নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

জি কে শামীম ও খালেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

যুবলীগ নেতা জি কে শামীম ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। জি কে শামীমের ব্যাংক হিসাবে ৩০০ কোটি টাকার খোঁজ মিলেছে। এছাড়া তার স্ত্রী ও মাসহ স্বজনদের হিসাবও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত সব তথ্য পাঁচ দিনের মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জানাতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, সন্ত্রাসী ও মানিলন্ডারিং বিষয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে বিএফআইইউ তা অনুসন্ধান করে। সম্প্রতি এসব অপরাধে যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের হিসাবও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অনুসন্ধানকালে তাদের হিসাবে টাকা জমা হবে কিন্তু উত্তোলন করতে পারবে না।

এদিকে, ট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন কলা অনুষদ ভবনের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করে। ওই সময় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই ৭৫ কোটি টাকার কাজটি পায় জি কে শামীমের মালিকানাধীন মেসার্স দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স-জিকেবিএল (জেভি)। অভিযোগ রয়েছে, জি কে বিল্ডার্স তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশকে কাজে লাগিয়ে জাল কাগজপত্র দাখিল করে কাজটি হাতিয়ে নেয়। ওই সময় জি কে বিল্ডার্সকে কাজ পাইয়ে দিতে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ করে দেয় ছাত্রলীগের ওই অংশ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল বিভাগ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চবি ছাত্রলীগের তৎকালীন ছাত্রনেতা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি গ্রুপের যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে কাজটি জি কে বিল্ডার্সকে দেওয়া হয়। ছাত্রলীগের ওই অংশের বাধায় নির্ধারিত সময়ে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিতে পারেনি।’

একই অভিযোগ করেন নিহত ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর বড় বোন জুবাইদা সরওয়ার নিপা। তিনি বলেন, ‘তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি টিপুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি অংশ চবির প্রকৌশল দফতর অবরোধ করে রেখে জি কে বিল্ডার্সকে কাজ পাইয়ে দেয়। তাদের এই খারাপ কাজের প্রতিবাদ করায় তারা আমার ভাই দিয়াজকে হত্যা করে। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।’

অনুসন্ধানে জাল কাগজপত্র দিয়ে জি কে বিল্ডার্সের কাজ বাগিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ। তাদের দাবি, নিয়ম মেনে জি কে বিল্ডার্সকে কাজ দেওয়া হয়েছে।

গত শুক্রবার নিকেতনের অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয় জি কে শামীমকে। তার অফিসে থাকা নগদ দেড় কোটি টাকা ও ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআরের কাগজ জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য।

এর আগে বুধবার অবৈধ অস্ত্র ও ইয়াবা রাখার অপরাধে খালেদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরদিন তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও মানিলন্ডারিং মামলা করা হয়। এর মধ্যে মাদক ও অস্ত্র মামলায় সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

সূত্র জানায়, গত রোববার সকালে জি কে শামীমের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য বড় অঙ্কের চেক কয়েকটি ব্যাংকে জমা পড়ে। এরপর ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগাযোগ করে পরামর্শ চাওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক দুপুরের মধ্যেই নির্দেশনা জারি করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, জি কে শামীম, তার স্ত্রী ও মা-বাবার নামে থাকা সব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করতে হবে। এ সংক্রান্ত সব তথ্য পাঁচ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে বলা হয়। শামীম নিজের নাম সংক্ষেপ করে বলতেন জি কে শামীম। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্সের মালিক তিনি। জি কে শামীম নিজেকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক বলে পরিচয় দিতেন। অস্ত্র ও মাদক মামলায় জি কে শামীম এখন ১০ দিনের রিমান্ডে আছেন।

এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর জি কে শামীমের কর ফাঁকির অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। আয়কর রিটার্নে ঘোষিত সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে প্রকৃত সম্পদের গরমিল রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া তার লাইফস্টাইলের সঙ্গে প্রকৃত জীবনযাপনে অসঙ্গতি রয়েছে। কর ফাঁকি দিতেই তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এই বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। কর সার্কেল থেকে আয়কর নথি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইসিতে তলব করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close