প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ জুলাই, ২০১৯

হ্রাস পেলেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে নদী

নতুন করে নিম্নাঞ্চলে পানি

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সুরমা কুশিয়ারা ছাড়া দেশের সব নদ-নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে এবং মেঘালয়ের কিছু স্থানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা ও পদ্মার পানি হ্রাস অব্যাহত থাকতে পারে, সুরমা কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে আর ব্রহ্মপুত্রের পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

তিস্তা ও ধরলার পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে। আমাদের প্রতিনিধিরা জানয়েছেন, গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি, সিরাজগঞ্জে টাঙ্গাইলে ও জামালপুরে যমুনা নদীর পানি কমলেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। গাইবান্ধা : পানি দ্রুত কমতে শুরু করলেও গাইবান্ধার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে এবং গতকাল মঙ্গলবার ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল জলমগ্ন থাকায় বাঁধসহ বিভিন্ন অশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে বানভাসি মানুষ। এদিকে বাঙ্গালি ও করতোয়া নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পৌরসভাসহ কয়েকটি গ্রামে নতুন করে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়াও ঘাঘট নদীর শহর রক্ষাবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় খোলাহাটি ইউনিয়নের চকমামরোজপুর, কাজীপাড়া, বাহারবন পশ্চিমপাড়া, সরকারপাড়ার কিছু অংশ এবং ডেভিডকোম্পানীপাড়ার পশ্চিম অংশে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার সাত উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নের ৪২৪টি গ্রাম ও দুটি পৌরসভার ৫ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ঘরবাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৯ হাজার ৮৭০টি। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৯৭টি। এছাড়া ১৪ হাজার ২১ হেক্টর আউশ ধান, আমন বীজতলা, রোপিত আমন, পাট ও শাকসবজি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৭০ মেট্রিক টন চাল, ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পাওয়া তথ্য মতে, ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীতে বন্যার পানি ৩০ সেন্টিমিটার হ্রাস পেলেও এখনো বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডেও (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ করে চৌহালি উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার একটি বৃহৎ অংশে ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে বলে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান।

সহকারী কমিশনার এবং জেলা পুনর্বাসন ও ত্রাণ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জাকিয়া সুলতানা জানায়, বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের পরেও এখনো ৫০১ মেট্রিক টন চাল, ৮ লাখ টাকা, ৩৮৫টি তাঁবু, শুকনা খাবার ৭৫০ প্যাকেট মজুদ আছে।

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) : জামালপুরের বকশীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানি কিছুটা কমলেও দুর্ভোগ বাড়ছে। বানভাসিদের ত্রাণের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। কোনো নৌকা দেখলেই মানুষ ত্রাণের নৌকা মনে করে এগিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ, পর্যাপ্ত ত্রাণ দিতে পারছেন না উপজেলা প্রশাসন।

বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হওয়ায় প্রতিদিন ডায়রিয়া, আমাশয় ও পানিবাহিত রোগ বেড়েই যাচ্ছেই। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে। বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার ৭৫০টি গবাদিপশু বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার দুস্থ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছে স্থানীয় সংগঠন ‘আলহাজ খন্দকার হায়দার আলী স্মৃতি কল্যাণ সংস্থা।’ আলহাজ খন্দকার হায়দার আলী স্মৃতি কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আলহাজ খন্দকার হায়দার আলী স্মৃতি কল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। সমাজের এখন যে দুঃসময় এক্ষেত্রে সবারই এগিয়ে আসা উচিত।

কলমাকান্দা (নেত্রকোনার) : কলমাকান্দায় পানি নেমে গেলেও বন্যার পানিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বেশির ভাগ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খানাখন্দে ভরা এসব সড়কে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নয়ানগর গ্রামের মো. জুবেদ আলী বলেন, কলমাকান্দা-বরুয়াকোনা সড়কের সাড়ে সাত কিলোমিটার অংশে অসংখ্য ছোটবড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলো ভরাট না করায় চলাফিরা করতে কষ্ট হচ্ছে।

নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শাকিরুল ইসলাম বলেন, কলমাকান্দা-বরুয়াকোনা, ঠাকুরাকোনা-কলমাকান্দাসহ কয়েকটি সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের আগে এসব সড়ক যান চলাচলের উপযোগী করা হবে।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ দুটি নদীর পানি কমতে শুরু করলেও তিনটি নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত সোমবারের চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার যমুনা নদীর পানি ১৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে ধলেশ্বরী নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার কমে ৮২ সেন্টিমিটার এবং ঝিনাই নদীর পানি ১৮ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বিপৎসীমার নিচে রয়েছে এ জেলার পুংলী ও বংশাই নদী।

জেলার বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হলেও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বাসাইল উপজেলা। জেলার ৯টি উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নদীভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে প্রায় ১ হাজার ৩৩০টি পরিবারের মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া ২১ হাজার ৯৭৪টি পরিবারের আংশিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। অপরদিকে ভূঞাপুর উপজেলার ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ২ হাজার ৪০০ মানুষ। বন্যার পানি প্রবেশ করায় স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা মিলিয়ে অন্তত ১৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্যার ফলে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৮ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। ১৪৫ কিলোমিটার কাঁচা ও এক কিলোমিটার পাকা সড়কসহ চারটি ব্রিজ কালভার্টের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী বন্যায় ৬ হাজার ৬৪৯ হেক্টর ফসলি জমি এবং সবজি পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close