জুবায়ের চৌধুরী

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ক্যাসিনোর টাকা বিদেশে পাচার

দেশে অবৈধভাবে চলে আসা ক্যাসিনোর টাকার ভাগ যেত দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে পালিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের কাছে। শুধু ক্যাসিনোর টাকাই নয়, জিসানের কাছে পৌঁছে যেত চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির টাকাও। বিদেশে বসেই আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। দেশের ক্যাসিনো কা-ের তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জিসানের কাছে টাকা পাঠানো হতো ওমানের মাসকট ব্যাংকের মাধ্যমে। ওমানে থাকা আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী নাদিম সেখান থেকে টাকা তুলে জার্মানিতে থাকা জিসানের কাছে পৌঁছে দিত। ঢাকা থেকে এই আয়োজন করে দিতেন যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীমরা। সব সময় একই রুট অনুসরণ করা হতো না। কখনো কখনো নেপাল-সিঙ্গাপুর হয়েও টাকা যেত জিসানের কাছে।

যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া রিমান্ডে এসব তথ্য জানিয়েছেন বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র। আর গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসব তথ্যের যথেষ্ট সত্যতাও তারা পেয়েছেন। সূত্র জানায়, জি কে বিল্ডার্স নামের একটি কোম্পানি বর্তমানে শামীমের নামে থাকলেও তা একসময় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের ছিল। জিসান দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর কোম্পানিটির হাল ধরেন অপর সন্ত্রাসী নাদিম ওরফে টিঅ্যান্ডটি নাদিম। এরপর নাদিমও দেশ ছাড়া হলে তা জি কে শামীমের হাতে চলে আসে। এই জিসান, নাদিম ও শামীম তিনজনই বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় যুবদলের রাজনীতি করতেন।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বলছে, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বেশকিছু বড় বড় টেন্ডারে কাজ পেয়েছে জি কে বিল্ডার্স। আর সেখানে সহায়তা করছেন যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও সাংগাঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। অন্য কেউ টেন্ডার জমা দিলেও সম্রাট ও খালেদের হস্তক্ষেপে তা বাতিল হয়ে যেত। কাজ যেত জি কে বিল্ডার্সের হাতে। এর থেকে আয় করা টাকার একটা মোটা অঙ্ক সম্রাট ও খালেদ পেতেন। এই জি কে বিল্ডার্সের একটি শাখা রয়েছে সিঙ্গাপুরে। যেখানে টিঅ্যান্ডটি নাদিম বসেন। শামীম, সম্রাট, খালেদও মাঝে মধ্যে সেখানে যান। আর ওদিকে জার্মানি থেকে উড়ে আসেন শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানও। ওই অফিসে বসেই টেন্ডার বাগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাগুলো হয়।

গোয়েন্দা সূত্র মতে, সন্ত্রাসী টিঅ্যান্ডটি নাদিম মাঝে মধ্যে ওমান ও দুবাইতে গিয়েও থাকেন। সেখান থেকে ঢাকায় তার লোকজন দিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করেন। জিসান ও নাদিমের হয়ে যারা কাজ করছেন মগবাজার টিঅ্যান্ডটি কলোনির জাকির, নয়াটোলার সেন্টু ও শোভন, বাড্ডার নাসির ও খোকন। এখনো তারা জিসান ও নাদিমের হয়ে চাঁদাবাজি করছেন বলেও গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। আর টেন্ডারবাজিতে সম্রাট, খালেদের সহায়তায় কাজ না হলে সন্ত্রাসী এই চক্রটিকে কাজে লাগিয়ে হত্যা, অপহরণের হুমকি দিয়ে টেন্ডার বাগিয়ে নেওয়া হতো। অধিকাংশ সময়ে সহায়তায় কাজ হতো। ফলে টেন্ডার বাগানোর পর নাদিম ও জিসান সিঙ্গাপুরে চলে যেত আর শামীম, সম্রাট ও খালেদ উড়াল দিতেন ঢাকা থেকে। এই টেন্ডার ও ক্যাসিনোর টাকার ভাগ সিঙ্গাপুর থেকে ওমানের মাসকট ব্যাংকে পাঠানো হতো। আর সেখান থেকে টাকা যেত জামার্নিতে।

সূত্রটি আরো জানায়, কিছু দিন হলো শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে যুবলীগের খালেদের দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় জিসান নাদিমকে দায়িত্ব দেয় খালেদকে শায়েস্তা করার জন্য। নাদিম ও জিসান দুবাইয়ের বুরুজ খলিফা টাওয়ারে বসে খালেদ, সম্রাট ও শামীমকে গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা করে। এজন্য একে-২২ অস্ত্রও কেনা হয়। আর এ দায়িত্ব দেওয়া হয় মগবাজারের শোভনকে। তবে গোয়েন্দারা ওই অস্ত্রটি উদ্ধার করলে সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। গোয়েন্দারা জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ নানা ধরনের তথ্য দিতে শুরু করেছেন। যা যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জিজ্ঞাসাবাদ সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, অনেক রকম ভয়াবহ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সেসব তথ্যও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close