জিয়াউদ্দিন রাজু

  ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

শোভন-রাব্বানীর পদ হারানোর প্রতিক্রিয়া

সমর্থকরা চুপ, বিপক্ষ শিবিরে উদ্দীপনা

আলোচনা-সমালোচনার তুঙ্গে থাকা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর পদ হারানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যেও নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন মহল। শোভন ও রাব্বানীর পক্ষের কর্মীরা এ মুহূর্তে চুপ থাকলেও বিপক্ষের নেতাকর্মীরা রয়েছেন সরব। অনেকে আনন্দ মিছিল করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

গত শনিবার রাতেই ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের টিএসসিতে পদ হারানো ওই দুই নেতার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন সংগঠনটির পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা বলেন, শুধু পদ থেকে সরালেই হবে না। যে অভিযোগের ভিত্তিতে শোভন-রাব্বানীকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার তদন্ত করে বিচার করতে হবে।

এ সময় টিএসসি থেকে শোভন-রাব্বানীকে বহনকারী গাড়ি এলিফ্যান্ট রোডের দিকে যাওয়া সময় তাদের পক্ষেও স্লোগান দেয় কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেও আনন্দ-উল্লাস করেছেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা। এ সময় পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে তাদের আনন্দ-উল্লাস করতে দেখা গেছে। শুধু ঢাবিতেই নয়, আনন্দ মিছিল করতে দেখা গেছে জগন্নাথ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও।

ছাত্রলীগের নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে শুভেচ্ছা জানিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল।

এদিকে, সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগকে ইতিবাচক ধারায় ফেরানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সংগঠনের নেতাকর্মীদের কারো বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি বা চাঁদাবাজির প্রমাণ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, পদ হারানোর প্রতিক্রিয়ায় প্রতিদিনের সংবাদকে গোলাম রাব্বানী বলেন, কিছু ‘ব্যক্তি’ আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব করেছে। আশা করি অতি দ্রুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকৃত ঘটনা জানবেন এবং আমাদের গ্রহণ করবেন। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমরা ওনার সঙ্গে আছি। বর্তমানে যারা ছাত্রলীগের দায়িত্ব পেয়েছেন আমরা তাদের সাহায্য করব সর্বত্র। একই কথা বলেন শোভন ও রাব্বানীর পক্ষের নেতাকর্মীরা।

এদিকে, সদস্য পদ হারানো ছাত্রলীগের দুই নেতার মধ্যে গোলাম রাব্বানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) জিএস এবং রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্য। এ দুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থাকা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

গোলাম রাব্বানীকে ‘চাঁদাবাজ’ হিসেবে অভিযুক্ত করে ডাকসুর জিএস পদ থেকে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। পাশাপাশি তাকে গ্রেফতারেরও দাবি জানান তারা। গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ডাকসু ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে এমন দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।

যেসব অভিযোগে গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, একই অভিযোগে কোনো ডাকসু নেতার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হতে পারে তা নিয়ে ডাকসুর গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট কোনো ধারার কথা উল্লেখ নেই।

তবে গঠনতন্ত্রে পদাধিকার বলে ডাকসুর সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ক্ষমতা অংশে উল্লেখ আছে, ‘সংসদের স্বার্থে সভাপতি চাইলেই যেকোনো সময় যেকোনো কার্যনির্বাহী সদস্য বা অফিস কর্মচারীকে বহিষ্কার কিংবা পদচ্যুতি করতে পারবেন এবং তিনি চাইলে পুরো কার্যনির্বাহী সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারেন।’

এই বিষয়ে জানতে ডাকসুর সভাপতি ও ঢাবি উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী ‘স্যার ব্যস্ত আছেন’ বলে জানান।

তবে নৈতিকভাবে জিএস পদে বহাল থাকার অধিকার গোলাম রাব্বানীর নেই বলে দাবি করেছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। এছাড়া গোলাম রাব্বানী নিজের ‘নৈতিক উপলব্ধি’ থেকে পদত্যাগ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। নুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতেই তিনি ছাত্রলীগের পদ হারিয়েছেন। সুতরাং জিএস পদে বহাল থাকার নৈতিক কোনো অধিকার তার থাকবার কথা না।

এদিকে, ছাত্রলীগের নেতাদের পদ হারানোর বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করছেন দুর্নীতি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। শেখ হাসিনা নিজেই ছাত্রলীগের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দেখভাল করছেন। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছে। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং বাধ্যতামূলক পদত্যাগ করানো হয়েছে।

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন। ক্ষমতার অপব্যবহার করলে কেউ ছাড় পাবে না। কেউ দুর্নীতি বা অপরাধ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে পড়লে সে রেহাই পাবে না। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা শোভন ও রাব্বানীর এ অবস্থার জন্য তাদের অপরিপক্বতাকে দায়ী করেছেন। তারা বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের অদক্ষতাকে ব্যবহার করে কিছু নেতা সুবিধা নিয়েছেন। এটা অভিজ্ঞ নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে কাজ করার ফল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close