নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ জুলাই, ২০১৯

মৎস্য সপ্তাহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

জলাশয়গুলো আগের অবস্থায় আনা হবে

বাড়ির আশপাশের ডোবা, পুকুর ও জলাশয়কে ফেলে না রেখে সেগুলোতে মাছ চাষ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের যত জলাশয়, পুকুর, খাল, বিল রয়েছে, সেগুলো আমরা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনব। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে (কেআইবি) জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৯-এর উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নদী মাতৃক বাংলাদেশে আমরা নদীগুলো ড্রেজিং করছি যাতে করে এর প্রবাহ এবং নাব্য বৃদ্ধি পায়। আর পানির প্রবাহ বাড়লে মাছের উৎপাদন বাড়বে এবং একইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত যেকোনো দুর্যোগের মোকাবিলা আরো সহজ হবে।’ অনুষ্ঠানে মৎস্য চাষ, রেণু উৎপাদনসহ মৎস্য সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জাতীয় মৎস্য পুরস্কার ২০১৯ দেন প্রধানমন্ত্রী। পুরস্কার হিসেবে ৮ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণপদক ও ৫০ হাজার টাকার করে চেক এবং ৯ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে রৌপ্যপদক ও ৩০ হাজার টাকার করে চেক দেওয়া হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরুর সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রইসুল আলম মন্ডল স্বাগত বক্তব্য দেন। একই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু সাইদ মোহম্মদ রাশিদুল হক উপস্থিত ছিলেন। ‘মাছ চাষে গড়ব দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্লোগান নিয়ে প্রতিবারের মতো এবারেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা গণভবনের লেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পোনা মাছ ছেড়ে মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন অভিযানের সূচনা করেন। তিনি সে সময়ই পাট, চামড়া, চা-এর সঙ্গে মাছকেও বাংলাদেশের রফতানি পণ্য হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, পরিকল্পিতভাবে মাছ উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে তা বিদেশেও রফতানি করা যায়। এ জন্য মাছের উৎপাদন বাড়ানোর এবং কোয়ালিটি সম্পন্ন মৎস্য বিদেশে রফতানি করার জন্য আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি।

তার সরকার জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসৃজন, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘জলমহালে প্রকৃৃত জেলেদের অধিকার নিশ্চিত করতে নতুন জলমহাল নীতিমালা, জেলেদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘হ্যাচারি আইন ও বিধিমালা, মৎস্য খাদ্য ও পশুখাদ্য আইন ও বিধিমালা প্রণয়নসহ অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চিংড়ি প্লান্ট ইজারা নীতিমালা, মৎস্য সঙ্গনিরোধ আইন ও জাতীয় চিংড়ি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, এসব আইন, বিধি ও নীতিমালা প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্যই হলো মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও ভোক্তা সাধারণের জন্য মানসম্পন্ন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, ‘জাল যার জলা তার’ আমরা এর ভিত্তিতে জেলেদের বিভিন্ন জলাশয় বরাদ্দ দিচ্ছি। সেখানে তারা মৎস্য উৎপাদন করে আমাদের চাহিদা মেটাচ্ছে। উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমরা বাগেরহাটে চিংড়ি গবেষণা, চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ ও গোপালগঞ্জে ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি। যেন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, সেজন্য হাওরে পরিকল্পিতভাবে মৎস্য চাষের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১০ বছরে মাছের উৎপাদন ৫৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪২ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। একে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করাই আমাদের লক্ষ্য।’

চিংড়ি, মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানি করে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ’৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় বিদেশে চিংড়ি রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এনে এক পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে তার সরকারের উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন। মৎস্য ও মৎস্য পণ্যের আন্তর্জাতিক মান নিরূপণের লক্ষ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ৩টি মাননিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের কথাও জানান তিনি।

সরকার প্রধান বলেন, দেশের জনসংখ্যার ১১ শতাংশের বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য সম্পদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। প্রাণিজ আমিষের চাহিদার শতকরা ৬০ ভাগ জোগান দেয় মৎস্য খাত। এ সময় প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সমস্যা সমাধানের কারণে বিশাল সমুদ্রসীমায় (১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার) বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করে তার সরকারের ব্লু-ইকোনমি সম্প্রসারণের উদ্যোগও তুলে ধরেন।

মাছে-ভাতে বাঙালির চিরায়ত পরিচয় ধরে রাখতে প্রাকৃতিক উৎসগুলো রক্ষায় তার সরকার সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ও বনাঞ্চল রক্ষা, পানিসম্পদের উন্নয়ন ও নদীতে নাব্য রক্ষার জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে মধুমতি, গড়াই, যমুনা, বুড়িগঙ্গা, কুশিয়ারা প্রভৃতি নদীতে নাব্য পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। মধুমতি ও গড়াই নদী খননের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লবণাক্ততা হ্রাস পেয়ে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সুন্দরবন এবং আশপাশের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close