নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ নভেম্বর, ২০১৯

নির্দিষ্ট ঠিকাদার যেন বারবার কাজ না পায় : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দিষ্ট ঠিকাদার যেন বারবার প্রকল্পের কাজ না পায় সেই বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, নতুনদের কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে অথচ লোকবলের কারণে বা অন্য কারণে অপারেশন করা হচ্ছে নাÑ এমন প্রকল্প চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলনকক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দিয়েছেন। এদিন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণসহ ৬ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পগুলোর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪ হাজার ৪৩৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা খরচ করা হবে। সভাশেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

এদিকে একই দিন ১৫তম আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্রবিমা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু মুনাফা নয়, সেবার মনোভাব দেখাতে হবে বিমা মালিকদের।

রাজধানীর প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিমা শিল্পের প্রতি এখনো অনেক মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। অনেক সময় অনেকে প্রতারিত হয়েছে। এ শিল্পের প্রতি অনেকের অভিযোগও রয়েছে। এ কারণে অনেক সময় গ্রাহকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। শুধু মুনাফা নয়, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। এখন বিমা শিল্পে লেনদেনে বেশকিছু স্বচ্ছতা আনা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ প্রাকৃতিক ঝুঁকিপ্রবণ একটি দেশ। এ দেশের গরিব মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় সাধারণ মানুষের বিমার আওতায় এনে বীমা-মালিকরা তাদের সেবারের হাত প্রশস্ত করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে এলে বিমার গ্রাহক সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। এদেশের মানুষের জীবনমান যেন উন্নত হয় সেজন্য আমরা ডেল্টাপ্ল্যান গ্রহণ করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে এ দেশের মানুষ যেন উন্নত জীবন পায়, সে লক্ষ্য মাথায় রেখে কাজ করছি।

বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী ১৫তম আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্রবিমা সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, অধ্যাপক রুবিনা হামিদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুনদের কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। গ্রামীণ ছোট নদীতে ক্যাবল স্ট্রেনথ ব্রিজ করতে হবে। যাতে নদীতে বেশি পিলার না লাগে এবং নাব্য বাধাপ্রাপ্ত না হয়। ব্রিজ এমনভাবে করতে হবে যাতে নিচ দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারে। প্রয়োজনে যত্রতত্র ব্রিজ করা যাবে না। অতিরিক্ত আঁকাবাঁকা নদী লুব কাটিং করে সোজা করতে হবে। এছাড়া, এখন থেকে নতুন রাস্তা করার চেয়ে বিদ্যমান রাস্তাগুলো চার লেন এবং প্রশস্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী আবারো যথা সময়ে কাজ শেষ করার কথা বলেছেন। পছন্দের মানুষকে কাজ পাইয়ে দিতে কায়দা করে টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি না করারও নির্দেশও দিয়েছেন।

এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সম্পর্কে আরো জানান, প্রায়ই আগ্রহ নিয়ে প্রকল্প পাস করা হয়, দালানকোঠা নির্মাণ করা হয়। তারপরে আর বাকি কাজ হয় না। জনবল নাই, নয় যন্ত্রবল নেই। উনি বলেন, যে আগ্রহ নিয়ে আপনারা প্রকল্পের কাজ শুরু করেন, একই আগ্রহ নিয়ে আপনারা দয়া করে বাকি কাজগুলো করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার সঙ্গে একমত জানিয়ে পরিবল্পনামন্ত্রী বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ। এটার সঙ্গে আমি শতভাগ একমত। আমার নিজ এলাকায় এ রকম কয়েকটি স্থাপনা আছে। তড়িঘড়ি করে স্থাপনা করা হয়, তারপরে আর কাজ হয় না।

রূপপুর প্রকল্পটি সম্পর্কে মন্ত্রী জানান, নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য ডিজাইন বেসিস থ্রেট (ডিবিটি) এবং এর বাইরের হুমকি মোকাবিলা করা হবে। সেই সঙ্গে কম্পিউটার বা সাইবার নিরাপত্তা এবং সংবেদনশীল তথ্যের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।

সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা অংশ নেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আর ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গীস এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close