হাসান ইমন

  ১৯ আগস্ট, ২০১৯

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ

মশক নিধনে চিরুনি অভিযানে ঢাকা উত্তর * দক্ষিণে ফোর টেকনিক

রাজধানীতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এরমধ্যে ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) আগামীকাল বিশ্ব মশা দিবস থেকে মাসব্যাপী চিরুনি অভিযান চালাবে। আর ঢাকা দক্ষিণ (ডিএসসিসি) গতকাল থেকে ‘ফোর টেকনিক’ কর্মসূচি শুরু করেছে। এ কর্মসূচি চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশার কামড় থেকে বাঁচতে ব্যক্তি সচেতনতার বিকল্প নেই।

জানা যায়, ডিএনসিসি চিরুনি অভিযান পরিচালনা করতে প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০ ভাগে ভাগ করে মনিটরিং কাজ করবে। আর এ কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে প্রতি ওয়ার্ডে ৩০ জন করে ৫৪টি ওয়ার্ডে ১ হাজার ৬২০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ করেছে। মাস্টাররোলে নিয়োগে এসব কর্মী আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজ করবে।

আর ডিএসসিসি নিয়মিত কর্মসূচি হিসেবে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমকে আরো জোরালো করবে। আর প্রতি ওয়ার্ডে গঠিত ১০ জনের পরিচ্ছন্ন দল দৈনিক ৫০টি করে বাসাবাড়িতে ঢুকে মশার উৎপাদন স্থান ধ্বংস করবে। একই সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিও সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে নগরবাসীকে সচেতন করার চেষ্টা করবে। এত কিছুর পরও যারা সচেতন হচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ডিএসসিসি। আর এ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ডিএসসিসি ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে নেওয়া পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেট এবং ডিএসসিসির পাঁচ আঞ্চলিক কর্মকর্তা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই বলেন, ‘মৌসুমের বাকি সময়ের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ডিএনসিসি ২০ আগস্ট থেকে চিরুনি অভিযান শুরু করবে। মাসব্যাপী চলবে ডিএনসিসির এই চিরুনি অভিযান।’

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মৌসুমের বাকি সময়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ‘ফোর টেকনিকে’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করেছে ডিএসসিসি। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগস্টের বাকি সময়টা সঠিকভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আবহাওয়ার গতিবিধির ওপর নির্ভর করছে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, না অবনতি হবে। তাদের মতে, আবহাওয়া পরিবর্তন না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে। আর আবহাওয়া পরিবর্তন হলে পরিস্থিতির উন্নতিও হতে পারে।

গত শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আগামী এক সপ্তাহের আবহাওয়ার গতিবিধি পর্যালোচনা না করে ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতির ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ব গবেষক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গুর সাইকেলে আগস্টের বাকি সময় খুবই কঠিন হতে পারে। এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে আরো সক্রিয় হতে হবে; শুধু সড়কে নয়, মানুষের বাসাবাড়িতে ঢুকেও ফগিং করে বড় মশা নিধন করতে হবে।

তিনি বলেন, নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে নিজেদেরও মশার কামড় থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এজন্য স্প্রে, ক্রিম, অ্যারোসল ব্যবহার করা যেতে পারে। এ গবেষক আরো বলেন, সরকারি দফতরগুলোতে যাতে কোনোভাবে মশার প্রজনন না হতে পারে, এ ব্যাপারে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা যেতে পারে। কেননা, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করাই প্রধান কাজ।

এ ব্যাপারে কীটতত্ত্ব গবেষক ড. এ কে আজাদ বলেন, ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। মশার কামড় থেকে বাঁচতেই হবে; এজন্য প্রটেকশন হিসেবে বাসাবাড়িতে সব সময় কয়েল, ভ্যাবারাইজার, অ্যারোসল ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি বলেন, বাসাবাড়ির পর্দা ও ওয়্যারড্রপ নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের বর্ষার মৌসুমের শুরু থেকেই রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। আর মশক নিধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এ সময় অকার্যকর ওষুধ প্রয়োগ করেছে। কঠোর সমালোচনার মুখে চলতি মাসে কার্যকর ওষুধ আমদানি করেছে দুই সিটি করপোরেশন। এখন কার্যকর ওষুধ প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে দুই সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি দফতর ও সংস্থা মাঠে নেমেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close