নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

টিআইবির চিঠিতে বেক্সিমকোর প্রশংসা

বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিবাদের পর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল এক জবাবি চিঠিতে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই শিল্প গ্রুপের প্রশংসা করার পাশাপাশি শুদ্ধাচার চর্চার আহ্বান জানিয়েছেন।

বেক্সিমকো চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমানকে পাঠানো ওই চিঠিতে সুলতানা কামাল লিখেছেন, ‘কারো প্রতি ব্যক্তিগত ইঙ্গিত করা টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তির উদ্দেশ্যের মধ্যে পড়ে না। পাশাপাশি আপনাকে এই বলে আশ্বস্ত করতে চাই যে, দেশের অর্থনীতিতে অন্য যেকোনো প্রথিতযশা প্রতিষ্ঠানের মতো বেক্সিমকো গ্রুপের ইতিবাচক অবদান টিআইবি সব সময় যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করে।’

বেক্সিমকো গ্রুপের ৪৩০.০৫ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের আবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের একটি খবর গত ১৩ সেপ্টেম্বর এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার। ওই খবরের প্রতিক্রিয়ায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ওইদিনই একটি বিবৃতি দেন; সেখানে বলা হয় একদল ‘লুটেরা’ আইনপ্রণেতা হওয়ার সুযোগ পেয়ে গেছে।

ওই বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর টিআইবি চেয়ারপারসন সুলতানা কামালকে একটি চিঠি দেওয়া হয় বেক্সিমকো চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমানের পক্ষ থেকে। সেখানে বলা হয়, বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য সালমান ফজলুর রহমানকে ইঙ্গিত করে টিআইবি যে বিবৃতি দিয়েছে তা ‘অবমাননাকর’। সেই চিঠির জবাবে সুলতানা কামাল গত ১৬ সেপ্টেম্বর সোহেল এফ রহমানকে আরেকটি চিঠি পাঠান।

সেখানে বলা হয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে বেক্সিমকো লিমিটেডের অবদান অনস্বীকার্য। বিশেষ করে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বেক্সিমকোর সক্রিয় ও বহুমুখী ভূমিকা যৌক্তিক কারণেই সর্বজনবিদিত।

বেক্সিমকোর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও এর মাধ্যমে দেশের টেকসই উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অবদান অব্যাহত থাকবে টিআইবি এই প্রত্যাশা করে। এইকভাবে, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল এর অন্যতম ক্ষেত্র ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতের নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেক্সিমকোর ব্যবসায়িক মডেল ও চর্চা এ খাতে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় অন্য ছোট-বড়ো সব প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় হবে, সেটাও আমাদের কাম্য।

সুলতানা কামাল লিখেছেন, জনস্বার্থে নিয়োজিত অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো বাংলাদেশ ব্যাংক যখন তার নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে ব্যর্থ হওয়ার মুখোমুখি হয়, তখন তার সমালোচনা করা এবং কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানানোকে টিআইবি নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করে।

চিঠিতে বলা হয়, খেলাপিঋণকে ‘প্রাতিষ্ঠানিকীকরণমুখী’ করা এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্পিত দায়িত্ব পালনে ‘ঘাটতির’ যে পরিপ্রেক্ষিত তৈরি হয়েছে, টিআইবি একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের মাধ্যমে এই গুরুতর অবস্থা থেকে উত্তরণের পন্থা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে।

যার মাধ্যমে অতীব প্রয়োজনীয় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার উদ্যোগ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে আমরা মনে করি এবং আমরা বিশ্বাস করি তার ফলে বেক্সিমকোর মতো ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতের প্রতিষ্ঠানসহ সব অংশীজনের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের ওপর চলমান আস্থার সংকট দূরীভূত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন ব্যবসায়িক গ্রুপকে বিপুল অঙ্কের টাকা দিতে বাধ্য করার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে বেক্সিমকো চেয়ারম্যান তার চিঠিতে প্রশ্ন করেছিলেন, সেই ‘অবৈধ চাঁদাবাজির’ সমালোচনা টিআইবি কখনো করেছে কি না।

এর উত্তরে টিআইবি চেয়ারপারসন লিখেছেন, আপনার অবগতির জন্য সংক্ষেপে বলতে চাই, সরকারের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত কর্তৃপক্ষের পরিচয় বা অবস্থানের ওপর নির্ভর করে টিআইবির কার্যক্রম কোনোভাবেই প্রভাবিত হয় না। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনকালেও টিআইবি সুশাসনের পরিপন্থি কর্মকা- ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের নামে ক্ষমতার অপব্যবহারের বিভিন্ন পদপেক্ষপের সমালোচনা করতে পিছপা হয়নি, যে কারণে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর বিরাগভাজন হতে হয়েছে টিআইবিকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close