আদালত প্রতিবেদক
যুদ্ধাপরাধ মামলা
বাবা-ছেলেসহ ৫ রাজাকারের ফাঁসির রায়
একাত্তরে গাইবান্ধা সদরে অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট, হত্যা ও দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে বাবা-ছেলেসহ পাঁচ আসামির ফাঁসির রায় এসেছে যুদ্ধাপরাধ আদালতে। বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গতকাল মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
সর্বোচ্চ সাজার আদেশ পাওয়া পাঁচ আসামি হলেন মো. রঞ্জু মিয়া, আবদুল জব্বার মন্ডল, তার ছেলে মো. জাছিজার রহমান খোকা, মো. আবদুল ওয়াহেদ মন্ডল ও মো. মনতাজ আলী বেপারী ওরফে মমতাজ। তাদের মধ্যে কেবল রঞ্জু মিয়া রায়ের সময় আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন, বাকিরা মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
পাঁচ আসামির সবাই গাইবান্ধা সদর উপজেলার নান্দিনা ও চক গয়েশপুর গ্রামের বাসিন্দা। একাত্তরে তারা সবাই ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় সদস্য। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ নিয়ে তারা রাজাকার বাহিনীতে নাম লেখান এবং ওই এলাকার বিভিন্ন গ্রামে যুদ্ধাপরাধ ঘটান বলে উঠে এসেছে এ মামলার বিচারে।
১৭৬ পৃষ্ঠার রায়ে আদালত বলেছেন, আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা চারটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিটি অভিযোগেই আসামিদের দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদন্ড। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তাদের অপরাধ বিবেচনা করে আদালত মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছেন; এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
অন্যদিকে আসামি রঞ্জু মিয়ার আইনজীবী মোহাম্মদ আবুল হাসান বলেন, ‘আমরা সংক্ষুব্ধ। কারণ আমার যিনি মক্কেল, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ১৪ বছর। শান্তি বাহিনী গঠন বা রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেওয়ার মতো বয়স তখন তার ছিল না।’
আইনজীবী মোহাম্মদ আবুল হাসানই এ মামলার পলাতক চার আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে শুনানি করেন। তাদের বিষয়ে আবুল হাসান বলেন, ‘রাজনৈতিক রেষারেষির কারণে তাদের এ মামলায় জড়ানো হয়েছে। এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা সর্বোচ্চ আদালতে যাব।’
নিয়ম অনুযায়ী, রায়ের এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ পাবেন আসামিরা। তবে সেই সুযোগ নিতে হলে পলাতকদের আগে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত রায় আসা ৪০টি মামলার ১০২ জন আসামির মধ্যে ছয়জন বিচারাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মোট ৯৪ জনের সাজা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬৭ যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে।
এ মামলায় মোট আসামি ছিলেন ছয়জন। তাদের মধ্যে আজগর হোসেন খান মামলার তদন্ত চলাকালেই মারা যান। ২০১৮ সালের ১৭ মে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বাকি পাঁচ আসামির যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের মধ্যে গ্রাম্য চিকিৎসক আবদুল জব্বার মন্ডলের বয়স এখন ৯০ বছর। স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে থেকেই তিনি জামায়াতে ইসলামীতে সক্রিয় ছিলেন।
"