নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ আগস্ট, ২০১৯

ডেঙ্গু পরিস্থিতি

সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৬ শতাংশ রোগী

চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৬ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হয়েছেন ৫৩ হাজার ১৮২ জন। আর চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৫ হাজার ৯৭৪ জন। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত পর্যালোচনা সভায় স্বাস্থ্য অধিদফতর এই তথ্য জানায়। এদিকে, সুস্থ হওয়ার পরও একজন রোগী ১০ থেকে ১৫ দিন ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে। তাই এই সময়টা আবারো এডিসের কামড় হতে পারে আরো ভয়ঙ্কর। বিপদ ডেকে আনতে পারে আশপাশের মানুষের। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া রোগীদের বেশি সতর্ক থাকতে বলছেন ঢাকায় সফররত সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ডা. মো. তৌফিক ইসলাম।

তিনি জানান, কীভাবে ডেঙ্গুতে সাফল্য পেয়েছে দেশটি। বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা আর কমিউনিটি লেভেলের কার্যক্রমই মূল চাবিকাঠি। ওখানে প্রতিটি নাগরিকের ঘরে ঘরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে লিফলেট দেওয়া হয়। এছাড়া সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে যে বাসায় যেন মশার লার্ভা জন্ম না নেয়। সেখানে সপ্তাহে এবং মাসে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ভিজিট করে, তারা যদি লার্ভা পায় তাহলে জরিমানা হয়।

ন্যাশনাল গাইড লাইনের প্রশংসা করলেও তিনি বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় দক্ষতা দেখিয়েছেন এদেশের চিকিৎসকরা। তবে হাসপাতাল থেকে ফিরেও ১০-১৫ দিন ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে একজন রোগী তাই ওই সময়টাতেও থাকতে হবে সাবধানতায়। এক্ষেত্রে এ বিষয়ে কাউন্সিলিংয়ের পরামর্শ এই বিশেষজ্ঞের।

ডা. মো. তৌফিক ইসলাম বলেন, যে রোগী হাসপাতাল থেকে চলে যাচ্ছে তার মধ্যে ভাইরাস থাকে ১০ থেকে ১২ দিন। তাকে কিন্তু কোনো পরামর্শ দেওয়া হয় না। এই সময় যদি তাকে ডেঙ্গু মশা আবার কামড় দেয় তাহলে অবস্থা খুবই মারাত্মক হবে।

এসব পরামর্শ আমলে নিয়ে নতুন পরিকল্পনার কথা জানালেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, মানুষকে তার নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে হবে। হাসপাতাল থেকে মুক্ত হওয়ার পরও ভুললে চলবে না যে আমার কারণে অপরজন আক্রান্ত হতে পারে। কাজেই এই ধরনের পরামর্শ আরো দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করব। ডেঙ্গু পরিস্থিতি তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশাবাদী তিনি।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সভায় রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা, হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার, ডেঙ্গুবিষয়ক কার্যক্রমের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনে থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন ১ হাজার ৭০৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ১৭ ও ১৮ তারিখ ২ হাজার ৩৯৪ জন ছাড়প্রাপ্ত নিয়েছেন। যার মধ্য ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৩৪ জন এবং ঢাকার বাহিরে ভর্তি হয়েছেন ৯৭২ জন। ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪০ জন।

এছাড়াও ঢাকার ৪০টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৬৬৮ জন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ৫০০ জন ভর্তি রয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯৭, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৯৩, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৯, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৫২, বিএসএমএমইউতে ৩৬, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ২১, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬১, বিজিবি হাসপাতাল পিলখানায় ৩, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ২১, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৫০ এবং অন্যান্য হাসপাতাল (নিটোর) ৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।

ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে (ঢাকা শহর ছাড়া) ২৫২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮৮ জন, খুলনা বিভাগে ১৩৩ জন, রংপুর বিভাগে ৬৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ১২০ জন, বরিশাল বিভাগে ১৪০ জন, সিলেট বিভাগে ১৯ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close