নিজস্ব প্রতিবেদক/চট্টগ্রাম ব্যুরো/হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

  ১৫ অক্টোবর, ২০১৯

পেঁয়াজের দাম কমে ফের দ্রুত বাড়ল

ভারতের রফতানি বন্ধের পর পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে বেড়েছিল। এ ব্যাপারে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় তা আবার দ্রুত কমেও গিয়েছিল। কিন্তু সেই দাম কমার প্রভাব বাজারে না পড়তেই আবার বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। মসলাজাতীয় পণ্যের সবচেয়ে বড় ব্যবসাকেন্দ্র পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের আড়তে গত দুই দিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ২৫-৩০ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। যেন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না পেঁয়াজের বাজার। এ অবস্থায় সরবরাহ বাড়ানো ছাড়া দাম কমানোর বিকল্প দেখছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাই সরবরাহ বাড়ানোর জন্য আমদানির ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। এদিকে, চলতি মাসের শেষে ভারত থেকে পেঁয়াজ এলে বাজার স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, ভারত অক্টোবরের শেষে পেঁয়াজ রফতানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে। ফলে আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে কোনো ব্যবসায়ী অসৎ উপায়ে পেঁয়াজ মজুদ করলে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ ১১০ এবং বিদেশি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৯০ টাকা দ?রে বিক্রি হয়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ না থাকায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। তবে আমদানি বাড়লে দাম কমার আশা করছেন পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মা?লিক স?মি?তির সাধারণ সম্পাদক মো. দুলাল মোল্লা। সরকার ৪৫ টাকা কেজি দরে টিসিবির পেঁয়াজ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। তাতেও কমছে না পেঁয়াজের দাম।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এখন একচেটিয়া ব্যবসা করছে মিয়ানমারের পেঁয়াজ। গত রোববার খাতুনগঞ্জে ঢুকেছে সাড়ে তিন শ টন পেঁয়াজ; মিয়ানমারের পেঁয়াজ আসা শুরুর পর এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড। কিন্তু একচেটিয়া দখলে থাকার পরও বাজারে আবার দাম বেড়েছে।

গত বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জের আড়তে মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৫৮ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হলেও গত রোববার বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৭৫ টাকায়। আর আগে থাকা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকায়; গত বৃহস্পতিবার এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৬০ টাকায়। পেঁয়াজের আড়তদাররা বলছেন, বাজারে একচেটিয়া মিয়ানমারের পেঁয়াজ, কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে সেই পেঁয়াজে পচা পড়ছে। ভালো পেঁয়াজ আসার পর টেকনাফ স্থলবন্দরের অব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে পেঁয়াজ পচছে। এক বস্তায় চার-পাঁচ কেজি পেঁয়াজ পচা পড়ছে। ফলে সেই ক্ষতি পোষাতেই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে পেঁয়াজ। দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের আড়তদার আবসার উদ্দিন বলেন, বৃষ্টির কারণে বুধ ও বৃহস্পতিবার আসা মিয়ানমারের পেঁয়াজ টেকনাফ স্থলবন্দরে আটকা পড়েছে। তিন দিন অপেক্ষার পর সেই পেঁয়াজ বাজারে আসছে কিন্তু বেশির ভাগ পেঁয়াজই পচা।

তিনি বলেন, এক ট্রাকে চার শ বস্তা পেঁয়াজের মধ্যে দেড় শ বস্তাও ভালো পাওয়া যাচ্ছে না। এতে আমদানিকারক-ব্যবসায়ীরা পথে বসেছেন। কারণ সব পেঁয়াজই একই দামে কেনা, কিন্তু ভালো পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। আর পচে যাওয়া পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ৩৫ টাকায়। ভালো থাকা পেঁয়াজ এক শ টাকা দামে বিক্রি করলেও ক্ষতি পোষানো যাবে না। এক ট্রাকে এক-তৃতীয়াংশ খারাপ হলেও বাজারের এ অবস্থা হতো না। আরেক আড়তদার মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, চরম সংকটের মধ্যে মিয়ানমারের পেঁয়াজ আসা ছিল আমাদের জন্য অনেক স্বস্তির। টেকনাফ স্থলবন্দরে দ্রুত পণ্য ছাড় না করলে আর এ অবস্থা চলতে থাকলে বাজার ধরে রাখা কঠিন হবে। কারণ এখন বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ নেই, মিসরের পেঁয়াজ আসছে কিন্তু খাতুনগঞ্জে নেই। ফলে ভালো বিকল্প হিসেবে মিয়ানমারই এখন ভরসা।

হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় ১৪ দিন ধরে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া পুরোনো এলসির বিপরীতে রফতানি করা পেঁয়াজের মজুদ শেষ হওয়ায় হিলিতে ফের অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। দুদিনের ব্যবধানে দাম কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকা করে বেড়েছে। দুদিন আগেও পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা বেড়ে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানি না হলে দাম আরো বাড়ার শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

হিলি স্থলবন্দরের গুদাম ঘুরে দেখা গেছে, পুরোনো এলসির বিপরীতে আমদানি করা পেঁয়াজ শেষ হয়ে যাওয়ায় গুদামঘর বন্ধ রেখেছেন অনেকে। তবে দু-একজন আমদানিকারকের গুদামে কিছু পেঁয়াজ আছে।

পাইকার রফিকুল ইসলাম ও সুজন হোসেন জানান, কয়েক দিন আগে হিলি থেকে পেঁয়াজ কিনেছিলেন ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে। দুদিন আগেও যা ৫০-৫৫ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। এখন তা কিনতে হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে। আর যেসব পেঁয়াজ খারাপ সেগুলো বস্তা ২০০-৩০০ টাকা দরে কিনলেও এখন সেই পেঁয়াজ ২০-২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আবার পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে। এতে আমাদের কিনতেও সমস্যা হচ্ছে, তেমনি বিক্রি করতেও সমস্যা হচ্ছে।

হিলি বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, আমরা যেমন দামে পেঁয়াজ কিনি, তার সঙ্গে কিছু লাভ করে তা বিক্রি করি। তিন দিন আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমরা কিনেছিলাম ৫০-৫২ টাকা কেজি দরে। তখন বিক্রি করেছিলাম ৫৫ টাকা কেজি দরে। গতকাল ৬৫ টাকা কিনেছি, যা আজ ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। দাম বাড়ার কারণে অনেক ক্রেতা দাম শুনে ঘুরে যাচ্ছেন। আবার কেউ নিলেও আগে আড়াই কেজির জায়গায় নিচ্ছেন এক বা দেড় কেজি।

হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক বাবলুর রহমান বলেন, এখন আমদানিকারদের ঘরে পেঁয়াজ নেই। দু-একজনের কাছে কিছু পেঁয়াজ রয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় ও চাহিদা বাড়ায় ফের পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। শুনেছি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পেঁয়াজ রফতানির অনুমতির ব্যবস্থা করছে। এটা হলে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারকদের সভাপতি হারুন উর রশীদ হারুন বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি শুরু করলে দাম কমবে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে ২৫০ ডলারের প্রতি টন পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় ৮৫২ ডলার। এরপর থেকেই বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম হঠ্যাৎ করে বেড়ে যায়, যা এখানো অব্যাহত আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close