প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৭ আগস্ট, ২০১৯

৫০ হাজার ছাড়িয়েছে ডেঙ্গু রোগী

গতকাল সারা দেশে ১ হাজার ৭১৯ রোগী শনাক্ত

কয়েক দিন আগেও দৈনিক হিসাবে সারা দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে আসছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতি ও গতকাল শুক্রবার সারা দেশে রোগীর সংখ্যা আবারও বাড়তে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১ হাজার ৭১৯ জন রোগী জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৭৫৯ জন ডেঙ্গু রোগী রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং বাকি ৯৬০ জন দেশের অন্যান্য এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এর বাইরে মোট ডেঙ্গু রোগী আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। এই সংখ্যার ৮৪ শতাংশ রোগী চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। আর এখন পর্যন্ত ৪০ জন আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ইতিহাসে চলতি বছর রাজধানীসহ সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সর্বোচ্চ সংখ্যক (৫০ হাজার) ডেঙ্গু রোগী ভর্তির রেকর্ড গড়েছে।

এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪২ হাজার ২৪৩ জন অর্থাৎ আক্রান্তদের ৮৪ শতাংশ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৪৯ হাজার ৯৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সরকারি পরিসংখ্যানে, রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত মাত্র ৪০টি ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় হাসপাতালে ভর্তি রোগীকে এ হিসাবে দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক গুণ বেশি হতে পারে বলে অনেকেই বলছেন। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা মাত্র ৪০ জন বলা হলেও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের তথ্য অনুসারে এ সংখ্যা কমপক্ষে দ্বিগুণ হতে পারে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৭১৬ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর ৪০টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ১৫ জন এবং অন্যান্য বিভাগীয় হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৭০১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডাক্তার আয়শা আক্তার জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭১৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা শহরে আক্রান্ত ৭৫৯ ও বিভাগীয় শহরে আক্রান্ত ৯৬০ জন।

গতকাল দুপুরে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেন, আগামী সপ্তাহে বোঝা যাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সরকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।

চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় ৩০ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত : দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমার সংবাদ আসলেও চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটেনি। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৩০ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের সবগুলো জেলায় নতুন করে আরো ২১৮ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদিকে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মহানগর ও জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে আরো ১০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের সবগুলো জেলায় (মহানগরসহ) মোট ২১৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডেঙ্গুতে কলেজ ছাত্রের মৃত্যু : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে কায়ছার (১৮) নামে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে নাসিরনগর উপজেলায় প্রথম মৃত্যু এটি। গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় এ ঘটনা ঘটে। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার প্রত্যন্ত চাতলপাড় ইউনিয়নের চাতলপাড় গ্রামের বারামহাটিপাড়ার সুরুজ মিয়ার ছেলে। নিহত কায়ছার চাতলপাড় কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

চাতলপাড় কলেজের অধ্যক্ষ ওমর আলী বলেন, নিহত কায়ছার ঢাকায় থাকা অবস্থায় জ্বরে আক্রান্ত হয়। তার পরিবারের লোকজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করে জানতে পারে সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। নিহতের বড় ভাই শফিকুল জানায়, কায়ছার ঢাকা থাকা অবস্থায় জ্বরে আক্রান্ত হয়। তারপর তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হই। ওই দিনই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে দুই দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সে পালিয়ে যায়। পরে রাজধানীর রামপুরা থানার এক কর্মকর্তা তাকে উদ্ধার করে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুনরায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবার পর তার রক্তের প্ল্যাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নেমে আসে। তারপর থেকে সে পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে। পরে বাড়িতে এনে স্থানীয় কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করানো অবস্থায় সে মারা যায়।

মাদারীপুরে ডেঙ্গু রোগে মারা গেছেন ৭ জন : মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকর্মী তপন মন্ডল (৩৫) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার বিকালে মারা গেছেন।

সে গত এক সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার স্বজনরা জানিয়েছেন, তার শরীরে প্ল্যাটিলেটের পরিমাণ ৩০ হাজার ছিল। তপনের মৃত্যুর পরে মাদারীপুর জেলায় এখন পর্যন্ত সাতজন ডেঙ্গু রোগী মারা গেলেন।

মাদারীপুর সিভিল সার্জন শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তপনকে নিয়ে মাদারীপুরে এখন পর্যন্ত সাতজন ডেঙ্গু রোগী মারা যাওয়ার তথ্য আমরা পেয়েছি। তবে এদের মধ্যে কালকিনি ও শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা গেছেন। বাকি পাঁচজন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, বরিশাল মেডিকেল কলেজ ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিল। যারা মাদারীপুর জেলার বাসিন্দা।

এখন পর্যন্ত যারা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন তারা হলেনÑ মাদারীপুরের তপন কুমার মন্ডল, শিবচরের ফারুক খান, রিপন হাওলাদার, হাজী আবদুল মজিদ তস্তার, রাজৈর উপজেলার শারমিন আক্তার, কালকিনি উপজেলার জুলহাস বেপারী ও নাদিরা বেগম। এছাড়া এখন পর্যন্ত মাদারীপুর সদর হাসপাতালে শতাধিক ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close