সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

  ১৮ জুলাই, ২০১৯

৪ কোটি টাকা নিয়ে বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর লাপাত্তা

* সাতক্ষীরায় ১৫০০ এজেন্ট বিপাকে * টাকা উদ্ধারে মামলা, সক্রিয় পুলিশ

চার কোটি টাকা হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার দেড় হাজার বিকাশ এজেন্ট। সাতক্ষীরা শহরের অধিকাংশ বিকাশ লেনদেনের দোকান বন্ধ। একই অবস্থা উপজেলাগুলোতেও। তারা এখন কী করবেন ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না বিকাশের এসব এজেন্টরা। এই টাকা উদ্ধার করতে মামলা হয়েছে। পুলিশ আসামি ধরার চেষ্টা করছে। তবে এই ঘটনায় বিকাশের খুলনার টেরিটরি ম্যানেজারকে (টিএম) বরখাস্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, বিকাশের এজেন্টদের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত বিকাশ এজেন্টদের পক্ষে তাদের সাতক্ষীরা শাখার সভাপতি শহরের আদর মোবাইল সেন্টারের কাজী আক্তার হোসেন মামলাটি করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে বিকাশের সাতক্ষীরা শাখার ম্যানেজার, অফিস সহকারী, ডিস্ট্রিবিউটরসহ সাতজনকে। তবে এসব আসামির কাউকেই এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি সদর থানা পুলিশ। মামলার আসামিরা হলেন বিকাশের সাতক্ষীরা জেলা শাখার ম্যানেজার সজল কুমার, ডিস্ট্রিবিউটর আবদুল্লাহ্ আল মামুন, রানা, ফারুক হোসেন, তার বাবা মতিয়ার রহমান, ভাই ইয়াছিন আরাফাত ও আফিদ্রী। ডিস্ট্রিবিউটর ফারুক হোসেনের বাড়ি শহরের কাটিয়া এলাকায়। এদিকে, বিকাশ এজেন্টদের টাকা লুট করার ঘটনার মূলহোতা বিকাশের সাতক্ষীরা শাখার ডিস্ট্রিবিউটর ফারুক হোসেন তার পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে দুবাইয়ে পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানা গেছে।

শহরের আদর মোবাইল সেন্টারের কাজী আক্তার হোসেন জানান, সাতক্ষীরা জেলার প্রায় দেড় হাজার এজেন্ট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর ফারুক দুবাইয়ে পাড়ি জমিয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে শুনছি। ফারুক তার পরিচিতজনদের ফেসবুক ম্যাসেজের মাধ্যমে দুবাইয়ের ছবি সরবরাহ করছে। এটার মাধ্যমে বোঝা যায় ৪ কোটি টাকা লুটে নিয়ে সে এখন দুবাইতে পালিয়েছে। গত সোমবার থেকে তার কোনো হদিস নেই।

তিনি আরো জানান, ফারুক হোসেনের বাড়িতে গেলে দেখা যায় তালাবদ্ধ। পরিবারের কেউই নেই। পরিবারের সদস্যদের নিয়েই হয়তো বা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে চতুর ফারুক। আমার প্রায় এক লাখ টাকা নিয়ে গেছে। দোকানটিও বন্ধ করে রেখেছি। দোকান খুলে এখন কি করব। থানায় সাতজনকে আসামি করে মামলা করেছি তবে মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। কাউকে এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ।

শহরের টাউন বাজার এলাকার এক বিকাশের এজেন্ট ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সাতক্ষীরায় বিকাশের নতুন করে ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমি আবেদন করেছি। এছাড়া সাতক্ষীরার দেড় হাজার বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে ৪ কোটির বেশি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন ডিস্ট্রিবিউটর ফারুক হোসেন। গত সোমবার বিকাশের হেড অফিস থেকে ৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে ডিস্ট্রিবিউটর ফারুক। এজেন্টদের এই টাকা উত্তোলন করেই সে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে।

তিনি আরো জানান, বিকাশের হেড অফিসের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ জড়িত এই ঘটনায়। হেড অফিসের একাধিক কর্মকর্তা সাতক্ষীরা আসত বিভিন্ন সময়। শহরের মন্টুমিয়ার রিসোর্ট সেন্টারে ফূর্তি করত। বিকাশের হেড অফিসের অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে ছিল ফারুকের দহরম মহরম সম্পর্ক। সেই সুযোগও কাজে লাগিয়েছে ডিস্ট্রিবিউটর ফারুক। এই ফারুক এক সময় ভ্যান চালাতো তারপর মোবাইলের মেমোরি কার্ড, চার্জার বিক্রি করত। এরপর সে বিকাশের সাতক্ষীরার ডিস্ট্রিবিউটর হয়। বিকাশের টাকা লুট ও মামলার ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মামলার পর এজেন্টদের টাকা উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর ফারুক হোসেন টাকা নিয়ে কোথায় আছেন সেটির অবস্থান এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিকাশের কর্তৃপক্ষের কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে টাকা লুটের ঘটনায় বিকাশের খুলনার টেরিটরি ম্যানেজার (টিএম) বরখাস্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close