উখিয়া প্রতিনিধি

  ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

আন্তর্জাতিক সংস্থার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে উদ্যোগ নেই

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে উদ্যোগ নেই জাতিসংঘ ও এনজিওগুলোর। মোটা টাকার চাকরি হারানোর ভয়ে তারা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিচ্ছে না। তার প্রভাবে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে না চেয়ে নানা ধরনের দাবি-দাওয়া তুলে ধরছেন।

প্রত্যাবাসনের ছাড়পত্র পাওয়া মমতাজ বেগম (২৬) নামে এক রোহিঙ্গা নারী সাক্ষাৎকারে বলেছেন,

তিনি আর মিয়ানমারে ফেরত যাবেন না। স্বামী শামসুল আলম এবং কোলে থাকা ৩ মাসের শিশু মোহাম্মদ রুমেনকে দেখিয়ে বলেন, কেমন করে ফিরে যাই বলুন, প্রত্যাবাসনের তালিকায় স্বামী ও সন্তানের নাম নেই। তাদের ছাড়া সেখানে গিয়ে কী করব?

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর দায় কি শুধু বাংলাদেশের। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোর কি এ বিষয়ে কোনো দায়দায়িত্ব নেই! রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে অনেকের বিলাসিতা বন্ধ হয়ে যাবে বলে তারা কিছু বলছেন না। রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে উৎসাহ জোগাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমম্বয়ে ক্যাম্পভিত্তিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি।

এদিকে ২২ আগস্ট থেকে ১৩ দিন বন্ধের পর ৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রত্যাবাসনের ছাড়পত্র পাওয়া রোহিঙ্গাদের আবারও সাক্ষাৎকার শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ৪২৩ পরিবার ছাড়পত্র পাওয়া রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। গত বুধবার ১টি পরিবার এলেও বৃহস্পতিবার কোনো রোহিঙ্গা সাক্ষাৎকার দিতে আসেনি বা স্বেচ্ছায় মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার আগ্রহ দেখায়নি।

সাক্ষাৎকার গ্রহণস্থল শালবাগান ২৬নং ক্যাম্পের সিআইসি উপসচিব মো. খালেদ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা যা বলছে সবই শেখানো কথা।

গত ২০, ২১ ও ২২ আগস্ট টেকনাফের শালবাগান শরণার্থী শিবিরে তৈরি করা বিশেষ বুথে ইউএনএইচসিআর এবং আরআরআরসির কর্মকর্তারা প্রত্যাবাসনে তালিকাভুক্ত ৩৩৯টি পরিবারের সাক্ষাৎকার নেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২২ আগস্ট ৩ হাজার ৫৪০টি পরিবারের প্রত্যাবাসন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অনীহার কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্বিতীয়বারের মতো স্থগিত হয়ে যায়। প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্তদের মধ্যে শুধু শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরেই ৯৩৩ পরিবারের ৩ হাজার ৪৫০ জনের নাম রয়েছে।

প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু হলে কিছু মহলের শেখানো কথায় রোহিঙ্গারা একই সুরে নানা শর্ত জড়িয়ে দিতে থাকে। যেমনটি আগের সাক্ষাৎকারেও রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা এবং গণহত্যার বিচার চেয়েছেন। একই সঙ্গে নিজেদের ফেলে আসা সম্পত্তির অধিকার এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি করছে রোহিঙ্গারা।

চাকমারকুল ক্যাম্পের রোহিঙ্গা আলি জোহার, বালুখালী-২ ক্যাম্পের হাফেজ আবদুস সোবহান বলেন, যতক্ষণ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা যাবে না ততক্ষণ প্রত্যাবাসন করা জটিল হবে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর দায় কি শুধু বাংলাদেশের। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোর কি এ বিষয়ে কোনো দায়দায়িত্ব নেই! রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে অনেকের বিলাসিতা বন্ধ হয়ে যাবে বলে তারা কিছু বলছেন না। রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে উৎসাহ জোগাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমম্বয়ে ক্যাম্পভিত্তিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে তারা ফিরে যেতে রাজি আছেন। ক্যাম্পে বিছিন্নভাবে প্রত্যাবাসন তালিকা প্রস্তুতের পরিবর্তে পাড়া ও গ্রামভিত্তিক তালিকা তৈরি করে সে অনুযায়ী ফেরত নেওয়া হলে তাদের জানমালের নিরাপত্তায় কিছুটা ভরসা থাকে। কারণ আরসার সিদ্ধান্তের বাইরে ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা ফেরত গেলে জানমালের হুমকি রয়েছে।

তবে রোহিঙ্গারা বলছে, বাংলাদেশে এসে অন্তত ৪৫/৫০ হাজারের মতো বিয়ে হয়েছে ক্যাম্পগুলোতে। ফলে বাংলাদেশ থেকে যে তালিকা মিয়ানমারে পাঠানো হচ্ছে তার সঙ্গে মিয়ানমারের কাছে থাকা পারিবারিক তালিকার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই প্রত্যাবাসন তালিকা করার সময় এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

১৯৭৮ ও ১৯৯৩ সালের মতো ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে না নিয়ে সরাসরি অভ্যর্থনা কেন্দ্র থেকে স্ব স্ব পাড়া গ্রামে যেতে দিলে প্রত্যাবসান কার্যক্রম সহজ হবে বলে রোহিঙ্গারা মত দেন। রাখাইন মুসলিম, ধর্ম ইসলাম স্বীকৃতি দিয়ে ফিরিয়ে নিলে নিজ উদ্যেগে রোহিঙ্গারা তাদের ঘরবাড়ি নির্মাণ, মেরামত করে নেবে। অভ্যর্থনা কেন্দ্রে এনভিসি কার্ডের জন্য চাপাচাপি না করে কয়েক মাস পর যখন নাগরিকত্বের আবেদন করবে তখন এনভিসি কার্ড দেওয়া যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, আলিকিন বা আরসা, দেশি বিদেশি এনজিও, ইউএন সংস্থাগুলো সবাই একাকার। রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন বিলাসী প্রকল্পের নামে এসব সংস্থার কর্মীরা আয়েশি জীবন কাটাচ্ছে। পলিথিনের ছোট্ট খুপরিতে ৮/১০ সদস্যের পরিবার নিয়ে চরম দুর্ভোগে জীবন কাটাতে হয় রোহিঙ্গাদের। আর শান শওকত, বিলাসিতা আর চাকরি হারানোর ভয়ে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফেরত চলে যাক সেটা তারা চায় না। গত দুই বছরেও ইউএন সংস্থা ও আইএনজিওগুলো রোহিঙ্গা ফেরত যাওয়ার মতো সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। রোহিঙ্গারা জানান, যারা মিয়ানমারে হাটবাজারে পর্যন্ত যেতে পারেনি সেসব রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে লাখ লাখ টাকার মালিক। তারা এখানে সবকিছুতে নেতাগিরি করছে। ক্যাম্পে দোকানপাট, সিএনজি, টমটমসহ নানা ধরনের ব্যবসা রয়েছে। এনজিওতে চাকরি রয়েছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের এই ব্যবসা ও চাকরি বন্ধ করা না হলে তাদের ফেরত পাঠানো কঠিন হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close