পীরগঞ্জ প্রতিনিধি
পীরগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ৩৩, ক্লোজড ৫ পুলিশ
হাজতে আসামির মৃত্যু
রংপুরের পীরগঞ্জে ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের হাজতখানায় আসামির রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও এলাকাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিক্ষুব্ধ জনতা তদন্ত কেন্দ্রটি ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৩৩ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়লে ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়। অপরদিকে জনতার ইটপাটকেলের আঘাতে ৮ পুলিশ আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার সময় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় তদন্ত কেন্দ্রটির ইনচার্জ (আইসি) আমিনুল ইসলামসহ ৫ পুলিশকে ক্লোজড করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রংপুরের পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ, এলাকাবাসী এবং ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জের ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি পীরগঞ্জে ৫টি ইউনিয়নের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তদন্ত কেন্দ্রটির ইনচার্জ (আইসি) আমিনুল ইসলাম যোগদানের পর থেকেই তিনি আটক বাণিজ্য শুরু করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়াও নানা হয়রানি করে ওই আইসি সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিলেন। তার (আইসি) ওই অনৈতিক কাজের জন্য রংপুর সদরের পাগলাপীরের সোর্স জিয়াউর রহমানসহ ওই এলাকার বেশ কয়েকজনকে মৌখিকভাবে সোর্স নিয়োগ করে।
তাদের দ্বারাই এলাকাবাসীকে হয়রানি করে আসছে বলে জানা গেছে। এভাবে দিন দিন ক্ষোভে ফুঁসে উঠে ওই এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষ।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার বড়দরগা নামক স্থান থেকে পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে শামছুল ইসলামকে (৫৫) চোলাই মদ সেবনের অভিযোগে তদন্ত কেন্দ্রটির পুলিশ আটক করে থানায় আনে। ঘটনার রাতে শামছুলের পরিবারের সঙ্গে তদন্ত কেন্দ্রের আইসি যোগাযোগ করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে বলে জানা গেছে। এরপর বুধবার সকাল ৮টার দিকে হাজতে পরিবারের লোকজন আটক শামছুলকে দেখতে আসে।
এ সময় আইসি তাদের জানান, টাকা দিলে তার বিরুদ্ধে (শামছুল) মামলা দেবে না। এতে অসহায় হয়ে পড়ে শামছুলের পরিবার। একপর্যায়ে সকাল ৯টার দিকে শামছুল তার গায়ে থাকা ফতুয়া দিয়ে হাজতের জানালার গ্রিলের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে বলে পুলিশ জানায়। ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মন্জুর হোসেন মন্ডল এবং বর্তমান চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, একটি ইউডি মামলা করার জন্য সকাল সারে ৮টায় ওই তদন্ত কেন্দ্রে এলে তাদের সঙ্গে সামছুল হকের সাক্ষাৎ হয়। তাদের মধ্যে কথাবার্তাও হয়। পরে সকাল ৯টার দিকে তার মৃত্যুর খবর শুনতে পান তারা।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ভেন্ডাবাড়ী এবং মিঠাপুকুরের লোকজন এসে থানা ঘেরাও করে। এ সময় উপস্থিত জনতাকে শান্ত করতে রংপুরের সার্কেল ডি অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান মাইকে কথা বলেন।
কিন্তু আইসির অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ৩৩ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়লে ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। অপরদিকে জনতার পাটকেলের আঘাতে পুলিশের সার্কেল ডি এএসপি হাফিজুর রহমান, থানার ওসি সরেস চন্দ্রসহ ৮ পুলিশ সদস্য আহত হন। ওই ঘটনায় আইসি আমিনুল ইসলাম, এএসআই হরিদাসসহ ৫ পুলিশকে ক্লোজড করা হয়েছে।
রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার উপস্থিত সাংবাদিক ও শত শত জনতার উদ্দেশে বলেন, ঘটে যাওয়া ঘটনা ও উদ্ভূত পরিস্থিতির সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, হাজতে যিনি (শামছুল হক) মারা গেছেন তার ব্যাপারে তদন্ত করা হবে। তিনি মাদকসেবী কি না, কেন আত্মহত্যা করল, সেটাও দেখা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘটনার সঙ্গে পুলিশ জড়িত হলেও ছাড় দেয়া হবে না।
এ সময় উপস্থিত জনতা তদন্ত কেন্দ্রটির আইসি আমিনুলের কথিত সোর্স রংপুরের পাগলাপীরের জিয়াউর রহমান জিয়ার ব্যাপারে শত শত অভিযোগ তুলে ধরলে পুলিশ সুপার অনতিবিলম্বে তাকে গ্রেফতারের জন্য নির্দেশ দেন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার খবর পাওয়া যায়নি।
"