নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ আগস্ট, ২০১৯

‘গ্রেনেডের শব্দে হার্ট অ্যাটাক করেছিলাম’

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য শেষে ‘জয় বাংলা’ বলার সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দ, পুরো এলাকা অন্ধকার। চারদিকে শুধু চিৎকার আর বাঁচার আর্তনাদ। আমি মাটিতে পরে গেলাম, এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। দৈনিক প্রতিদিনের সাংবাদের কাছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার স্মৃতির ঘটনা এভাবে বর্ণনা করেছেন হামলার শিকার হওয়া আহত সাভারের মাহবুবা পারভীন। আইভি রহমানের পাশে যে তিনজন নারী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন তাদেরই একজন মাহবুবা পারভীন। অজ্ঞান অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশ ঘরে পড়েছিলেন দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা। এরপর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আশিষ কুমার মজুমদার লাশ শনাক্ত করতে গিয়ে মাহবুবা পারভীনকে তিনি জীবিত দেখতে পান। ৭২ ঘণ্টা পর তার জ্ঞান ফিরে আসে। উন্নত চিকিৎসার জন্য সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাকে ভারতের কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠান। মাহবুবা পারভীনের দেহে এখনো রয়েছে ১ হাজার ৮০০ স্পিøন্টার। তার কোনো খোঁজখবর না নিলেও প্রধানমন্ত্রী এখনো তার খোঁজখবর নিচ্ছেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি আমাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।

ওইদিনের ঘটনার স্মৃতি স্মরণ করে মাহবুবা পারভীন বলেন, ‘শুনেছি সেই গ্রেনেডের শব্দে আমি হার্ট অ্যাটাক করেছিলাম। আমার দুটা কানের পর্দা ফেটে রক্ত ঝরছিল। তখনকার আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক আশিষ কুমার মজুমদার আমাকে সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আমার পরিবারের সকলেই খুঁজতে ঢাকায় চলে আসেন। অনেক খোঁজার পর আমাকে তারা পেয়ে যান। আমার অবস্থার যখন অবনতি হতে থাকে, তখন স্বেচ্ছাসেবক লীগের তখনকার সভাপতি বাহাউদ্দিন নাসিম ভাই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আমার বিষয়টি জানান। তখন নেত্রী সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. রুহুল হককে আমার দায়িত্ব দেন।’

তিনি বলেন, ‘আমার শরীরে ১৮০০ স্পিøন্টারের যন্ত্রণা এতটাই তীব্র যে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ওই ঘটনার তিন বছর আমি রাত ৩টার সময় যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে আমার শরীরে ব্লেড দিয়ে স্পিøন্টার বের করার চেষ্টা করেছিলাম। যার কারণে আমার পায়ে পচন ধরে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম পঙ্গু হয়ে যাব। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে পা দুটো বেঁচে যায়। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরে অনেক সময় ফোন আসত, ফোনে আমাকে অনেক সময় বলা হতো, সাক্ষীটা না দিতে।’

হামলার আরেক শিকার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন। ওই ঘটনায় তার খাদ্যনালির ৬ ইঞ্চি কেটে ফেলতে হয়েছিল। বর্বরোচিত সে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা এখনো ১০ থেকে ১২টি স্পিøন্টার শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন। সেদিনের সেই ভয়াবহ স্মৃতি মনে হলে এখনো আঁতকে ওঠেন তিনি।

ওইদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি শুধু নই, আহতরা সবাই কৃতজ্ঞ। আমাদের উনি চিকিৎসা করিয়েছেন। এজন্য আমরা ওনার জন্য দোয়া করি, শুকরিয়া আদায় করি আল্লাহর কাছে।’

ওইদিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘সেদিন আমি ট্রাকের সিঁড়ির কাছে ছিলাম। সেখানে আমার পাশে আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আমিনুল ইসলাম আমিন, এ কে এম এনামুল হক শামীম, ইসহাক হোসেন পান্নাসহ অনেক সাবেক ছাত্রনেতা ছিলেন। একটা বিকট আওয়াজ শোনার পর আমি পরে গেলাম। প্রথম গ্রেনেডেই আমি আহত হয়েছিলাম। এরপর আরো কয়েকটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়। তবে আমার জ্ঞান ছিল। পরে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আপার (শেখ হাসিনা) ড্রাইভার আলী হোসেন ও শাহজাহান। আপার গাড়িতে আমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার তখন পর্যন্ত জ্ঞান ছিল, আমার সারা শরীর রক্তে ভেজা, শরীরে প্রচন্ড যন্ত্রণা। ঢাকা মেডিকেলে কোনো ওষুধ নেই, ডাক্তার নেই; তখন আমার কয়েকজন শুভাকাক্সক্ষী আমাকে ধানমন্ডি ডেল্টা ক্লিনিকে নিয়ে গেল। এরপর আমার আর কোনো জ্ঞান ছিল না। পরদিন আমার অপারেশন করা হয়। শুনেছি, আমার খাদ্যনালির ৬ ইঞ্চি কেটে ফেলতে হয়েছিল। এরপর জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে উচ্চ চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠান।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close