প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২১ জুলাই, ২০১৯

বন্যার উন্নতি শুরু কমছে না দুর্ভোগ

* পানিতে ডুবে ১ বৃদ্ধ, ৬ শিশুর মৃত্যু * মধ্যাঞ্চলে অবনতির আশঙ্কা

বন্যা পূর্বাভাষ ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল শনিবার জানিয়েছে, পদ্মা এবং ঢাকার আশপাশের নদ-নদী ব্যতীত দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি কমছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র যমুনা, সুরমা কুশিয়ারা নদ-নদীগুলোর পানি হ্রাস এবং পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে, অপরদিকে মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। বগুড়া জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টায় উন্নতি হতে পারে।

এদিকে, প্রতিনিধিরা জানিয়েছে, যমুনার পানি সিরাজগঞ্জে ও গাইবান্ধায় বাড়লেও কমছে বগুড়া, জামালপুরের ইসলামপুর, বকশীগঞ্জ ও ভূঞাপুরে। বগুড়ায় বাড়তে শুরু করেছে বাঙালির পানি। অপরদিকে, রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার ভাঙনে প্রতিরক্ষা বাঁধের অর্ধেকাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জগন্নাথপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি কমলেও, হাওর অঞ্চলে বন্যার চাপ বাড়ছে। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে, জামালপুরের বকশীগঞ্জে এবং নেত্রকোনার কমলাকান্দায় পানিতে ডুবে এক বৃদ্ধ ও ছয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টÑ

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানায়। সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল, পৌরসভার আংশিক, জেলার বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালি ও কাজিপুর উপজেলার প্রায় ৬৭টি গ্রামের প্রায় ১৩ সহস্রাধিক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চৌহালিতে যমুনার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

গতকাল শনিবার সদর উপজেলার সয়দাবাদ, খোকসাবাড়ী, কালিয়াহরিপুরের বাঁধে আশ্রয় গ্রহণকারী বানভাসীদের মাঝে ১০০ বস্তা গো-খাদ্য বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার মোহাম্মদ রায়হান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন, স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না প্রমুখ।

বগুড়া : বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বাঙালি নদীর পানি। যমুনার পানি বাড়তে বাড়তে ১৮ জুলাই রাত ১২টায় ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইতে থাকে। ১৯ জুলাই সকাল ৯টা থেকে যমুনার পানি কমতে শুরু করে। বগুড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় বাঙালি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১১ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় যমুনার পানি কমে বিপৎসীমার ১১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়ন সংলগ্ন চরবালুয়া নামক স্থানে বাঙালি নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৫৭০ হেক্টর জমির বীজতলা, ৩৬০ হেক্টর জমির রোপা আউশ, ১২০ হেক্টর জমির পাট এবং ৯০ হেক্টর জমির শাকসবজি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

ধুনট (বগুড়া) : বগুড়ার ধুনটে যমুনা পানি বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করলেও, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে কমতে শুরু করেছে। গতকাল শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১২ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপৎসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে পানি কমলেও বন্যাদুর্গত এলাকায় দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

গঙ্গাচড়া (রংপুর) : রংপুরের গঙ্গাচড়ায় গত কয়েক দিনে তিস্তার তীব্র তোড়ে নদীর বাম তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ একটি বাঁধের অর্ধেকাংশ ভেঙে হাজার হাজার একর ফসলী জমি পানির নীচে চলে গেছে। এতে শেখ হাসিনা সেতু সংযোগ সড়কসহ লক্ষ্মীটারী ও কোলকোন্দ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের চার থেকে পাঁচটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিনবিনা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুর রহমান, মনোয়ার হোসেন, গাজিউর রহমান সবুজ জানান, গত সপ্তাহের বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তায় তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। গত পাঁচ দিনের ভাঙনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অর্ধেকাংশসহ চর বিনবিনা, চর ইচলী, চর শংকরদহ গ্রামের হাজার হাজার একর ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়ন বালিকান্দী গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে মো. ফয়জুল হকের পাঁচ বছর বয়সি মেয়ে পিয়া বেগম। পারিবারিক কবরস্থানে পিয়ার লাশ দাফন করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, গতকাল শনিবার পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী প্রায় বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে পানি হাওরের প্রবেশ করায় অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নদীর পানি কমলেও বেড়ে যাচ্ছে হাওরের পানি। উপজেলার প্রায় পাঁচটি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত।

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। এরই সঙ্গে কমছে ভাঙন ঝুঁকি। ফলে বানভাসীদের মনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, ভূঞাপুরে যমুনা নদীর পা?নি দুই সেন্টি?মিটার কমে বিপৎসীমার ৯৭ সে?ন্টি?মিটার ওপর দিয়ে বইছে।

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) : জামালপুরের বকশীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হলেও মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ না পেয়ে দুর্গতদের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়েছে। গত ছয় দিনের বন্যায় বকশীগঞ্জের একটি পৌরসভাসহ সাতটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এদিকে ভয়াবহ বন্যার পানিতে গত তিন দিনে ডুবে ও সাপের দংশনে শিশু বৃদ্ধসহ ছয়জন মারা গেছে এবং একজন নিখোঁজ হয়েছে।

জামালপুর : জামালপুরের ইসলামপুরে বন্যার পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার নাগাদ যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার থেকে ১০ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ১৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে বন্যার পানি কমলেও দুর্গতদের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার কলমাকান্দায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও কমছে না দুর্ভোগ। এরই মধ্যে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে বলে জানিয়েছেন। কলমাকান্দায় গত শুক্রবার পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে এক শিশু।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close