হাসান ইমন

  ১৪ অক্টোবর, ২০১৯

বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ আগামী সপ্তাহে শুরু

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিনে বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) ভবন ভাঙার কাজ শুরু হচ্ছে। দরপত্রের নিলাম পাওয়া সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালাম এ ব্রাদার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনটি ভাঙবে। এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি আগামী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবে। চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরদিন থেকে ভবন ভাঙার কার্যক্রম শুরু হবে। রাজউক সূত্র জানায়, আদালতের রায়ের পর হাতিরঝিলে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভবন ভাঙতে বিজিএমইএকে কয়েক দফা সময় দেওয়া হয়। তার পরও তারা ভবন ভাঙতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। পরে গত ১৬ এপ্রিল ভবনটি ভাঙতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয় রাজউক নিজেই। যদিও ওই সময়ের আগেই বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ তাদের অফিস উত্তরায় স্থানান্তর করে। কিন্তু ১৫ তলা ভবনের অন্যান্য ফ্লোরে তখনো ভাড়া দেওয়া বাইরের অনেক প্রতিষ্ঠানের অফিস ছিল। এ ছাড়া কোন পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙা হবে, সেটি নিয়েও দোটানায় পড়ে রাজউক। পরে অবশ্য প্রাথমিকভাবে রাজউক সিদ্ধান্ত নেয় ‘কনট্রোলড ডেমোলিশন’ বা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ পদ্ধতি ব্যবহারের। কিন্তু বড় ধরনের কম্পন বা ঝাঁকুনিতে আশপাশের বহুতল ভবনের বড় কোনো ক্ষতির আশঙ্কায় সেই পরিকল্পনা থেকেও শেষ পর্যন্ত সরে আসে রাজউক। ঝুঁকি এড়াতে সনাতন পদ্ধতির শাবল আর হাতুড়ি দিয়েই ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

আরো জানা যায়, ৬ অক্টোবর হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প শীর্ষক প্রকল্পের রাজউক অংশের পরিচালক ভাঙার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স সবাবপুর রোড ঠিকানায় কার্যাদেশের চিঠি পাঠায়। এতে বলা হয়, দুটি বেজমেন্টসহ ১৫ তলাবিশিষ্ট বিজিএমইএ ভবন ভাঙা ও মালামাল অপসারণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় নিলাম মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে শর্তসাপেক্ষে রাজউক চেয়ারম্যান অনুমোদন করেন। চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা হয়, চিঠি প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে চুক্তিপত্র করতে রাজউকে দাখিল করতে হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। একই সঙ্গে ভবন ভাঙার কাজ চলাকালীন সার্বক্ষণিক কাজ তদারকির জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দাখিল করতে হবে। এতে কারা কীভাবে মনিটরিংয়ের কাজ করবেন; তার বিস্তারিত উল্লেখ করা থাকবে। চিঠি পাওয়ার পর সাত দিনের মধ্যেই নিলামের দর অনুযায়ী সব অর্থ ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১১ মাসে কীভাবে ভবনটি ভাঙবে তার একটি দিনভিত্তিক বর্ণনা দিয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠায়। এতে ভবনসংলগ্ন প্রবেশপথ বা বেইলি ব্রিজ ভেঙে ভারী যানবাহন প্রবেশের জন্য রাস্তা নির্মাণ করতে এবং ভবনের বাইরে যন্ত্রপাতি ও যানবাহনের পার্কিংয়ের মাটি ভরাট কাজের জন্য ১৫ দিন সময় চান। এ ছাড়া বাইরের গ্লাস ফিটিংস অভ্যন্তরীণ পানি বিদ্যুৎ গ্যাস বাথরুম ফিটিংস পার্টিশন ও ডেকোরেশন অপসারণ করতে এক মাস সময় চায়। মূল ভবনটি ভাঙতে ওপরের তলা থেকে গ্রাউন্ড ফ্লোর পর্যন্ত যাবতীয় ভাঙা ও অপসারণে ৮ মাস সময় চায়। এ ছাড়া বেজমেন্ট ও ভূগর্ভস্থ ট্যাংক ইত্যাদি ভাঙা ও অপসারণে ৪৫ দিন সময় চায় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান। পরে রাজউক কর্তৃপক্ষ তা ৬ মাসে নামিয়ে আনে। ভবনটি ভাঙার কাজ সঠিকভাবে তদারকি করতে রাজউক কর্তৃক একটি বিশেষ টিম ও ঠিকাদার কর্তৃক একটি পৃথক টিম গঠন করবে। টিম দুটি যেকোনো প্রকার সমস্যা দেখলে যৌথভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার যেকোনো সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় রাজউক।

এ প্রসঙ্গে রাজউক হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে রাজউক। ভবন ভাঙার জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও চূড়ান্ত করা হয়েছে। সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভবন ভাঙার কাজটি করবে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি রাজউকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে ভবন ভাঙার কাজ শুরু হবে।

তিনি আরো বলেন, ভবন ভাঙার জন্য ৬ অক্টোবর ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য ভবনটির দুটি বেজমেন্টসহ মোট ১৫ তলার এ বিশাল ভবনটি কোন পদ্ধতিতে ভাঙা হবে; তার পৃথক পৃথক পরিকল্পনা জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার অতি দ্রুততার সঙ্গে ভবনটি ভাঙার বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা রাজউকের কাছে হস্তান্তর করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মো. সালাম বলেন, ‘আমি অসুস্থ থাকায় রাজউকের সঙ্গে এখনো চুক্তিবদ্ধ হতে পারিনি। আগামী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আমরা চুক্তিবদ্ধ হব। চুক্তি হওয়ার পরদিন থেকে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ শুরু হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close