নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ আগস্ট, ২০১৯

ডেঙ্গু : কমে আবার বেড়েছে

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও শিশুর মৃত্যু

দেশের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া নতুন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ঈদের দিন কমলেও তারপর দিনই আবার বেড়েছে। বর্তমানে সারা দেশের হাসপাতালে ৭ হাজার ৮৬৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। তার মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ১৪৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩ হাজার ৭২৬ জন। এদিকে পাবনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও ফরিদপুরে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪০ জন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদনÑ

ঢাকা : স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশের হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার ৮৮০ জন ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন, যা আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ১ হাজার ২০০ জন। সব মিলিয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৩৫১ জন; যাদের মধ্যে ৭ হাজার ৮৬৯ জন এখনো দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদনে বলছে, গত বুধবার সারা দেশে ১ হাজার ৫৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। গত মঙ্গলবার এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৫৯ জন, গত সোমবার ছিল ২ হাজার ৮৪১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদনে বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৭৫৫ জন, ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় ২৭৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯৪ জন, খুলনা বিভাগে ১৬৫ জন, রংপুরে ১১৪ জন, রাজশাহীতে ১৩২ জন, বরিশাল বিভাগে ১৫৬ জন, সিলেট বিভাগে ২১, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। এই সময়ে সারা দেশে ১ হাজার ৫৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৫৯ জন।

আয়শা আক্তার বলেন, সেপ্টেম্বর মাসও বৃষ্টির মৌসুম। আগামী সাত থেকে দশ দিন আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখব। ঈদের ছুটিতে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি না হলেও পরে আবার তা বাড়তে পারে। তবে আপাতত আমরা বলছি, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমছে।

তিনি জানান, স্বাস্থ্য বাতায়নের হটলাইন ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ জানতে পারবেন রোগীরা।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না পাবনার মাহফুজুর রহমান (২০) নামে এক যুবকের। ডেঙ্গু জ্বর কেড়ে নিল তার স্বপ্ন। মঙ্গলবার রাত ১২টায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত মাহফুজ পাবনা সদর উপজেলার চররামানন্দপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে। তিনি এবার এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মাহফুজ ঢাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পাবনায় আসেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আকসাদ আল মাসুর আনন জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় মাহফুজকে গুরুতর অবস্থায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত ১২টা ২০ মিনিটে তিনি মারা যান।

তিনি আরো জানান, তার প্লাটিলেট কমে যাওয়াসহ ব্রেনে ইফেক্ট করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি শেষ মুহূর্তে এসে ভর্তি হয়েছিলেন। রাতেই তার স্বজনরা লাশ নিয়ে গেছে।

এদিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে ৪ দিনে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ২৪৫ জন ডেঙ্গু ভর্তি ছিল। এর মধ্যে ১৯৮ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন। বর্তমানে ৪৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে।

ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তানজিদ মোল্লা (৯) রামে এক শিশু মারা গেছে। গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশুটি। শিশুটিকে গত রোববার ভর্তি করা হয়েছিল। তানজিদ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মাঝকান্দি এলাকার বাসিন্দা ভ্যানচালক জাহিদ মোল্লার ছেলে। তিন ভায়ের মধ্যে তানজিদ সবার বড়।

তানজিদ ফুপু রিনা বেগম জানান, তিন দিন জ্বরে ভোগার পর গত ১১ আগস্ট শিশুটিকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষায় ডেঙ্গুর ধরা পড়ে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা জানান, তানজিদ মধুখালীতে নিজ বাড়ি থেকেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়। তিনি বলেন, এ নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনজন মারা গেল।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা জানান, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২০ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ৫৭১ জন। এর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন ২৪৬ জন, ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৩১২ জন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close