দকার আরিফুজ্জামান আরিফ। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। ছাত্র রাজনীতি করাকালে তিনি কর্মীবান্ধব বলে সুপরিচিত ছিলেন। ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন বলে আলোচনায় রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close