নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ অক্টোবর, ২০১৯

ক্যাসিনোয় বিত্তশালীদের তালিকা দুদকে

ক্যাসিনোর মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক অন্তত ২০ জনের একটি তালিকা নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ গতকাল সোমবার সকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বলেন, ‘ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন, এমন অভিযোগে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি তালিকা দুদকের হাতে এসেছে। তাদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। যদিও ক্যাসিনো সংশ্লিষ্ট অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দুদকের কাজ নয়, শুধু অবৈধ সম্পদ অর্জনের অংশটুকু দুদকের তফসিলভুক্ত।’

ক্যাসিনোর মাধ্যমে যারা অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন, গত ১ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। কমিশনের এক জরুরি সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে। আর দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খানকে তদারক কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বৈঠকে যুবলীগ নেতাদের কর্মকা-ে ক্ষোভ প্রকাশের পর রাজধানীতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তত্ত্বাবধানে ‘৬০টি ক্যাসিনো চালানোর’ খবর আসে সংবাদমাধ্যমে। এরপর গত মাসের মাঝামাঝি বিভিন্ন ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানে ক্যাসিনোর হদিস মেলে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের বাসা থেকে গ্রেফতার করার পর ৫৮৫টি ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এবং অবৈধ অস্ত্র পাওয়ার কথা জানানো হয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে। একই সঙ্গে ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে জুয়ার আধুনিক আয়োজন ক্যাসিনোর সরঞ্জামের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ মদ জব্দ করে র‌্যাব। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ ২৪ লাখ টাকাও। খালেদ ফকিরাপুলের ওই ক্লাবের সভাপতি।

একই দিন ওয়ান্ডারার্স ক্লাব এবং গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রে র‌্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো মেলার পাশাপাশি সেগুলো পরিচালনায় যুবলীগ নেতাদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ পায়। পর দিন কলাবাগান ক্লাব থেকে গ্রেফতার করা হয় কৃষক লীগের নেতা সফিকুল আলম ফিরোজকে। ওই দিন ঢাকা ওয়ান্ডারাস ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র ও বনানীর আহমদ টাওয়ারের গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ ক্লাবে অভিযান চালিয়ে জুয়ার ২৪ লাখ টাকা উদ্ধার এবং ৪০ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ওয়ান্ডারাস ক্লাবটি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. কাওসার ও ওই এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাইদ চালান বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা দুই ভাই, তাদের এক কর্মচারী এবং তাদের এক বন্ধুর বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা, আট কেজি স্বর্ণ এবং ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। নগদ টাকাগুলো জুয়ার টাকা বলে র‌্যাব জানিয়েছে। ওই দুই আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে গেন্ডারিয়া থানা কমিটির সহসভাপতি এনামুল হক এনু ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের একজন শেয়ারহোল্ডার। আর তার ভাই রুপন ভূঁইয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

পরে মতিঝিলের ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালিয়ে দুটি রুলেট টেবিল, ৯টি বোর্ড, বিপুল পরিমাণ কার্ডসহ ক্যাসিনোর সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর গত বুধবার রাতে মনিপুরীপাড়ার বাসা থেকে পাঁচ বোতল মদসহ ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া গ্রেফতার হন। লোকমানকে গ্রেফতার করে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিনিই ক্লাবের ঘর ক্যাসিনোর জন্য ভাড়া দিয়েছিলেন। আর ওই ক্যাসিনো চালাতেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা এ কে এম মোমিনুল হক ওরফে সাঈদ কমিশনার। ক্যাসিনোর ভাড়া থেকে প্রতিদিন ৭০ হাজার টাকা করে পাচ্ছিলেন লোকমান। অস্ট্রেলিয়ার দুটি এবং দেশের কয়েকটি ব্যাংকে তার গচ্ছিত টাকার পরিমাণ প্রায় ৪১ কোটি টাকা।

রাজধানীর ক্লাবগুলোতে অবৈধ ক্যাসিনোর সঙ্গে যুবলীগ নেতাদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর সংগঠনটির চার নেতা যান আত্মগোপনে। এদের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও সহসভাপতি এনামুল হক আরমানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে কাকরাইলে সম্রাটের কার্যালয় থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা, একটি পিস্তল ও দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া উদ্ধার করার কথা জানায় র‌্যাব।

সম্রাটের স্ত্রী শারমিন চৌধুরীর ভাষ্য, শান্তিনগরের শেলটেক টাওয়ারের ফ্ল্যাট, মহাখালীর বাসা এবং কাকরাইলে অফিসের ফ্লোর ছাড়া তার স্বামীর আর কোনো সম্পদ নেই। ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত অর্থ সংগঠনের পেছনে খরচের পর বাকি অর্থ তিনি জুয়ায় খরচ করতেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী। অন্যদিকে সম্রাটের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা আরমানও দীর্ঘদিন ধরে ক্যাসিনো কারবারে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তিনি ঢাকাই সিনেমাতেও টাকা খাটাচ্ছিলেন।

গত রোববার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেফতারের পর নতুন করে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছেÑ এরপর কে গ্রেফতার হচ্ছেন। ক্যাসিনোকা-ে জড়িত এই নেতাদের ব্যাংক হিসাবও এরই মধ্যে তলব করা হয়েছে। কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব জব্দও করা হয়েছে। আর গতকাল সোমবার দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ জানিয়েছেন, ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন, এমন ১৫ থেকে ২০ জনের একটি তালিকা দুদকের হাতে এসেছে। তাদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close