গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৬ অক্টোবর, ২০১৯

ট্রেনিংয়ের নামে বিদেশ যাচ্ছেন অদক্ষ কর্তারা

সংসদীয় কমিটিতে ক্ষোভ

রাষ্ট্রীর স্বার্থে সময়ে সময়ে বিদেশে ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্যে যেসব সরকারি কর্মকর্তা মনোনীত করা হয়, তাদের বেশির ভাগেরই যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার অভাব রয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে। এসব কর্মকর্তা দূতাবাস সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন যেমন বোঝেন না, তেমনি প্রশ্নের জবাব সঠিকভাবে দিতে পারেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে সরকারি দলের একজন এমপির উপস্থিতিতে। ওই ঘটনায় তাকে লজ্জায় পড়তে হয়েছে বলে সংসদীয় কমিটিতে তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। ঘটনার বর্ণনা শোনার পর অনেকটা বিব্রতও হন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি এ ইস্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামীতে রাষ্ট্রীয় কোনো সফরে সরকারি কর্মকর্তাদের সংযুক্ত করার আগে তাদের যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা যাচাই করতে হবে। পাশাপাশি কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্যে যেসব সরকারি কর্মকর্তাকে বিদেশ সফরে পাঠানো হয়, তাদের আগে কর্মদক্ষতা যাচাই করা উচিত। কারণ সরকারি কর্মকর্তাদের পারদর্শিতার ওপরে অনেকটা নির্ভর করে রাষ্ট্রের সম্মান। তাই আগামীতে বিদেশে কোনো সফরে প্রজাতন্ত্রের নিয়োগপ্রাপ্তদের পাঠানো হলে দক্ষতা যাতে পরখ করে দেখা হয়, সেজন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে অবহিত করার জন্য আমরা কমিটির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দিয়েছি।

জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশে বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে মনোনীত করা হয় অনেকটা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়, অধিদফতর এবং বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পছন্দের ভিত্তিতে। দেখা যায়, ঘুরেফিরে একই ব্যক্তি লোভনীয় ওই সফরে যাওয়ার সুযোগ পান। এ ক্ষেত্রে দক্ষতা, যোগ্যতা ও পারদর্শিতাকে মূল্যায়ন করা হয় কম। উল্টো বিবেচনায় নেওয়া হয়, অফিসের তোষামোদী কর্মকর্তা কে আছেন কিংবা কার প্রভাব কত বেশি।

এমনই একটি বিদেশ সফরের ঘটনা ঘটেছে নির্মল বায়ু ও টেকসই (কেইস) প্রকল্পে। এই প্রকল্পের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তাদের দু-একজন ১১ বার করে বিদেশ সফর করেন। অথচ বছরে একজন কর্মকর্তা চারবারের বেশি বিদেশে যেতে পারবেন না বলে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন রয়েছে। কিন্তু বিদেশ সফরে এসব অনুশাসন আমলে নেন না সরকারি কর্মকর্তারা। নিজেদের স্বার্থে কিংবা নিজের অপকর্ম ঢাকতে কেইস প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ২৯৯ জনকে পর্যায়ক্রমে বিদেশ সফর করান প্রকল্পের নীতিনির্ধারক। এ তালিকায় পুলিশের ওসি থেকে শুরু করে কর্মচারী পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছিলেন।

একইভাবে, চলতি বছরের বাজেট সমাপ্তির মাসকে কেন্দ্র করে বিদেশ সফর করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে অন্তত ৬৯ জন কর্মকর্তা। এ বছরের মে মাস থেকে জুন পর্যন্ত আলাদা গ্রুপে এসব কর্মকর্তা সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন।

অভিয়োগ আছে, মূলত বাজেটের টাকা শেষ করতেই এই বিদেশ সফরের আয়োজন। কিছু কিছু জায়গায় যেসংখ্যক কর্মকর্তা যাওয়ার কথা সেখানে পাঠানো হয় দু-তিন গুণ বেশি। উদ্দেশ্য শিক্ষা সফর, সাইট ভিজিট, কারখানা পরিদর্শন এবং বিভিন্ন অধিবেশনে যোগদান। এসব ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতার মানদ- নির্ধারণ না করেই তাদের সেখানে পাঠানো হয়।

সম্প্রতি সরকারদলীয় এমপি কাজী নাবিল আহমেদ একটি দূতাবাসে অবস্থান করছিলেন। তার উপস্থিতিতে কয়েকজন কর্মকর্তা একটি দেশ সফরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভিসার জন্য দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হন। কিন্তু ওই কর্মকর্তারা দূতাবাসের প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারছিলেন না। নেতিবাচক ওই অভিজ্ঞতার কথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির ষষ্ঠ সভায় উত্থাপন করেন এমপি নাবিল আহমেদ নিজেই। তিনি কমিটির সদস্য হিসেবে সেখানে জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে দুজন কর্মকর্তাকে বিদেশে ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে ভিসার জন্য একটি দূতাবাসে সাক্ষাৎকার নেয়। সেখানে প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিতে না পারায় ভিসা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি তার কাছে অত্যন্ত অবমাননাকর বলে তিনি কমিটিকে অভিহিত করেন।

সংসদীয় কমিটিতে দেওয়া তার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল মঙ্গলবার এমপি কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘ওই সফরে আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। তবে অনভিজ্ঞতার কারণে ভিসা না দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তখন আমি ওই দূতাবাসে উপস্থিত ছিলাম।’ কী ট্রেনিং কিংবা কোন দূতাবাস এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এমপি নাবিল আহমেদ বলেন, ‘এটা আমাদের কনফিডেনশিয়াল বিষয়, বলা সমীচীন হবে না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close