জিয়াউদ্দিন রাজু

  ০৭ আগস্ট, ২০১৯

ডেঙ্গুতে আ.লীগের কর্মসূচি

কেন্দ্র সোচ্চার থাকলেও তৃণমূল ঢিলেঢালা

প্রথম দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে আমলে না নিলেও পরিস্থিতি অবনতির সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে আওয়ামী লীগ। ডেঙ্গু নিয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে দলের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে বেশ জোরালো কাজ করলেও তৃণমূলে ঢিলেঢালা কার্যক্রম চলছে। তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এ নিয়ে কাজ করলেও অনেক জায়গাতেই সচেতনামূলক দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর দুই নেতা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু এখন ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তাই আমরা সারা দেশে জেলা-উপজেলায় প্রতিটি নেতাকর্মীকে নির্দেশ দিয়েছি ডেঙ্গু মোকাবিলায় কাজ করতে। সাধারণ জনগণকে নিয়ে কাজ করতে বলেছি। ক্যাম্পিং অর্থাৎ ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় যা যা করণীয় তা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট (সোমবার) পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ২৭ হাজার ৪৩৭ জন ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি ৭ হাজার ৬৫৮ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৯ হাজার ৭৬১। সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১৮ জন (এপ্রিল ২ জন, জুন তিনজন ও জুলাই মাসে ১৩ জন) বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা বেশি হবে বলে দাবি করা হচ্ছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসক, আমলা, গৃহবধূ ও শিশুসহ সব বয়সের রোগী প্রায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি রোগী মারা গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে।

এর আগে ২৪ ঘণ্টায় (৪ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে ৫ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত) ঢাকা শহরসহ দেশের ৬৩ জেলায় (রাজশাহী বাদে) ২০৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে গত ৩ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরসহ দেশের ৬৩ জেলায় (রাজশাহী বাদে) ১৮৭০ জন, ২ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরসহ দেশের ৬৩ জেলায় (রাজশাহী বাদে) ১৬৪৯ জন, ১ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরসহ দেশের ৬৩ জেলায় (রাজশাহী বাদে) ১৬৮৭ জন, ৩১ জুলাই সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৭১২ জন, ৩০ জুলাই সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৪৭৭ জন, ২৯ জুলাই সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরসহ দেশের ৬০টি জেলার হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার ৩৫ জন, ২৮ জুলাই সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৫০ জেলায় ১ হাজার ৯৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, দেশের বর্তমান চলমান ডেঙ্গু ও বন্যা পরিস্থিতিই মোকাবিলা করাই এখন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান কাজ। এজন্য দলের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা প্রদক্ষেপ। এসব বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভা হয়। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, দলীয় সংসদ সদস্য, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নিয়ে জরুরি সভার আয়োজন করে দলটি। সভায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মহানগরী গড়ে তুলতে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা উপস্থিত নেতাদের সামনে তুলে ধরেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এ সময় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ওয়ার্ড সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা কাউন্সিলরদের সহযোগিতা করবেন। এডিস মশা ভয়ঙ্কর, এডিস মশা কামড় দিতে চেহারার দিকে তাকাবে না। সুযোগ পেলে সবাইকে কামড়াবে, রক্ত খাবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে, সাবধান থাকতে হবে। শেখ হাসিনার নির্দেশ, ডেঙ্গুমুক্ত বাংলাদেশÑ এটা শুধু মুখে নয়, অক্ষরে নয়, কাজে-অ্যাকশনে আমাদের পালন করতে হবে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ডেঙ্গু ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে আটকে গেছে দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। দল থেকে এসব বিষয়ে নানা পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত থাকলেও সেগুলো বাস্তবায়ন করতে দেরি হচ্ছে বলেই জানা যাচ্ছে। গত মাসে ঘোষিত দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম তেমন একটা জোরে আগানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ এর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করাদের বিরুদ্ধে দল থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থার বিষয়টিও আটকে গেছে এসবের মধ্যে। দলের আগামী কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে সারা দেশের তৃণমূলের কমিটি গঠনের পরিকল্পনা থাকলেও অনেক জেলা ও উপজেলায় এ বিষয়ে এখন কার্যক্রম নেই। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো ও মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু মোকাবিলার মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ায় দলীয় কার্যক্রম থেমে আছে বলে জানায় দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে থাকা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেন। এর ফলে দলটির নেতাকর্মীরা পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেন। তবে তৃণমূল পর্যায়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও সচেতনতায় নেওয়া কর্মসূচি ঢিমেতালে চলছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক শামছুর রহমান (ভিপি-লিটন) বলেন, আমাদের নেত্রকোনায় কোনো ডেঙ্গু নেই। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুসারে গত ২৪ ঘণ্টায় (৪ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে ৫ আগস্ট সকাল ৮টা) নেত্রকোনায় ৩ জন আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়ে। এ ছাড়া চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৪ জন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল ইসলাম বাবুল বলেন, এখানে তো ডেঙ্গু রোগী তেমন নেই। তবে যারা ঢাকা থেকে আসছে তাদের বিষয়ে আমরা নজর রাখছি। দল থেকে জনসচেতনামূলক কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। আমরা মানুষকে সচেতন করছি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়ে।

ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার চেয়ারম্যান ও আওয়ামী যুবলীগের নেতা মো. দিদারুল কবির বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমরা এখন পর্যন্ত ৪টি মেশিন কিনেছি। আমার প্রতিটি ইউনিয়নে ওষুধ ছিটানোর কাজ করছি। এ বিষয়ে গত রোববার ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা সবার সঙ্গে মিটিং করেছি। এছাড়া স্কুল-কলেজে শিক্ষকদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার কাজ করে যাচ্ছি। তিনি অভিযোগ করেন, সিন্ডিকেটে মেশিনের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, তাই মেশিন কিনতে সময় লাগছে, কারণ আমরা নিজ অর্থায়নে মেশিন কিনতেছি।

এদিকে দলের সভাপতির ঢাকার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গত শনিবার বিকালে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন ও সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে দলের পক্ষে ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও চিকিৎসা মনিটরিং সেল’ গঠিত হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close