নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ অক্টোবর, ২০১৯

অনিশ্চয়তা পেরিয়ে বুয়েটের ভর্তিযুদ্ধে ১২ হাজার শিক্ষার্থী

* পরীক্ষায় আন্দোলনের প্রভাব পড়েনি * খুনিদের বিচার দাবিতে গণস্বাক্ষর * ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ চান ভর্তিচ্ছুরা

আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের পর বিক্ষোভ-আন্দোলন আর অনিশ্চয়তা পেরিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেন ১২ হাজার শিক্ষার্থী। গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে প্রকৌশল ও স্থাপত্য বিভাগের এই ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার কারণে গত রোববার ও সোমবার আন্দোলন শিথিল করা হয়। সকাল ৯টা থেকে তিন ঘণ্টার লিখিত ভর্তি পরীক্ষা হয়। পরীক্ষা শেষ হয় দুপুর ১২টায়। শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মোট পরীক্ষার্থীর ৯০ শতাংশই পরীক্ষায় উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। মোট ১২ হাজার ১৬১ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১০ হাজার ৭৬৩ জন প্রকৌশলের এবং ১ হাজার ৩৯৮ জন স্থাপত্যের।

ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা দুপুর ১২টায় পরীক্ষা শেষ করেন। তাদের সঙ্গে পরীক্ষায় বসা আর্কিটেকচারের শিক্ষার্থীদের অংকন পরীক্ষা হয় দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এদিকে আবরার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন আন্দোলনকারীরা। আজ মঙ্গলবার থেকে আবার আন্দোলন পুরোদমে চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অন্দোলনের প্রভাব পরীক্ষায় পড়েনি। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে আমরা কাজ করছি। আবরার হত্যার প্রতিবাদে চলমান আন্দোলন ভর্তি পরীক্ষায় প্রভাব ফেলেনি। বুয়েটের সংকট নিরসনে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। আশা করি, দ্রুতই সংকট নিরসন হবে।

উপাচার্য জানান, বুয়েটের হলে হলে অভিযান অব্যাহত থাকবে। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বাইরে কেউ হলে থাকতে পারবেন না। বুয়েটে ছাত্র-শিক্ষকদের সাংগঠনিক রাজনীতিও থাকবে না। আমাদের সাধ্যের মধ্যে যেসব বিষয় আছে সেগুলো সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। যেগুলোর সাধ্যের বাইরে সেগুলো সমাধানে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা ও কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।

তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনে নিহত হওয়ার পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। উপাচার্য সাইফুল ইসলাম তাদের ১০ দফা দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের পাঁচটি দাবি তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নের বিজ্ঞপ্তি দিলে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আন্দোলন শিথিল করা হয়।

বুয়েটের প্রধান ফটক থেকে পলাশী পর্যন্ত হলসংলগ্ন দেয়ালে আঁকা হয়েছে প্রতিবাদী ছবি ও গ্রাফিতি। কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে রক্তাক্ত আবরারের ছবি, নির্যাতন বন্ধের দাবিতে সেøাগান। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে আবরার হত্যার বিচার দাবিতে অভিভাবকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন আন্দোলনকারীরা।

ভর্তি পরীক্ষার কারণে সকাল থেকেই বুয়েট ক্যাম্পাসে ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকেরা ভিড় করেন। এর মধ্যেই ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কর্মসূচি পালিত হয়। আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি পালিত হয়। সেখানে অনেক শিক্ষার্থীকেই স্বাক্ষর করতে দেখা যায়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সাইদুল আরাফাত বলেন, তারা শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্দোলন করছেন। সব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবি করেছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ চান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে, তাহলে আন্দোলন কেন, জানতে চাইলে সাইদুল আরাফাত বলেন, মেনে নেওয়ার ঘোষণা আর বাস্তবায়ন এক নয়। শিক্ষার্থীরা কেবল আশ্বাস নয়, বাস্তবায়নও দেখতে চান।

গত ৬ অক্টোবর শেরেবাংলা হলে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close