শাহজাহান সাজু

  ২১ আগস্ট, ২০১৯

বিটাকের নিয়োগে স্বচ্ছতার নজির

জনবল নিয়োগে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) স্বচ্ছতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে ২২ আগস্টের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নের কথা বলা থাকলেও ৮ আগস্টের মধ্যেই তা সম্পন্ন করে বিটাক। অর্থাৎ দরখাস্ত জমা নেওয়ার দেড় মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। তাছাড়া নিয়োগ নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না উঠে সেজন্য নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা বিটাকের বাইরের তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সম্পন্ন করিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানও বিটাকের এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বিটাক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিটাকের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো. মফিজুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বিটাক ৫৭ বছরের পুরোনো একটি চমৎকার কারিগরি প্রতিষ্ঠান। তবে অন্যান্য কারিগরি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এর বেতন স্কেল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় এখানে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পর্যায়ের প্রকৌশলীদের ধরে রাখা যায় না। শুরুতেই অত্যন্ত মেধাবী প্রকৌশলীরা যোগদান করেন বটে কিন্তু ভালো চাকরি পেলেই চলে যান। বিটাকের কাজের ধরন অনুযায়ী নিচের দিকেও এখানে খুব ভালো মানের দক্ষ টেকনিশিয়ান প্রয়োজন হয়। অথচ টেকনিক্যাল নন-টেকনিক্যাল অর্থাৎ দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে অতীতের বিভিন্ন সময়ে এমন কিছু অযোগ্য (৫ম থেকে ৮ম শ্রেণি পাস) লোক ঢুকে গেছে, যাদের দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত দুরূহ। সে কারণেই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হওয়া প্রয়োজন যাতে মেধাসম্পন্ন যোগ্য লোককে নিয়োগ দেওয়া যায়।

মহাপরিচালক আরো জানান, তার সময়ে নিয়োগ নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন যাতে না উঠে সেজন্য তিনি যোগদানের পর থেকেই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা বিটাকের বাইরের তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সম্পন্ন করিয়েছেন এবং কোনো ধরনের তদবিরকে প্রশ্রয় না দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছেন। ফলে গত নভেম্বর মাসের নিয়োগ পরীক্ষার সময় বিটাকের কর্মচারীদের পক্ষ থেকে প্রচন্ড চাপ থাকা সত্ত্বেও তিনি এতে কর্ণপাত করেননি। ঠিক একইভাবে এবারের নিয়োগেও সে নিয়ম অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

বিটাক সূত্র জানায়, গত ২৫ মে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ৩২ জনের নিয়োগের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়ার পর জেলা কোটার প্রাপ্যতা উল্লেখ করে দুইটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় গত ২৭ মে। দরখাস্ত জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ২০ জুন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেই বলা হয়েছিল এই নিয়োগ প্রক্রিয়া ২২ আগস্টের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। প্রথম শ্রেণির ৪টি পদের জন্য দরখাস্ত পড়েছে ৩২৫টি, দ্বিতীয় শ্রেণির ১টি পদের জন্য ৩৯ টি, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ২৪টি পদের বিপরীতে দরখাস্ত পড়েছে ৮৯২টি। বাছাই শেষে সব মিলিয়ে ২৭৭টি দরখাস্ত বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রথম শ্রেণির ৯ম গ্রেডে নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট (সিটিআই) এবং অন্যান্য পদের লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারকে (বিকেটিটিসি)। দুটি প্রতিষ্ঠানই লিখিত পরীক্ষা, ডিএমজি-৩ ও কম্পিউটার অপারেটর পদের ব্যবহারিক পরীক্ষা নিয়ে সিলগালা করে রেজাল্ট বিটাকের কাছে পাঠিয়েছে। লিখিত পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে গত ২৮ এবং ২৯ তারিখ প্রথম শ্রেণি ব্যতিত অন্যদের ভাইবা বা মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে এবং নিয়োগের জন্য সুপরিশকৃতদের নামের তালিকা ১ আগস্ট বিটাকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সিলেকশন কমিটি কর্তৃক প্রথম শ্রেণির নিয়োগের জন্য মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় গত ৩০ জুলাই। ৪ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদের ১১১তম সভায় সিলেকশন কমিটির সুপারিশ অনুমোদন হওয়ায় ৮ আগস্ট নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। নিয়োগপ্রাপ্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আগামী ২২-২৯ আগস্টের মধ্যে চাকরিতে যোগদানের জন্য এরই মধ্যে নিয়োগপত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিজ্ঞপ্তিতে ২২ আগস্টের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নের কথা বলা থাকলেও বাস্তবে ৮ আগস্টে মধ্যেই তা সম্পন্ন করে বিটাক একটি অনন্য নজির স্থাপন করেছে। অর্থাৎ দরখাস্ত জমা নেওয়ার দেড় মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিটাকের সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান মহাপরিচালক আসার পর গত নভেম্বরে ৫৪ জন নিয়োগ পেয়েছেন এবং এখন ২৭ জনের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। দুটো নিয়োগ প্রক্রিয়াই স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং মেধাভিত্তিক হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটাকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া একজন চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, গত জুন মাসের ২০ তারিখ ছিল চাকরির আবেদন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১৯ জুলাই বিকেটিটিসিতে, ওই দিনই বিকাল ৫টার পর লিখিত পরীক্ষার ফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরদিন ৪৫ জনের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয় একই প্রতিষ্ঠানে। সেখানেই ঘোষণা দেওয়া হয় মৌখিক পরীক্ষা হবে ২৮ ও ২৯ জুলাই। তাছাড়া মৌখিক পরীক্ষার শুরুর আগে বিটাকের মহাপরিচালক উপস্থিত সব প্রার্থীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, নিয়োগ পরীক্ষা হবে শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে, কারো প্রতি অবিচার করা হবে না, তদবিরের কারণে কাউকে বিন্দু পরিমাণ অন্যায় সুবিধা দেওয়া হবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close