নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ আগস্ট, ২০১৯

এবার কর্মস্থলে ফেরার লড়াই

ট্রেনে সেই শিডিউল বিপর্যয়

প্রিয় গ্রাম আর প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে কাটানো মুহূর্তের অবসান। এবার বিদায়ের পালা। কর্মচঞ্চল শহরে কাজে যোগ দেওয়ার পালা। আজ রোববার থেকে পুরোদমে শুরু হচ্ছে অফিস-আদালত। তাই ছুটির আড়মোড় ভেঙে গতকাল শনিবার ঢাকা ফেরত মানুষের চাপ ছিল রেলস্টেশনগুলোতে। কমলাপুর রেলস্টেশনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩৭টি ট্রেন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছে। প্রতিটি ট্রেনেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। ভিড় ঠেলে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাই ফিরছেন ব্যস্ত নগরীতে।

এক যাত্রী জানান, ঈদ অনেক ভালো হয়েছে। তবে কয়েকটি রুটেই যানজট পড়তে হয়েছে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের। দেশের

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রিয় বাহন লঞ্চেও ছিল স্বস্তির নিঃশ্বাস। তবে অভিযোগ ছিল অতিরিক্ত যাত্রী বহন আর কয়েকটি লঞ্চে কাক্সিক্ষত সেবা না পাওয়ার। এছাড়া নৌপথে ধীরগতিও ছিল কিছুটা।

এদিকে, ছুটি শেষে রাজধানীতে ফিরতেও ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয়ের কবলে পড়েছেন যাত্রীরা। গতকাল সকালে কমলাপুর রেলওয়ে গিয়ে জানা যায়, রাজশাহী থেকে ছেড়ে এসে ঢাকাগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে কমলাপুর আসার কথা ছিল। তবে এটি আসার সম্ভাব্য সময় ছিল ১০টা ২০ মিনিট। খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে কমলাপুর আসার কথা থাকলে এটি সকাল ১০টায় আসার কথা বলা হয়।

রংপুর থেকে ঢাকাগামী রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ৫ মিনিটে কমলাপুর আসার কথা ছিল। তবে সেটির আসার সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে বিকাল সাড়ে ৩টায়। চিলহাটি থেকে ঢাকাগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ১০ মিনিটে আসার কথা ছিল। পরে সেটি আসার সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে বেলা ১১টা।

পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী একতা এক্সপ্রেস সকাল ৮টা ১০ মিনিটে কমলাপুর আসার কথা থাকলেও সেটি বেলা সাড়ে ১১টায় স্টেশন পৌঁছানোর কথা বলা হয়।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম জানান, ফিরতি পথে যাত্রীদের চাপের কারণে ট্রেন আসতে বিলম্ব হচ্ছে। বগুড়া প্রতিনিধি জানান, ঢাকামুখী বাসস্ট্যান্ডগুলোয় মানুষের প্রচ- ভিড়। গাড়ির জন্য এদিক-ওদিক ছুটতে দেখা যাচ্ছে তাদের। কেউ বাসের আসন পেয়েছেন কেউ আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বাসের ভেতরে। আবার অনেকে জায়গা করে নিয়েছেন বাসের ছাদ বা ট্রাকে।

জানা যায়, নওগাঁ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধাসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা সরাসরি ঢাকার বাস না পেয়ে ভেঙে ভেঙে বগুড়ায় আসছেন। কিন্তু বগুড়ায় এসেও দেখেন বাসের চিত্র একই রকম। তবে এখানে বাসে জায়গা না পেলেও ঢাকা যাওয়ার মতো উপায় আছে। এ কারণেই মূলত তারা বগুড়া আসছেন।

সরকারি চাকরিজীবী মফিজুল ইসলাম বলেন, গত বুধবার থেকে সরকারি ছুটি শেষ। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বুধবারের ছুটি নিয়েছিলাম। আজ রোববার অবশ্যই অফিস করতে হবে। তাই কষ্ট হলেও ঢাকা চলে যেতে হবে।

টিকিট বিক্রেতা আজিজ ও সেলিম বলেন, প্রত্যেক ঈদেই ঘরে ও কর্মস্থলে ফেরার পথে বাসের সংকট দেখা দেয়। মূলত মহাসড়কে যানজটের কারণে এমনটি হয়। এছাড়া উত্তরের যাত্রীরা চাহিদামতো যানবাহন না পেয়ে বগুড়ায় চলে আসেন। এ কারণে প্রত্যেক ঈদেই বগুড়ায় যাত্রীদের বাড়তি চাপ থাকে। তবে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, ঢাকাগামী যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ঘাটে। গতকাল সকালে পদ্মাপাড়ের ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, মেঘলা আকাশে হালকা বাতাসের মধ্যে চাঞ্চল্য ফিরেছে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিতে। স্পিডবোটে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে বেশি। পদ্মা উত্তাল থাকলেও স্পিডবোটগুলোয় লাইফ জ্যাকেট থাকায় যাত্রীরা স্বচ্ছন্দ গতিতেই পদ্মা পার হচ্ছেন। তবে স্পিডবোটে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকে।

গোপালগঞ্জ থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রী রবিন মিয়া বলেন, ঈদের ছুটিতে বেশ কয়েক দিন বাড়িতে ছিলাম। কেন যেন যেতে ইচ্ছা করছে না। মন চাইছে আরো কিছুদিন থাকি। কিন্তু কাল কাজে যোগ দিতে হবে। যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। পদ্মা পার হতে কোনো ঝামেল হচ্ছে কি-না জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, বাড়ি থেকে খুব ভোরে রওনা দিয়েছি, যাতে ভিড় বাড়ার আগেই পদ্মা পার হতে পারি। কিন্তু ঘাটে এসে দেখি প্রচ- ভিড়। বরিশাল থেকে আসা পাভেল হাসান বলেন, বাড়ি এলে আর ঢাকায় যেতে মন চায় না। জীবিকার তাগিদে ইচ্ছা থাকলেও বাড়িতে থাকা হয় না বেশি দিন। স্পিডবোটের বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, স্পিডবোট ২০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে। অথচ আগে ছিল ১৫০ টাকা। তবে মূল ভাড়া হচ্ছে ১৩০ টাকা। সারা বছরই ভাড়া বেশি নেয়। আর ঈদ এলে আরো বেশি। তবে বিআইডব্লিউটিএর কাঁঠালবাড়ী লঞ্চ ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, কেউ তাদের কাছে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেনি। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্পিডবোট ঘাটে পুলিশ সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করছে বলে তিনি জানান।

নদী শান্ত থাকায় লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রীদের ভিড় সকাল থেকেই বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, সব নৌযান চলাচল স্বাভাবিক থাকায় যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে পার হতে পারছেন। কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌপথে এখন ৮৭টি লঞ্চ, ১৭টি ফেরি ও দুই শতাধিক স্পিডবোট চলছে বলে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close