নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১০ নভেম্বর, ২০১৯

শ্রমিক লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার প্রেক্ষাপটে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কঠোর হুশিয়ার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, উসকানি দিয়ে ছাত্রদের বিপথে নেওয়া, আর এখানে মুখরোচক কথা বলা, এটা কখনো কেউ মেনে নিতে পারেন না। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উসকানি দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে উচ্চশিক্ষার এসব প্রতিষ্ঠান সরকারি অর্থে পরিচালিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার বিকালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় শ্রমিক লীগের ১৩তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী

শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে স্বল্প ব্যয়ে উচ্চশিক্ষার যে সুযোগ সরকার দিচ্ছে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন। সরকারপ্রধান বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন আছে এ কথা সত্যি; কিন্তু টাকাটা তো সরকার দিচ্ছে। সরকারের দেওয়া টাকা ইউজিসিতে (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) যায়, সেখান থেকে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয় এবং শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, যা কিছু তারা পাচ্ছেন তা দেওয়া হয়। বিশ্বের আর কোথাও বাংলাদেশের মতো এত স্বল্প খরচে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া শিক্ষার্থীর মাসে শিক্ষা ব্যয় ১৫০ টাকার বেশি হয় না। যদি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যান, তবে দেখবেন কত লাখ টাকা লাগে প্রতি সেমিস্টারে। প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয় এক একজন শিক্ষার্থীর পেছনে। প্রকৌশল বা কারিগরি শিক্ষায় আরো বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। কাজেই সেখানে শৃঙ্খলা থাকতে হবে।

আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় শিক্ষাব্যয়ের জোগান সরকারকেই দিতে হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে ডিসিপ্লিন থাকবে, শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত শিক্ষা পাবেন এবং নিজেদের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবেন সেটাই আমরা চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে প্রশ্ন তুলেছেনÑ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কী আমরা তা বুঝি না। যারা পড়াশোনা নষ্ট করে সেখানে ধর্মঘট করে দিনের পর দিন কর্মঘণ্টা নষ্ট করবেন। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ব্যাহত করবেন, তারাই সব বুঝবেন, আর আমরা বুঝব না, এটাতো হয় না।

সরকারপ্রধান আরো বলেন, অর্থ সরকার দেবে। সবরকম উন্নয়ন প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করবে। আর সেখানে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না, এটাও হতে পারে না। কথায় বলে ‘স্বাধীনতা ভালো কিন্তু তাহা বালকের জন্য নহে।’ এটাও মাথায় রাখতে হবে। দাবি মেনে নেওয়ার পরও ক্ষেত্র বিশেষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া এবং শিক্ষার সময় যেন নষ্ট না হয়। উপযুক্ত সময়ে তারা ভালো রেজাল্ট করবেন এবং তারা জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবেন, সেটাই আমরা চাই।

তিনি বলেন, দেশের আইনে আছে, কেউ যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন এবং সেটা যদি প্রমাণিত না হয়, তবে অভিযোগকারীর ওই আইনে বিচার হয়, সাজা হয়। কাজেই যারা কথা বলছেন তারা আইনগুলো ভালোভাবে দেখে নেবেন। আমরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম এবং পড়াশোনা করেই এতদূর এসেছি। এটাও ভুলে গেলে চলবে না। যে দেশে ’৭৫ এর পরে প্রতি রাতে ক্যু হতো। যেখানে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চলত সেই দেশ বিগত প্রায় এক দশকে অনেক দূর এগিয়েছে। আজকে যারা বড় বড় কথা বলেন, তাদের কোনো দিন ওই সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনিনি বরং তাদের পদলেহন করতেই দেখেছি, এটা হলো বাস্তবতা। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩ ভাগে আমরা উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিÑ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি এবং শতভাগ শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শিখছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শ্রম এবং কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান এবং আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর তুয়োমো পটিয়াইনেন, আন্তর্জাতিক টেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন এশিয়া প্যাসিফিকের (আইটিইউসি-এপি) সাধারণ সম্পাদক শোভা ইওশিদা এবং দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ট্রেড ইউনিয়ন কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক লক্ষণ বাহাদুর বাসনেতও বক্তব্য দেন।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় শ্রমিক লীগ সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ। দলের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এবং সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close